পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কঠিন ও জটিল পুনর্জন্মের পথ পাড়ি দিচ্ছে এক নতুন সউদী আরব। দুর্নীতি দমন অভিযানে ৪ নভেম্বর ১১ জন সউদী শাহজাদা, ৪ জন বর্তমান মন্ত্রী ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী এবং বেশ কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের দু’ সপ্তাহ আগে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তেলের বাইরে সউদী অর্থনীতির বহুমুখীকরণে তার পরিকল্পনা প্রদর্শনের লক্ষ্যে রিয়াদে এক জমকালো বিশ^ অর্থনৈতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এ সম্মেলনে যুবরাজ সউদী আরবকে মূল মধ্যপন্থী ইসলামে ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এখন পর্যন্ত উদারপন্থী ইসলাম বিষয়ে তার বক্তব্য বিশ^ বিনিয়োগ আকর্ষণের জনসংযোগ প্রচারণা হিসেবেই রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
যুবরাজ এ সম্মেলনে ৫০ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে লোহিত সাগরের তীরে নিওম নামে একটি ভবিষ্যত শহর নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন। তার ভাষ্যমতে, এ শহর সউদী নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য নয়, বরং তা আঞ্চলিক স্বার্থ ও বিশ^ পুঁজিবাদের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে। তিনি সউদী জনগণের উপর মধ্যপন্থী ইসলাম আরোপের সাথে তার এই ভবিষ্যত স্বপ্নপরিকল্পনা যুক্ত করেছেন এবং শাহজাদাগণ ও তাদের মুনাফাকারী মক্কেলগণসহ বিত্তশালী এলিট সদস্যদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করছেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ ১৯৭৯ সালকে সউদী কট্টরপন্থার জন্মলাভের বছর বলে আখ্যায়িত করেন। তার আগে সউদী আরব ছিল সহিষ্ণুতা, সহনশীল ও উদার ইসলামের দেশ। এ বছরটি সর্বদাই ইরানি বিপ্লবের বছর হিসেবে স্মরিত হবে যা সউদী আরবের জন্য এক বেদনাদায়ক মুহূর্ত। ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা একমাত্র প্রকৃত ইসলামী দেশ হিসেবে সউদী আরবের দাবিকে খর্ব করে।
ইরান তার প্রতিষ্ঠানগুলোর ইসলামীকরণ শুরু এবং বিদেশে ইসলামী বিপ্লব বিষয়ে প্রচারণা শুরু করলে সউদীরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এর পরিণতিতে তারা ওয়াহাবিবাদ নামের ইসলামের কট্টরপন্থার পুনরুজ্জীবন ঘটায়। আঠারো শতকের আরবে এ কট্টরপন্থী ওয়াহাবিবাদ আন্দোলন সূচিত হয়।
১৯৭৯ সালে সউদী সরকারের দুর্নীতি, পাশ্চাত্যের সাথে সম্পর্ক, পাশ্চাত্যকরণ ও অন্যান্য সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তথাকথিত একেশ^রবাদীদের একটি গ্রæপ কাবা অবরোধ ও মানুষকে জিম্মি করলে সউদী আরবের নিজস্ব দেশীয় কট্টরপন্থী ইসলাম তার সামগ্রিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
সউদী শাসক গোষ্ঠি রাষ্ট্রধর্মের দুর্বল দিকটি উপলব্ধি করে। কিন্তু সরকার কট্টরপন্থীদের কট্টরপন্থা মুক্ত করার চেষ্টার বদলে তাদের প্রশ্রয় দেয়ার পন্থা গ্রহণ এবং তাদের অনমনীয় কর্মসূচির কাছে নতি স্বীকার করে।
১৯৭৯ সালে ইসরাইল মিসরের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর বহু সউদীকে ক্ষুব্ধ করে। এর ফলে স্থানীয় গ্রুপগুলোর চাপে সউদী আরব ও অন্যান্য আরব দেশ মিসরকে বয়কট করে।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ইরানের ইসলামী ভাবমর্যাদা অর্জনের বিষয়টি খর্ব করার এক সুযোগ এনে দেয়। সউদী আরব শাহাদত লাভে ইচ্ছুক তার জিহাদিদের আফগানিস্তানে যেতে দিয়ে তার ঘরের ধর্মীয় উগ্রবাদকে প্রশমিত করতে চেয়েছিল। এটা শেষ পর্যন্ত ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে বিশ^ব্যাপী জিহাদ সূচনার পথ রচনা করে।
১৯৭৯ সালের আগে সউদী ধর্মীয় নমনীয়তা নিয়ে যুবরাজ সালমান একতরফা ও অযথার্থ মন্তব্য করলেও এটা স্পষ্ট নয় যে মধ্যপন্থা ইসলাম কীভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। যদি তিনি সউদী আরবের মধ্যপন্থা ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন তাহলে তাকে অবশ্যই খোলাখুলিভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয় ও রীতিনীতি নিয়ে বিভিন্ন তরিকার সউদী আলেম ও চিন্তকদের বিতর্ক করার অনুমতি দিতে হবে। কিন্তু তা না করে যুবরাজ মোহাম্মদ সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের অজুহাতে সেপ্টেম্বর থেকে শত শত আলেম, বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী চিন্তাবিদকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। যারা আটক রয়েছেন তাদের অনেকেই উগ্রপন্থী নন।
সউদী ধর্মীয় শিক্ষা এখনো ওয়াহহাবি ঐতিহ্যভিত্তিক এবং সউদী বিচারকরা হানবালি আইনবিধি অনুসরণ করেন যা ওয়াহাবিদের ইসলামের আক্ষরিক ব্যাখ্যার ভিত্তি। ওয়াহাবিবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব এক অল্ঘংনীয় র্মাদার অধিকারী। হিজাজি হাসান ফারহান আল মালিকি একটি বইতে পাঠকদের ওয়াহাবের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করা উচিত বলে লেখার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এখন পর্যন্ত সউদী আরব হচ্ছে মুসলিম বিশে^র একমাত্র দেশ যেখানে অমুসলিমদের কোনো উপাসনাস্থল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয় না। অথচ সউদী আরবের প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোতে হিন্দু মন্দির ও খ্রিস্টান গির্জা পাশাপাশি অবস্থিত। নতুন মধ্যপন্থী ইসলাম চালু হলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে কিনা সে ব্যাপারে যুবরাজ কোনো আভাস দেননি। তবে খোলা হাওয়ার একটি জায়গা আছে। সউদী আরামকো তেল কোম্পানি কর্তৃক দাহরানে নির্মিত দেয়াল ঘেরা কম্পাউন্ডের মধ্যে গির্জা আছে, সেখানে নারীরা গাড়ি চালায়, সাঁতার কাটে, পার্টি হয়। সারা দেশের কম্পাউন্ডগুলোতে ধনী প্রবাসীরা একই ব্যবস্থা চালু করেছে। সরকার কখনো এ সব দেয়ালের বাইরে তাদের জীবন যাত্রার প্রভাব বিস্তার করতে দেয় না।
সউদী আরবে কোনো নিপীড়নমূলক সরকারের অধীনে উদারপন্থী ইসলামের উদ্ভব ঘটবে না। ওয়াহহাবিবাদ যেখানে বিদেশে অধিকাংশ মুসলিম নেতাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব সমর্থন করে সেখানে সউদী আরবে নিজ শাসকদের বিরুদ্ধে দন্ডায়মান হতে তা সউদীদের নিষেধ করে। ধর্মে সরকারের প্রধান স্বার্থ হল বৈধতা লাভ ও সউদী জনগণকে শান্ত করে রাখা। সউদী আলেমদের অধিকাংশই গোঁড়া ওয়াহাবি। তবে সাম্প্রতিক কালে কিছু আলেম মধ্যপন্থী ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন। সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হওয়ার আগে সামাজিক মাধ্যমে লাখ লাখ অনুসারী থাকা সালমান আল-আওয়া নামে এক বিশিষ্ট আলেম সমকামীদের বিচার করা উচিত নয় বলে ঘোষণা করেন। মক্কায় ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রত্মতাত্তি¡ক ও ধর্মীয় স্থানগুলোর দলিলায়নকারী স্থপতি সামি আংগাউই-এর মত হিজাযের সূফি পন্ডিত ও বুদ্ধিজীবীগণকে অনীহার সাথে সহ্য করা হয়। তবে সূফি আচার-অনুষ্ঠানের প্রকাশ্য প্রদর্শন এখনো বন্ধ। তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বসবাসকারী শিয়ারা প্রান্তিকীকৃত সংখ্যালঘু হিসেবে রয়ে গেছে, তদেরকে ইরানের অনুগত পঞ্চম কলাম বলে অভিযুক্ত করা হয়। বাদশাহকে ধর্মীয় বিষয়ে উপদেশ প্রদানকারী উচ্চতর উলামা পরিষদে তাদের আইনবিধির প্রতিনিধিত্ব নেই। একমাত্র উন্মুক্ত বিতর্কই সউদী আরবকে এক ধরনের ইসলামী মধ্যপন্থার দিকে নিতে এবং মৌলবাদের উৎসক্ষেত্রকে সংকুচিত করতে পারে। কিন্ত তখন সউদী সরকারকে ধর্মের রক্ষক, মুসলিমদের রক্ষাকারী এবং একমাত্র প্রকৃত ইসলাম রাষ্ট্রের তকমাছাড়া হতে হবে।
যুবরাজ মোহাম্মদের জনগণের কাছে তার শাসনের সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা পেতে নয়া বৈধতা প্রয়োজন হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এ ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হতে পারে, কিন্তু তিনি যে নতুন শহর নির্মাণ করতে চাইছেন তা মানুষের চেয়ে রোবটের উপর বেশি নির্ভরশীল হবে। ফলে সেখানে তরুণ সউদীদের কর্মসংস্থানের আশা সামান্যই।
উদরপন্থী ইসলাম বিষয়ে সাম্প্রতিক ঘোষণা, ব্যাপক গ্রেফতার এবং স্বাপ্নিক অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক প্রকল্প নিষ্ঠুর আধুনিকায়নকারী হিসেবে তাকে রূপায়িত করছে যিনি অতি অল্প সময়ে অনেক বেশি কিছু অর্জনের লড়াই করছেন। কিন্তু দুর্নীতি দমনের চেয়ে ক্ষমতা সংহত করাই হচ্ছে তার অসল লক্ষ্য।
*নিবন্ধকার মাদাবি আল-রশিদ লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স-এর ভিজিটিং প্রফেসর, অতি সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মিউটেড মডার্নিস্টস: দি স্ট্রাগল ওভার ডিভাইন পলিটিক্স ইন সউদী আরাবিয়া’ গ্রন্থের লেখক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।