বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গ্রেফতার আতঙ্ক কাটেনি মুসলিম পরিবারগুলোতে
হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পবিত্র কাবা ঘরকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্টদাতা টিটু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই বাবুল ইসলাম গতকাল বুধবার দুপুরে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ টিটুকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক দিবাংশু সরকার তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পুলিশ টিটু রায়কে মাথায় হেলমেট পরিয়ে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে আদালতে হাজির করেন। এসময় টিটু রায়ের পরনে ছিল পুলহাতা লাল শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট।
রংপুর ডিবি উত্তর ওসি ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলাম। আদালত ৪ দিরে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা আইন মেনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। গত মঙ্গলবার নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিরাভাজি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে টিটু রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গঙ্গাচড়া থানায় গত ৬ নভেম্বর আইসিটি আইনে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। মামলারবাদি লাল চাঁদপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের পুত্র রাজু আহম্মেদ। গত মঙ্গলবার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের আদেশ দেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
ওদিকে, ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবারের সংঘর্ষ এবং হিন্দুদের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটনাস্থল পাগলাপীর সলেয়াশা ঠাকুরপাড়ার পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুর্ণবাসনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। তবে নিরাপত্তার কারনে এখনও সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গতকাল বুধবার ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানকার পরিবেশ এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ছাড়াও হিন্দু পরিবারগুলো স্বাভাবিক কাযকর্ম করছে। তাদের মধ্যে এখন আর কোন আতঙ্কও নেই। এ সময় তাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা এখন বেশ ভালো আছি। আমাদের আর কোন ভয় নেই, প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করেছে, বাড়ি-ঘর তৈরী করে দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমরা এখন নতুন ঘর পেয়েছি। আমরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করছি। তবে এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিচার দাবী করছি।
পক্ষান্তরে শলেয়াশা ঠাকুরপাড়ার পাশ্ববর্তী আতঙ্কগ্রস্ত ৪/৫টি গ্রামের মুসলিম পরিবারগুলোতে এখনও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসেনি। গ্রেফতার আতঙ্কে এসব গ্রামের পুুরুষ লোকগুলো এখনও পলাতক রয়েছে। চরম আতঙ্কে রয়েছে পরিবারের নারী সদস্যরাও। তাদের সবার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠেছে। মা রয়েছে সন্তানের গ্রেফতারের ভয়ে, স্ত্রী রয়েছে স্বামীর গ্রেফতারের ভয়ে। ছোট ছোট ছেলে- মেয়েদের মুখেও আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছে। সাংবাদিকদের দেখেও ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তারা। জমিলা বেওয়া নামের এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে কথা বলতে গিয়ে তারা কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন ‘হামার খবর কাঁয় নেয়? হামরা তো মানুষ নোয়াই যে হামার খবর কাঁয়ো নেবে? আল্লাহ ছাড়া হামার খবর নেওয়ার কাঁয়ো নাই। ছইলটা পালে বেড়াওছে কয়দিন থাকি, কাঁয় কামাই করে আর কাঁয় খাওয়ায়? খায়া-না খায়া কোন মতে বাঁচি আছি’। এছাড়া আর বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের প্রতিটি বাড়ির পুরুষ লোক পালিয়ে গেছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারে খাদ্য সংকট ছাড়াও নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও রংপুরের ডিআইজি গত সোমবার নির্দোষ ব্যক্তিদের বাড়ি ফেরার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু তার এই আহবানে ভয় কাটছে না তাদের। তাদের ধারনা, পুলিশ পেলেই তাদের ধরে নিয়ে যাবে। দোষী-নির্দোষী নেটা পরের কথা।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পবিত্র মক্কা শরীফকে অবমাননা করে ফেসবুকে ছবি আপলোড ও স্ট্যাটস দেয়। এ অভিযোগে রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরটারী গ্রামের খগেন্দ্র নাথের পুত্র টিটোর বিরুদ্ধে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দায়ের করেন শলেয়াশাহ লালচাঁদপুর এলাকার আব্দুস ছাত্তারের পুত্র রাজু আহম্মেদ। স্থানাীয় লোকজন টিটোর গ্রেফতারের দাবিতে পাগলাপীরে বিক্ষোভ করে। একই দিনে তাকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া এলাকাবাসী। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না হওয়ায় শুক্রবার আবারও টিটুকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দেয় এলাকাবাসী। তারা এ নিয়ে মাইকিং ও প্রচারণা চালায়। এরপর সেখানে আরও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুক্রবার জুমআর নামাজের পর শলেয়াশাহ বাজারে কয়েক হাজার মুসল্লী মানববন্ধন করতে থাকে। এতে পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে এবং কতিপয় দু®কৃতিকারী হিন্দুদের কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। এসময় ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে ২ হাজারেরও অধিক ব্যাক্তিকে আসামী করে সদর ও কোতয়ালী থানায় দুটি মামলা করে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই দুই মামলায় প্রধান আসামি স্থানীয় জামায়াত নেতা মাওলানা সিরাজুল হক, তার দুই ছেলে আব্দুল্লাহ ও তারেকসহ দেড় শতাধিকেরও বেশি গ্রেফতার হয়। ফেসবুকে পোষ্টদাতা টিটু রায়কে গত মঙ্গলবার পুলিশ নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলনা চিড়াভিজা এলাকার তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।