Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইরাকে দুই বাংলাদেশী অপহৃত : নিহত ১ : আটক ১

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা পরিবারের

ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইরাকে অপহৃরণ করে দেড় সপ্তাহ বর্বর নির্যাতনের পর স্বদেশীয় অপহরণকারী চক্রের বিরুদ্ধে আবদুল হালিম (৩৩) নামের এক যুবককে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত হালিমের গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পুলিশ মু্িক্তপণ আদায়ের সময় অপহরণকারী চক্রের সদস্য সুমন আহমেদ ওরফে টাইগার সুমনকে (৩৫) আটক করে। এঘটনায় গতকাল বুধবার অপহরণ ও চাঁদাবাজীর অভিযোগে টাইগার সুমন ও তার শ্যালক বিজয় নগর উপজেলার নর্দখলা গ্রামের গোলাম নবীর পুত্র মোঃ হাবিলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্রাক্ষনবাড়ীয়া সদর থানায় হালিমের মামাতো ভাই ওবায়দুন নুর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ব্রাক্ষনবাড়ীয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নবীর হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, মামলার অগ্রগতি ও তদন্তের স্বার্থে আদালতে আটককৃত টাইগার সুমনকে রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করা হবে। তবে হালিম জীবিত নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এব্যাাপারে ওসি নবী হোসেন নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
মামলার বিবরণ ও অপহৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর বিকেলে ইরাক প্রবাসী ছাগলনাইয়ার আবদুল হালিম ও টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার গুনিপাড়া গ্রামের তোহিদুল ইসলামের পুত্র মমিনুলকে (২২) ৫শ’ ডলার বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাগদাদ শহর থেকে বাংলাদেশী কয়েকজন সন্ত্রাসী অপহরণ করে নিয়ে যায়। একইদিন বিকাল ৪টায় একটি ইন্টারনেট নম্বর থেকে হালিমের বৃদ্ধ মা হোসনে আরা বেগমের (৬৫) নম্বরে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রবাসী আবদুল হালিম আহাজারি করে বলেন, মা এখানের লোকগুলো আমাকে ধরে এনে মারধর করে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাদের ৬ লাখ টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে। ওইসময় তার ভাইসহ অন্য স্বজনরাও অপহৃত হালিম ও অপহরণকারী দলের সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে হালিমকে মারধর শুরু করে তা তার স্বজনদের ফোনে শুনায়। এরই মধ্যে মো: সাগর আহমেদ (০০৯৬৪৭৫০০৮৯৭১৬৪) হালিমের চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় শরীরে নির্যাতনের আঘাতের বেশ কিছু ছবি পাঠানো হয় তার স্বজনদের কাছে। হালিমের নির্যাতনের ছবি দেখে দিশেহারা মা-বাবা ও ভাই বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা যোগাড় করে। গত শুক্রবার হালিম ও মোমিনুলের স্বজনেরা মুক্তিপণের টাকা দিতে অপহরনকারীদের সহযোগী মোঃ হাবিলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যায়। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশকে জানানো হয়। খবর পেয়ে ওই থানার এএসআই মো: আবু আহম্মদ সুজন চক্রটিকে ধরতে তৎপর হন। অপহরণকারীদের নির্দেশনা মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর নামার পর নদী পার হয়ে ওপারে যেতে বলে চক্রটি। তাদের গতিবিধি পুলিশ নজরে রাখেন। এসময় মুক্তিপণের টাকা নিতে ওই জেলার বিজয়নগর থানার নন্দকোলা গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে এক সময়ের ইরাক প্রবাসী হাবিল (৩৭) ও তার ভগ্নিপতি সদর থানার শিমরাইকান্দি গ্রামের হাফিজ আহম্মদের ছেলে টাইগার সুমন (৩১) আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হাবিল পালিয়ে গেলেও পুলিশের জালে ধরা পড়ে টাইগার সুমন। পুলিশের তৎপরতায় মোমিনুল গত সোমবার ভোরে অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে ইরাকে মুক্তি পায়। হালিমকে তিন দিন আগে অপহরণকারীরা মেরে ফেলেছে বলে হালিমের স্বজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশকে জানিয়েছেন মুক্তি পাওয়া মোমিনুল। এদিকে ঘটনার খবর শোনার পর থেকে অপহৃত হালিমের বৃদ্ধ বাবা- মা নির্বাক, স্ত্রী ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। হালিমের ৪ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সন্তান স্বজনদের সঙ্গে ফ্যাল ফ্যাল করে কাঁদছে। ইরাক প্রবাসী আবদুল হালিমের বাবা নুর আহম্মদ কান্না জড়িত কন্ঠে তার ছেলেকে জীবিত কিংবা মৃত লাশ ফেরত আনতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ