গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
থানায় জিডি করেও শেষ রক্ষা হলো না ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সীর। চাঁদা না দেয়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন করেছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ার কারণে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গতকাল বুধবার নিহত ব্যবসায়ীর জামাতা আবু হানিফ গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানীর বনানীতে মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক মুন্সী দুই মাস আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন। এ হুমকির প্রেক্ষিতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
আবু হানিফ বলেন, দুই মাস আগে আবদুস সালাম নামে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজে জড়িত এক প্রতিনিধি আমার শ্বশুরের কাছে ২০ লাখ দাবি করে হুমকি দিয়েছিলেন। এ হুমকি পাওয়ার পর উত্তরা পূর্ব থানায় সিদ্দিক মুন্সী জিডি করেন বলে জানান আবু হানিফ।
পুলিশ বলছে, এটি ‘টার্গেট কিলিং’ (পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড) । কারণ, সিদ্দিক মুন্সি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। আর ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে না কয়জন এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে।
স্বজনদের দাবি, চাঁদা না দেওয়ায় সিদ্দিক মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ভেতরে থাকা কর্মচারীদের একজন গণমাধ্যমকে জানান, রাত পৌনে আটটার দিকে চার দুর্বৃত্ত অফিসে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তদের দুজন পিস্তলের মুখে আট কর্মচারীকে জিম্মি করে। অপর দুই দুর্বৃত্ত সিদ্দিক মুন্সির কক্ষে ঢুকে কয়েকটি গুলি চালায়। এতে বুকসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুর্বৃত্তরা অফিস কক্ষে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে তিন কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার সময় বলে, ‘আমরা ডনের লোক। ২০ লাখ টাকা নিয়া যোগাযোগ করিস।’ দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে প্রধান ফটকের ছিটকিনি লাগিয়ে চলে যায়। ভেতর থেকে কর্মচারীদের চিৎকারে নিরাপত্তাকর্মী প্রধান ফটক খুলে দেন। এরপর গুলিবিদ্ধ সবাইকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। আরেক কর্মচারী বলেন, দুর্বৃত্তদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। তাদের প্রত্যেকের মুখোশ পরা ছিল। পরনে ছিল প্যান্ট, শার্ট। গুলিবিদ্ধ হয়ে মালিক লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ড্রয়ার থেকে টাকা লুট করে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সিদ্দিক মুন্সীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায়। তিনি রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করতেন। বনানীর চার নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএস মুন্সী ওভারসিজের মালিক ছিলেন সিদ্দিক মুন্সী। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ঢুকে সিদ্দিককে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ৩-৪ জন মুখোশধারী। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন এমএস মুন্সী ওভারসিজের তিন কর্মী- মির্জা পারভেজ, মোস্তাক ও মোকলেস। ঘটনার সময় প্রায় ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণের পর পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ জানিয়েছে, মুখোশধারী এসব দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল। এরই মধ্যে তদন্তকারী পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের বাড়ি এবং সড়কের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে- পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সিদ্দিক মুন্সীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে বলে জানান ডিসি। তিনি জানান, এরই মধ্যে বনানীর চার নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়িতে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া আশপাশের বাড়ি ও সড়কে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনানী বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর ৪র্থ চলা বাড়ির নিচ তলায়ই রয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারক অফিসটি। এছাড়াও বাড়িটিতে বেশ কয়েকটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উক্ত বাড়ির মালিক মালিক মূসা এন্টারপ্রাইজ।
এছাড়াও বাড়িরটির প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি গেট। একটি দিয়ে বাড়ির ভেতরে গাড়ী প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ও অপরটি অফিসের লোকজনসহ জনসাধারণের জন্য। দুটি গেটের ভেতরে রয়েছে পার্টিশন। প্রবেশ পথেই রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।
ঘটনাস্থলের ওই বাড়ীর বাবুর্চি আনোয়ার হোসেন জানান, রাত ৮টার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী বাড়ীর প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে ওই অফিসের মালিক নিহত ও অফিসের আরো তিনজন আহত হয়েছেন।
ঘটিনাস্থলে কর্তব্যরত বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক জানান, ঘটনার সময় ওই প্রতিষ্ঠানে ৭/৮ জন লোক ছিল। হটাৎ করেই কতিপয় সন্ত্রাসীরা ভেতরে প্রবেশ করে গুলি চালায়। এতে প্রতিষ্ঠানের মালিক নিহত ও তিনজন আহত হয়।
তিনি আরো জানান, ওই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারগুলোর মধ্যে চারটি চেয়ার রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। সন্ত্রাসীরা হামলার পর দ্রুত চলে গেলে অফিসে থাকা বাকিরা তাদের ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বনানী থানা পুলিশ সূত্রে জানা, যায়, হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল ওই বাড়ীর সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় তিন জন হামলাকারী মুখোধারী ঢুকে এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় নিহতের ড্রাইভার ও বাড়ির এক সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে বনানী থানা পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পরিদর্শনে আসেন ঘটনাস্থলে। অপরদিকে সিআইডি ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, বনানীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত মঙ্গলবার রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে হামলা চালিয়ে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।