নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
পাকিস্তান : ১১৮/৫ (১৮ ওভার)
ভারত : ১১৯/৪ (১৫.৫ ওভার)
ফল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
ইমরান মাহমুদ
ক্রিকেট মানেই যেন উপ-মহাদেশের রাজত্ব। এখন যদিও সার্বজনীন একটা ব্যাপার এসেছে, তবে সবকিছুতেই যেন এশিয়া একটা গন্ধ না পেলে তাতে ঠিক উত্তেজনা আসে না। আর সেই উত্তেজনার পারদ সবচেয়ে বেশি হয় বুঝি পাকিস্তান আর ভারতের লড়াইয়ে। ম্যাচটির ভেন্যু যদি হয় ‘ভাগ্য দোষে’ ইডেন হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! আবার, ম্যাচটির সমীকরণও সেখানে বলছিল-যে দলই জিতুক, সেই দলই করবে ইতিহাস। বিশ্বকাপে ভারত এ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে হারেনি। অন্যদিকে ইডেনে পাকিস্তান কখনো ভারতের কাছে হারেনি। কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের সেই আবহের রেশ কিছুটা যেন উস্কে দিল এক পলশা বৃষ্টি। যে কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে করা হয় ১৮ ওভারের। এমন একটি ম্যাচে জিতে ইতিহাস গড়লো ভারত। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে তা থেকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারেনি পাকিস্তান। ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করে ১১৮ রান। সেই লক্ষ্য ৬ উইকেট আর ১৩ বল হাতে রেখেই টপকে যায় ভারত (১১৯)। ফলে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে হারানোর অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ হলো পাকিস্তানের সমর্থকদের। বিশ্বকাপের এই আসরে প্রথম জয় পেল ভারত। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৭ রানে হেরেছিল স্বাগতিকরা। আর পাকিস্তানের এটি প্রথম হার। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫৫ রানে জিতেছিল আফ্রিদির দল।
দিনভর তুমুল বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় এক ঘণ্টা দেরিতে। দীর্ঘ সময় ঢেকে রাখা উইকেটে আদ্রতার কথা ভেবে টস জিতে বোলিং নেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কন্ডিশন দেখে স্পিনিং অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান আক্রমণ সাজায় চার পেসার দিয়ে। কিন্তু খেলা শুরুর পর উইকেটের আচরণ দেখা গেল ভিন্ন! দ্বিতীয় ওভারেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আক্রমণে এনেছিলেন ধোনি। শুরু থেকেই টার্ন পেলেন এই অফ স্পিনার। পরে টার্ন পেলেন রবিন্দ্র জাদেজা, সুরেশ রায়নারাও। টার্ন করার পাশাপাশি বল আসছিল থেমে। যার ফলে লড়াই করতে হলো পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। যদিও উইকেট বুঝে পাকিস্তানের শুরুটাও ছিল সাবধানী। শারজিল খান ও আহমেদ শেহজাদ ৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন ৪৬ বলে। রানের গতি বাড়াতে তিন নম্বরে উঠে এসেছিলেন শহিদ আফ্রিদি। কিন্তু বাংলাদেশ ম্যাচের মতো এবার আর ঝড় তুলতে পারেননি বুমবুম তারকা। বরং ধুঁকে ধুঁকে ফিরে গেছেন মাত্র ১৪ বলে ৮ রান করে। পাকিস্তানের রান রেট তখন ওভার প্রতি মাত্র ৫ রানের একটু বেশি। সেখান থেকে দলকে লড়ার মতো সংগ্রহ এনে দেন শোয়েব মালিক ও উমর আকমল। ১৬ বলে ২২ রানের ঝড়ো ইনিংসটিন আকমলের, সমান বল খেলা মালিক ছিলেন আরো আগ্রাসী, করেন ২৬ রান। এই দুজন আউট হওয়ার পর বাকি সময়টায় আর ঝড় তুলতে পারেনি কেউ।
ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি ভারতেরও। মাত্র ১৪ রানে রোহত শর্মাকে (১০) ফিরিয়ে রোমাঞ্চ উস্কে দেন নিষেধাঙ্ঘা কাটিয়ে ফেরা পেসার আমির। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও জোড়া আঘাত ভারত ব্যাটিং লাইন আপে। এবার হন্তারক দলে ‘সুযোগ’ পাওয়া মোহাম্মদ সামি। পর পর দুই বলে ধাওয়ান (৬) ও রায়নাকে (০) ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান এই পেসার। তবে ক্রিকেজ এসে দেখে শুনে সামাল দেন যুবরাজ। ক্রিজে থাকা কোহলি যেন বিপদের আঁচ করতে পেরে শুরু করেন নিজের স্বভাবসূলভ মারমুখি ব্যাটিং। সাথে যুবিতো ছিলেনই। দুই পাশ থেকে উপুর্যপরি আঘাতে জর্জরিত পাক বোলাররা যখন দিশেহারা তখন আবারও রোমাঞ্চের ধোঁয়া ছোটান ওয়াহাব রিয়াজ। যুবরাজকে (২৪) ফিরিয়ে ইতিহাসের আশা মনে জাগান পাকিস্তান শিবিরে। তবে তখনো চলছে কোহলির ‘বিরাট’ ব্যাট। সাখে অধিনায়ক ধোনিকে পেয়ে যেন আর তর সইছিল না ইতিহাস গড়ার। ইরফানের ১৫তম ওভারে একটি চার আর একটি ছক্কা মেরে জয়ের দায়িত্বটি কাঁধে তুলে দেন ক্যাপ্টেন কুলের। পরের বলেই স্কোয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই ইতিহাসময় রানটি তুলে নেন ধোনি। ইতিহাস গড়ে ভারত। আরেকবার বিশ্বকাপে ভারত জুজু নিয়েই কাটাতে হলো পাকিস্তানকে।
এদিন ইডেনে আলো ছড়ানোর অন্য কারণও আছে। বৃষ্টির পর ম্যাচপূর্ব কিছু সময় ইডেনের সবুজ মাঠ যেন হয়ে ওঠে আরো সবুজ। বিশেষ এক অনুষ্ঠানে সম্মননা দেওয়া হয় দু’দলের সাবেক তারকাদের। সম্মাননা পাওয়া এই কিংবদন্তিদের তালিকায় অমিতাভ বচ্চন ও ইমরান খান ছাড়াও ছিলেন ভারতের ব্যাটিং গ্রেট সুনীল গাভাস্কার, পাকিস্তানে দুই পেস কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস এবং ভারতের দুই ব্যাটিং কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দ্র শেবাগ। সম্মাননা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কোলকাতার কিং সৌরভ গাঙ্গুলির ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)। ভারতের জাতীয় সঙ্গীতটি দরদভরা কণ্ঠে গাইলেন বলিউড শাহেনশাহ বিগ বি। হার জিত ছাপিয়ে যেন কোলকাতার ২৫ হাজার দর্শক তার সাথে গলা মিলিয়ে গাইলো পাক-ভারত সম্প্রীতিরই গান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।