হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
৭ দিন দেশের বাইরে ছিলাম। কিন্তু এই ৭ দিনেই যে দেশে এতগুলো ঘটনা ঘটে যাবে সেটা আমার ভাবনারও বাইরে ছিল। ১০ নভেম্বর দিল্লির রেল স্টেশনের পাশে অবস্থিত ময়ূর হোটেলে অবস্থান করছিলাম। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ থেকে একটি টেলিফোন পেলাম যে, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২ নভেম্বর রবিবার জনসভা করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১০ নভেম্বরই আরেকটি খবর পেলাম যে, রংপুরের একটি অঞ্চলে মহানবী (স.) সম্পর্কে ফেসবুকে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ করে। কে দায়ী বা কারা দায়ী, অত দূর থেকে সেটা বোঝা যাচ্ছিল না। ফোনে বলা হলো যে, পুলিশ জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করেছে এবং ৬ ব্যক্তি নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। হোটেলে সেই সময় অবস্থানকারী এক বাংলাদেশী আমাকে খাবার টেবিলে জানালেন যে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সেই মূহুর্তে সিঙ্গাপুর আছেন। তার ইনফরমেশন মোতাবেক, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করবেন এবং তার পরই তার ছোট মেয়ের বাসা কানাডায় চলে যাবেন। আমার ছোট ভাই মান্নার ভায়রা কানাডা থেকে জানালো যে, ঐ দিন স্থানীয় সময় সকাল ১০ টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ছাত্র লীগের এক সময়কার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারী আ ফ ম মাহবুবুল হক ইন্তেকাল করেছেন। আমার ছোট ভাইয়ের সেই ভায়রা বলল যে, কানাডায় এখন খুব শীত। এই প্রচন্ড শীতের মধ্যেই সে মাহবুবুল হককে দাফন করতে যাচ্ছে।
এই চারটি খবর আমার মনকে অস্থির করে তোলে। আমরা সিদ্ধান্ত নেই, এই মূহুর্তেই দেশে চলে যাবো। সেই মোতাবেক কলকাতা হয়ে ঢাকায় এসেছি। মাহবুবুল হককে তার পরিবার কানাডায় দাফন করেছে। এ ব্যাপারে নতুন করে আলোচনার আর কিছু নাই।
\ দুই \
ভারতের মাটিতে বসেই আমার মনে হয়েছিল যে, প্রধান বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র একটি স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কারণ পদত্যাগ যদি করতেই হয় তাহলে তিনি বাংলাদেশে গিয়ে পদত্যাগ করবেন। কারণ যেদিন তিনি পদত্যাগ করেছেন সেদিন থেকে তার চাকরির মেয়াদ খুব বেশিদিন বাকী ছিল না। তার পরেও তিনি মেয়াদ পূর্ণ করার আগে কেন পদত্যাগ করলেন? আর করলেন তো করলেন, তাও সিঙ্গাপুরে বসে সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের হাতে পদত্যাগপত্র দিলেন। রাষ্ট্রদূত সেই পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়ে দেন। এ ব্যাপারে গত রবিবার ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিশাল জনসমুদ্রে বেগম খালেদা জিয়া স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন যে, প্রধান বিচারপতি সিনহাকে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং পদত্যাগেও বাধ্য করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ‘দৈনিক মানবজমিনের’ রবিবার অনলাইনে যা ছাপা হয়েছে তার শিরোনাম হলো, ‘এজেন্সির লোক পাঠিয়ে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।’ খবরটি আমরা হুবহু তুলে দিলাম: ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলেছেন, বিদেশে সরকারের এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এ কারণে তিনি দেশে আসতে পারেননি। এর আগে তাকে অসুস্থ বানিয়ে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বক্তব্যে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানান খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।’
ইংরেজী দৈনিক ‘নিউএজ’ এবং বাংলা দৈনিক ‘যুগান্তর’ গত ১২ নভেম্বর রবিবার তাদের পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় অত্যন্ত ফলাও করে যে সংবাদ ছাপিয়েছে সেখানে এই চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নিউএজে প্রকাশিত খবর মোতাবেক কানাডায় অবস্থানরত তার কন্যা আশা সিনহাকে প্রশ্ন করা হয় যে তার পিতা এস কে সিনহা তার পদত্যাগ সম্পর্কে কিছু বলবেন কিনা? উত্তরে আশা সিনহা বলেন, ‘নো কমেন্ট’। অর্থাৎ কোনো মন্তব্য করবো না। নিউএজের ঐ রিপোর্টে বলা হয় যে, সিঙ্গাপুরের যে, হোটেলে প্রধান বিচারপতি অবস্থান করছিলেন সেই হোটেল কক্ষে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান স্বয়ং আগমন করেন এবং তার হাতেই প্রধান বিচারপতি পদত্যাগপত্র দেন। সেই সময় প্রধান বিচারপতির পাশে ছিলেন তার এক বন্ধু যিনি বিগত ১৯ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। সেই বন্ধুটি তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন যে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত বিব্রত এবং বিপর্যস্ত। কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা যেভাবে তার সমালোচনা করেছেন তার ফলে তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত আঘাত পেয়েছেন। ঐ বন্ধুটি বলেন যে, যখন প্রধান বিচারপতি তার পদত্যাগ পত্রটি বাংলাদেশের হাই কমিশনারের হাতে দিচ্ছিলেন তখন তাকে অত্যন্ত বিষন্ন দেখা যাচ্ছিল। প্রধান বিচারপতি নাকি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। আমি ত্যাক্ত বিরক্ত। একটি রায় নিয়ে আর কোন তিক্ততায় আমি জড়াতে চাই না। এখন আমার বিরুদ্ধে তারা যা ইচ্ছে তাই করুক।’ (দৈনিক নিউএজ, ১ম ও ২য় পৃষ্ঠা, ১২ নভেম্বর ২০১৭)।
\ তিন \
একই দিন অর্থাৎ ১২ নভেম্বর রবিবার দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তার শিরোনাম, ‘যুগান্তরকে এস কে সিনহা’। খবরে বলা হয়, পদত্যাগপত্র সঙ্গে নিয়ে ১০ নভেম্বর সকালে এস কে সিনহা সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে যান। পদত্যাগপত্রটি দেশে যথাযথ স্থানে পাঠনোর জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতির সাথে তার ঘনিষ্ঠজনও ছিলেন। ঐ দিনই প্রধান বিচারপতি কানাডার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন। এস কে সিনহা ৫ নভেম্বর কানাডা থেকে সিঙ্গাপুর আসেন। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি নিজেই টেলিফোনে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যুগান্তরের রিপোর্ট মোতাবেক, ৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে আসার পর প্রধান বিচারপতি ওঠেন পার্ক রয়্যাল নামক হোটেলে। হোটেলের ১৫০৭ নং কক্ষটি তার নামে বুক করা ছিল। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। পদত্যাগের আগে তার ঘনিষ্ঠজনের সাথে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলাপও করেন এস কে সিনহা। আলোচনাকালে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে নানা ঘটনা ঘটে গেছে এবং সরকারও তাকে স্বপদে ফেরাতে চায় না। এ অবস্থায় দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার প্রবল চাপের কারণে তিনি নিজেও এখন মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই এ মুহূর্তে পদত্যাগের সিদ্ধান্তটাই সঠিক বলে তার কাছে মনে হচ্ছে।
\ চার \
এখানে একটি কথা বলা দরকার। সরকারের তরফ থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন যে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ। তিনি দূরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছেন। কিন্তু দৈনিক যুগান্তরের আলোচ্য খবরে বলা হয়েছে যে, বাবু এস কে সিনহা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেটি ১০ বছর আগের ঘটনা। তখন থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে নিয়মিতভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি শতকরা ১০০ ভাগ ক্যানসার মুক্ত। এখন যে তিনি মাঝে মাঝে সিঙ্গাপুর আসেন সেটি ফলোআপের জন্য। যারা ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং রোগমুক্ত হন তাদেরকে রোগমুক্তির পরেও ফলোআপের জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে আসা-যাওয়া করতে হয়। নিউএজের রিপোর্টে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত এস কে সিনহার ঘনিষ্ঠ জনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু যুগান্তরের রিপোর্টে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই তিনি যখন সিঙ্গাপুরে আসতেন তখন তিনি তার এই ঘনিষ্ঠ জনের কাছে থাকতেন। তার এই ঘনিষ্ট জনের নাম রঞ্জিত সাহা। ১৯ বছর ধরে এই রঞ্জিত সাহা সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন।
সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন যে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগের জন্য সরকার কোনো চাপ দেয়নি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের বিখ্যাত ‘জি চ্যানেল’ নেটওয়ার্কের অন্যতম সিস্টার কনসার্ন ‘জি নিউজ’ পর্যন্তও খবর প্রচার করেছে যে, চাপের মুখে এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন। এসম্পর্কে গত ১১ নভেম্বর শনিবার জি নিউজে যে খবরটি ú্রচারিত হয়েছে তার শিরোনাম হলো, ‘চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি’। খবরে বলা হয়েছে, ‘শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা। শুক্রবার কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মারফত রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রোষের মুখে পড়েছিলেন সিনহা। শনিবার দুপুর ঢাকার বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে, সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনও প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেননি। ২০১৫ সালে ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধানবিচারপতি হন এস কে সিনহা। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ ছিল তাঁর। স¤প্রতি ষোড়শ সংশোধনীতে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সংসদ। সেই সংশোধনী বাতিল করেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি তার পর্যবেক্ষণের কপি তুলে দেওয়া হয় ওয়েবসাইটে। বিচার ব্যবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন সিনহা। আর সেটাই মেনে নিতে পারেননি শেখ হাসিনার দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
চাপের মুখে ছুটি নিতে বাধ্য হন সিনহা। ৩ অক্টোবর থেকে ছুটি নেন তিনি। ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে যান। এরপরই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে আর দেশে ফেরেননি তিনি। কানাডায় আর এক মেয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন, যাতে করে তিনি সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেন।’
এ্যাটর্নী জেনারেল তথা সরকার একদিকে বলছে যে, প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি, আবার অন্যদিকে একই নিঃশ্বাসে বলছে যে, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ফলে বিচার বিভাগ ‘ভারমুক্ত’ হলো। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন যে, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ফলে বিচার বিভাগ নাকি ‘কলঙ্কমুক্ত’ হলো। এ্যাটর্নী জেনারেল এ সম্পর্কে বলেন, এস কে সিনহার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ‘ভারমুক্ত’ হয়েছে। গত রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। মাহবুবে আলম বলেন, বিচার বিভাগের কোন লোক যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, নৈতিক স্খলনের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে কোনমতেই তার বিচার বিভাগে থাকা উচিত নয়। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ভারমুক্ত হলো। তিনি আরো বলেন, এখন যারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে নানারকম বির্তক সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন এবং নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন এগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনীতি করার খাতিরে তারা এসব কথা বলছেন। যে পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেবেন সে পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
ন্যায়বিচারে বলা হয় যে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের চোখে তিনি নির্দোষ। এক্ষেত্রে এস কে সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিচার অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, তার বিরুদ্ধে কোনো চার্জও গঠন হয়নি। এমনকি ঐ ১১ দফা অভিযোগ সংবলিত কোনো পত্রও তার কাছে পাঠানো হয়নি। অথচ খোদ এ্যাটর্নী জেনারেল এবং একজন মন্ত্রী, যিনি একজন এ্যাডভোকেটও বটে, তারা বললেন যে, বিচার বিভাগ ভারমুক্ত হলো এবং বিচার বিভাগ কলঙ্কমুক্ত হলো। তাহলে প্রধান বিচারপতির স্ট্যাটাসের একজন লোক বিচার শুরুর আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে গেলেন? অদ্ভুত সব কথা। সারা দুনিয়ায় এই ধরনের আর কোন নজির আছে কিনা তাতে সন্দেহ।
\পাঁচ\
প্রিয় পাঠক, ইতো মধ্যেই লেখাটি বড় হয়ে গেল। তাই অন্য দুটি বিষয় অর্থাৎ রংপুরে পুলিশের গুলি বর্ষণ ও হতাহতের এবং ২০ মাস পর বেগম জিয়ার প্রথম জনসভা সম্পর্কে লেখার সুযোগ থাকলো না। ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে এসব নিয়ে লিখবো, ইনশাআল্লাহ। তবে সরকারের প্রবল বাধা সত্তে¡ও এই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভায় বেগম জিয়া যে ক’টি বিষয়ের ওপর জোর দেন সেগুলো হলো: (১) বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারবে না, (২) বিএনপির অন্যান্য নেতার বক্তব্য অনুযায়ী বেগম জিয়াকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, (৩) নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে এবং (৪) নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং এ সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকতে হবে। এখন বিএনপি তথা বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি তাদের এসব দাবিতে অটল থাকে তাহলে আগামী নির্বাচন ঝড়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা হয়।
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।