Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদপুরে শতাধিক ইটভাটায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লাখো মানুষ

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লোকালয়, বেড়িবাঁধ, এলজিইডি ও ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে চাঁদপুরের জনজীবনে। ধ্বংস হচ্ছে আবাদী জমি, ফসল, সম্পদ, ফল-ফলাদি ও গাছপালা। মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জাহাজের পোড়া মবিল, কাঠ ও কাঠের গুড়া পোড়ানো হয় দেদারছে। এ ধরনের ধংসাত্মক কর্মকান্ড প্রতিবছরই চলে আসছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরকেও তোয়াক্বা করছে না। ফলে নবায়ন বিহীন প্রায় ৭৭টি ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেকটা নীরব ও অসহায় দর্শক। বর্ষাকাল শেষ গেছে। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে ইটভাটায় নতুন ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি। এ অবস্থায় ভয়াবহ ক্ষতির শিকার ফরিদগঞ্জ রামপুর বাজারের ভূইয়া ব্রিক্স নামক ইটভাটা বন্ধের দাবীতে লিখিত আবেদন করেছে এলাকাবাসী।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যলয় সূত্র জানায়, সরকারি হিসাবমতে জেলায় ১১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে চাঁদপুর সদরে ২৪টি, মতলব দক্ষিণে ৪টি, মতলব উত্তরে ১৭টি, হাজীগঞ্জে ১৫টি, শাহরাস্তিতে ১৯টি, ফরিদগঞ্জে ২৪টি, কচুয়ায় ১২টি ও হাইমচরে ৪টি। ইতোমধ্যে ৪০টি ইটভাটার নবায়ন হয়েছে। বাকি আছে আরো ৭৭টি। এর মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগ, মালিকানা, ভুমি সমস্যাসহ নানাবিধ কারনে ১০/১৫টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, জেলার অধিকাংশ ইটভাট ফসলের মাঠে, লোকালয়ে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাধ ঘেষে, এলজিইডি ও ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার পাশে অবস্থিত। এসব ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। অধিকাংশ ইটভাটায় জাহাজের পোড়া মবিল, টায়ারসহ কাঠ ও কাঠের গুড়া পোড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো চলছে।
অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে গড়ে ওঠা ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি ইটভাটার অবস্থান হচ্ছে এ রকম: রামপুর বাজারের পাশে লাড়–য়া গ্রামে ঘন জনবসতিপূর্ণ লোকালয়ে রয়েছে ভুইয়া ব্রিকস নামক ইটভাটা। এর চারপাশে কয়েক গজের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, ফাজিল মাদ্রাসা, এতিমখানা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ব্যাংক, মসজিদ, রামপুর বাজার ইত্যাদি অবস্থিত। ঐ সব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র করে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিশুসহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নারী-পুরুষ, ক্রেতা বিক্রেতা, চাকরীজীবি ও মুসল্লীর সমাগম ঘটে। ইটভাটা লাগোয়া এলাকার বাড়ীঘরে হাজারো মানুষের স্থায়ী বসবাস। রয়েছে গাছপালা ও বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন-২০০১-এর ৩ (চ) ৫ ধারা অনুযায়ী, আবাদি জমি ও ফলের বাগান থেকে তিন কিলোমিটার এলাকার ভিতরে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েই ইটভাটাগুলো ব্যাঙ্গের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইটভাটার মালিকপক্ষগণ প্রভাবশালী হওয়ায় জনসাধারণ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করার সাহস পায় না। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারীরা অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, মানুষের শ্বাসকষ্টে ভোগাসহ ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পাতার পত্ররন্ধন বন্ধ করে দেয়, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ও শোষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। ধানসহ নানাবিধ ফসলের ফুলের রেণুকে বিনষ্ট করে এবং ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। বাতাসে মিশে থাকা কার্বন পার্টিকেল, সালফার, নাইট্রোজেনসহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান মানবদেহ ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করে।
‘সমস্যা থাকায় অনেক ইটভাটার নবায়ন করা হয়নি’ এমন কথাই বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সিনিয়র ক্যামিস্ট কাজী সুমন। বন্ধের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেনো, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইটভাটা মালিকরা মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেছেন। রিটের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। ‘রিটের আদেশে কি আছে’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার জানা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ