দেশের উপক‚ল রক্ষী বাহিনী ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ এর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিতব্য ৬টি বড় মাপের হাইস্পীড বোটের নির্মাণ কাজের সূচনা হচ্ছে আজ। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্বরে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, বিসিজিএমএল, এনডিসি, পিএসসি-বিএন কিললে’র মাধ্যমে এসব স্পীড বোটের নির্মান কাজের আণুষ্ঠানিক সূচনা করবেন। শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর আনিছুর রহমান মোল্লা, (এল), এনইউপি, পিএসসি-বিএন ’এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উর্ধ্বতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। গত ৪ জুন কোস্ট গার্ডের সাথে এসব স্পীডবোট নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন হয়।
খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি ‘সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন’ এবং ২৭০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল’ এর নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এসব নৌযানের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তরের সম্ভবনা রয়েছে। কোস্ট গার্ডের বহরে এসব নৌযান সংযোজিত হলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় এলাকার নৌপথের নিরাপত্তা ছাড়াও দেশের মৎস সম্পদ রক্ষা ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে যথেষ্ঠ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিখ্যাত ডিজাইন ফার্মের নকশায় ঢাকার কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তত্ত¡াবধানে এসব বড়মাপের হাইস্পীড বোটগুলো নির্মিত হচ্ছে। ১৫.৪মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪.৫ মিটার প্রস্থ এসব হাইস্পীড বোট ১৫.১ টন পানি অপসারণ করে ঘণ্টায় ২৭ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম। বিশ্বখ্যাত ফ্রান্সের ‘ব্যুরো ভেরিটাস’ নামের নৌ জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের নিবিড় নজরদারীতে এসব নৌযান নির্মিত হচ্ছে। স্পীড বোটগুলোতে সুইডেনের ‘ভোল্বাপেন্টা’ ব্রান্ডের ৫৫৩ অশ্বশক্তির দু’টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও আমেরিকার একটি বিখ্যাত কোম্পানীর ২১ কিলোওয়াটের জেনারেটর সংযোজন করা হবে। অত্যাধুনিক ‘ইকোসাউন্ডা ও ‘ডিজিপিএস রাডার’ ছাড়াও ‘নেভিগেশনাল রাডার’ সমৃদ্ধ এসব টহল হাইস্পীড বোটে স্থায়ী জনবল থাকবে ৬জন করে। এসব বোটগুলো একনাগারে ৩শ কিলোমিটার পর্যন্ত নৌপথ পাড়ি দিতে সক্ষম।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক বিশাল সমুদ্র এলাকার অধিকারী হয়েছে। এর ফলে আমাদের ‘বøু-ইকনমী’র অপার সম্ভবনার দ্বারও উন্মোচিত হয়েছে। আর এ প্রেক্ষিতেই কোস্ট গার্ডের ভ‚মিকা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার এ আধা সামরিক বাহিনীটির উন্নয়নে ২০১৫ থেকে ’৩০ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ৩টি ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল’ ও ‘সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন’ এর নির্মান কাজ শুরুর পরে আজ হাইস্পীড বোট-এর নির্মাজ শুরু হচ্ছে খুলনা শিপইয়ার্ডে।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের সমৃদ্ধ সমুদ্র সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি আমাদের নৌসীমা সহ উপক‚লীয় ও অভ্যন্তরীণ এলাকায় অতন্দ্র প্রহরীর ভ‚মিকা পালন করছে। কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যে দেশের উপক‚লীয় এলাকা সহ বিভিন্ন নদী বন্দর এবং নৌপথে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতিকে পরিণত হয়েছে। দেশের উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। আর তা রক্ষায় অত্যাধুনিক কোস্টগার্ডেরও কোন বিকল্প নেই। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষে কোস্টগার্ড বিশেষ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার টহল নৌযানসমূহের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় এলাকায় নিয়মিত টহল প্রদান করে আসছে। চোরাচালান ও মাদাক বিরোধী অভিযান এবং ইলিশ সহ মৎস সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃংখলা রক্ষায়ও কোস্ট গার্ড গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন খুলণা শিপইয়ার্ড সমর নৌযান নির্মানে ইতোমধ্যে দেশের সীমা ছাড়িয়ে উপমহাদেশেও তার অবস্থান করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিগত দিনে প্রায় সোয়া ৭শ’ নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আরো ২ হাজার ২শ’ ৩০টির মত মাঝারী ও বড় মাপের নৌযানের মেরামত কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে। অত্যধৃনিক এ নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে দক্ষ জনশক্তি। যাদের নিরলশ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় একসময়ের লোকশানী ও রূগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান-খুলনা শিপইয়ার্ড এখন সর্বোচ্চ মুনফা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।