পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে ও তাদের মাঝে ত্রাণ বিরতণ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফল ছিল মানবিক। কিন্তু তার এই মানবিক সফরই চাঙ্গা করে তুলেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। বিএনপির এই সফরের সফল্য ঈর্ষণীয় করে তুলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও চট্টগ্রাম থেকে কক্সাবাজার সফর করেছেন সড়ক পথে। পথসভা করেছেন বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি দলীয় স্বার্থের চেয়ে মানবিকতা ও দেশের জাতীয় স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এজন্য সফরে কোথাও কোন পথসভা কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
বরং রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা যায় সে বিষয়েই জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়কের দু’পাশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও উৎসুক সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা ও হামলার (বিএনপির অভিযোগ) পরও পথে পথে মানুষের ঢল নামাতে মানবিক সফর থেকেই রাজনৈতিক অর্জন দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
একইসাথে খালেদা জিয়ার এ সফরে সাধারণ মানুষ সরকারকেও একটি বার্তা দিয়েছে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে খালেদা জিয়াকে অভিবাদন জানানোর মাধ্যমে সরকারের প্রতি জানিয়েছে নীরব প্রতিবাদ। বিএনপির তরফে খালেদা জিয়ার উখিয়া সফরকে রাজনীতির রঙ্গে রাঙানোর প্রত্যক্ষ উদ্যোগ না থাকলেও পরোক্ষভাবে এটা পরিণত হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার উপলক্ষ। প্রশাসনের কড়াকড়ি ও ক্ষমতাসীনদের প্রতিবন্ধকতায় রাজপথের রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপিকে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া দিয়েছে এ সফর। আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার ফলাফল কি হতে পারে এর একটি ইঙ্গিতও রয়েছে এর মধ্যে।
দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের বাধার কারণে রাজপথে মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে না পারায় খালেদা জিয়া কক্সবাজার সফর করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা উৎসুক হয়ে ওঠেন। সরকারও মানবিক এই কর্মসূচিকে নির্বিঘেœ সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে সফর শুরুর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীরাও ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে কাকরাইল, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, টিকাটুলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা কাঁচপুর ব্রীজ পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। একই রকম চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা অংশের মহাসড়কে। তবে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর পৌছালে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, ফেনীতে হামলার ঘটনায় সরকারের আশ্বাস যেমন ক্ষুণœ হয়েছে তেমনি গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের বহনকারী গাড়িতে হামলা সরকারকে নৈতিকভাবে দুর্বল করেছে। যদিও এই হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করে আসছে। তবে গণমাধ্যম কর্মী ও তাদের বহনকারী গাড়িতে হামলা ও এ হামলার সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে জড়িয়ে একটি অডিও টেপ প্রচার সরকারের জন্য উল্টো বুমেরাং হয়েছে। মানুষ এটা বিশ্বাস করেনি কারণ গাড়িবহরে হামলার পর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফেনী সদর আসনের সরকারদলীয় এমপির একটি বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হামলার সময় ধারণকৃত হামলাকারীদের একটি ভিডিও চিত্রে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন চিহ্নিত হয়েছেন। তবে ফেনীতে হামলার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরের চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে প্রবেশের সময় থেকে শুরু করে সফরের শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরী, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিএনপি চেয়ারপারসনের যাওয়া-আসার পথে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর ঢল নামে।
সফরের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার মাত্র ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই ৮ ঘণ্টা সময় লাগে চেয়ারপারসনের গাড়িবহর। দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রতিটি বাজার এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন নেতারা। যাত্রাপথকে কেউ কেউ সাজিয়েছিলেন বর্ণিল সাজে। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানানো হয় ফুল ছিটিয়ে, হাতি দিয়ে। চট্টগ্রাম মহানগর, কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তরপ্রান্ত থেকে মইজ্জার টেক, চন্দনাইশ, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়া বাসস্টেশন, চকরিয়ার চিরিঙ্গা, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ও রামুতে মানুষের অভাবনীয় উপস্থিতির কথা এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। বিশেষ করে কর্ণফুলী ব্রিজের আগে মানুষের উপস্থিতি দেখে অভিভূত হয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তার সফরের সঙ্গী হওয়া নেতাকর্মীসহ অন্যরাও। সেই উপস্থিতির চিত্র তুলে রাখতে ভুল করেননি তাদের কেউই। দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে যেনো মানুষের স্রোতের মাঝে ভেসে আসছে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এদিকে জোটের শরিক দলের মধ্যে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়ায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের সমর্থকরা। কিন্তু দীর্ঘ এ সফরে কোথাও দেখা যায়নি জামায়াত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঢাকা থেকে উখিয়া পর্যন্ত ৪৭৫ কিলোমিটার যাত্রাপথ যেমন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে অনুপ্রাণিত করেছে। তেমনি কোন কোন এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতায় চিন্তার ভাজ ফেলেছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার নিজ এলাকা ফেনীতে সফরের যাত্রা ও ফিরতে পথে দু’বারই হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার নিজের এলাকা বলে পরিচিত । তিনি এখান থেকে কয়েকবার নির্বাচিতও হয়েছেন। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে বিএনপির স্থানীয় কমিটি না হওয়ার কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যার চিত্রই ফুটে ওঠেছে এই সফরের মধ্যে।
মানবিক এই সফরে ত্রাণ বিতরণ শেষে খালেদা জিয়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন। এসময় তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ শুনেন, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর সকলকেই মান-অভিমান ভুলে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল ও দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। সকলকে মিলে সংগঠনের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার নির্দেশনা দেন। এছাড়া তার সফরকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পরিশ্রমের জন্য তিনি তাদেরকে ধন্যবাদও জানান। স্থানীয় নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের ফলে ওই দুই জেলায় দলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করবে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা। এছাড়া খালেদা জিয়ার উখিয়া সফরকে কেন্দ্র করে ত্রাণ সমন্বয়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের কার্যক্রম সমন্বয় ও বহরে অংশগ্রহণকারীদের দেখভালে দীর্ঘদিন পর একযোগে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন দলটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
বেগম খালেদা জিয়ার সফর সম্পর্কে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সফরের ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। নেতাকর্মীরা দারুন উজ্জীবিত হয়ে ওঠেছে। সামনে নির্বাচন এবং আন্দোলন দুটিতেই এই সফরের প্রভাব পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, লাখ লাখ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে বিএনপির প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নেতাকর্মীরা এই সফরের কারণে নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে, তাদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের মামলা হামলার কারণে সাংগঠনিক তৎপরতা কিছুটা ধীর গতিতে চলছিল আবার তাতে গতির সঞ্চার হয়েছে। আত্মবিশ্বাসের পালেও হাওয়া লেগেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশনেত্রী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলনের জন্য চট্টগ্রামকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর পর্যালোচনায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতা ও বাংলাদেশের স্বার্থ দুটোকেই বড় করে দেখেছে বিএনপি। তাই প্রথম থেকেই আমাদের অবস্থান ইতিবাচক। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে চারদিনের উখিয়া সফরে কোনো পথসভা করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। বরং এ সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের অবস্থান শক্ত হয়েছে। খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি যে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন সরকার সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে উখিয়া পর্যন্ত দীর্ঘপথে রাস্তার দু’পাশে সাধারণ মানুষের যে স্বতস্ফূর্ত অবস্থান ছিল তার থেকেও কিছু বার্তা নিতে পারে সরকার। ধরপাকড়, বাড়ি বাড়ি অভিযানসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মানুষ তাদের ভোটাধিকার হরণ, মৌলিক অধিকার হরণ, নির্যাতন-নিপীড়নের নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে। জনগণের এ প্রতিবাদকে আমলে নিলে সরকার অবশ্যই দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে।
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, মানবিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের সহানুভূতি জানানোই ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের এ সফরের লক্ষ্য। তবে এ সফরে আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লাখ লাখ মানুষ যেভাবে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে তা নতুন করে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তার চূড়া কত উঁচু। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে যে বিপুল জনজোয়ার নেমেছিল তা সত্যিই অভাবনীয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সফর সম্পর্কে চট্টগ্রামেই বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার এই সফরে রাস্তার দু’পাশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিই প্রমান করেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন পথে কোথাও বিরতি দিবেন না, কোন পথ সভা করবেন না জেনেও মানুষ শুধু তাকে স্বাগত জানানোর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করেছে, দেশনেত্রীকে স্বাগত জানিয়েই তারা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।