পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরিশালবাসী একজন অতি উপকারী স্বজনকে হারাল
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসী তাদের একজন উপকারী স্বজনকে হারাল। বরিশাল জেলা স্কুল মাঠে সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বসের প্রথম নামাজে জানাজায় গতকাল সব দলমতের মানুষের এটিই ছিল মূল কথা। এ জানাজায় গতকাল আমজনতার ঢল নামে। চোখের পানিতে বরিশালবাসী তাদের অতি আপনজনকে বিদায় জানায়। গত শুক্রবার রাতেই বিভিন্ন গনমাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট-এ মৃত্যু সংবাদে বরিশাল মহানগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাতেই বিভিন্ন মসজিদের মাইকযোগে আবদুর রহমান বিশ্বাসের মৃত্যু সংবাদ প্রচার শুরু হয়। গতকাল সকালে বরিশাল মহানগরীতে জেলা স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় নামাজে জানাজার কথা জানান দিতে মাইকিং করে বিভিন্ন সংগঠন। ৯টার আগেই হাজার হাজার মানুষ জেলা স্কুলে সমবেত হন। কিন্তু তার লাশ যখন জেলা স্কুলে পৌছে তখন বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে একটি বিশেষ ফ্লাইটে সাবেক প্রেসিডেন্ট-এর কফিন বরিশাল বিমান বন্দরে পৌছে। সেখান থেকে ১৬কিলোমিটার দুরে মহানগরীর জেলা স্কুলে পৌছে সাড়ে ১১টার দিকে ।
প্রখর রোদের মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ সেখানে অপেক্ষা করছিলেন নামাজে জানাজার মাধ্যমে তাদের প্রিয় মানুষটিকে বিদায় জানাতে। নামাজে জানাজার আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট-এর কফিনে পুস্পস্তবক অর্পনসহ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি এবাদুল হক চানসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সম্পাদক এ্যডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর ছাড়াও যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করেন। এসময় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক ছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকেও সাবেক প্রেসিডেন্ট-এর কফিনে পুস্পস্তবক প্রদান করা হয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক স্পীকার আবদুর রহমান বিশ্বাস ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অত্যন্ত কাছের মানুষ ১৯৯১-এর অক্টোবর থেকে ’৯৬-এর অক্টোবর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় তিনি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও তিনি বহু মানুষের উপকার করেছেন।
বরিশাল প্রশাসনিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা তার অসামান্য অবদান। এছাড়াও বরিশাল বিমানবন্দর নির্মাণ ও জাতীয় পতাকাবাহী ফ্লাইট চালু, বরিশাল বেতার কেন্দ্র, বরিশালে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সেঞ্জ স্থাপন, বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এর আধুনিকায়নসহ নতুন অপারেশন থিয়েটার নির্মাণ এবং পটুয়াখালী টিভি রিলে স্টেশন নির্মাণ তার অনবদ্য অবদানের অন্যতম। এছাড়াও তিনি অধুনালুপ্ত বরিশাল পৌরসভা এবং বরিশাল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে গেছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভার সদস্য থাকাকালীন ১৯৭৯এর ২৩ নভেম্বর বরিশাল সার্কিট হাউসে মন্ত্রী পরিষদের সভায় বরিশাল প্রাশাসনিক বিভাগ, বিমানবন্দর ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ এর ১ জানুয়ারি দেশের ৫ম প্রাশাসনিক বিভাগ হিসেবে বরিশাল বিভাগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেও তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
আবদুর রহমান বিশ্বাস শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় পাটমন্ত্রী এবং বিচারপতি সাত্তারের মন্ত্রী সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবার পরে ১৯৯২সালে তিনি স্পীকার নির্বাচিত হন। পরে ঐবছরই অক্টোবরে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পরে আবদুর রহমান বিশ্বাস কোন নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি। তিনি ১৯৬২ ও ’৬৫সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য এবং ১৯৬৫ থেকে ’৬৯সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টারী কমিটির সেক্রটারী ছিলেন। ১৯৬৭সালে জাতীসংঘের ২২তম সাধারণ অধীবেশনে যোগাদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ(সম্মান) এবং ইতিহাস ও আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভের পরে তিনি কিছুদিন বরিশালের অদুরে বাবুগঞ্জ পাইলট স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পরে আইন পেশায় যোগদেন। জনাব বিশ্বাস ১৯৭৪ ও ১৯৭৬সালে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৭সালে তিনি বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ১৯৭৮সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনের এমপি নির্বাচিত হন।
১৯২৬সালে বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণকারী আবদুর রহমান বিশ্বাস তার জীবদ্বশায় সারাটি জীবন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উপকার করে গেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই জনাব বিশ্বাস বার্ধক্যজনিত কারণে শারিরিকভাবে অসুস্থ্য ছিলেন। মাস কয়েক আগে স্ত্রী বিয়োগের পরে তিনি মানষিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন। গত শুক্রবার তার শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যার্থ করে রাত ৮টা ৪০মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। আবদুর রহমান বিশ্বাস-এর মৃত্যুতে দক্ষিণাঞ্চলবাসী হারিয়েছেন একজন অতি উপকারী আপনজনকে। এ শূন্যতা আর কোনদিন পুরণ হবে কিনা তা কারো জানা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।