বিএনপি নির্বাচনে না এলে আগামীতে কোন নির্বাচনই হবে না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির সাথে সমঝোতা করেই আগামী নির্বাচন করতে হবে। আর সরকার সমঝোতায় না আসলে দেশে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। তিনি বলেন, আজকে তারা (সরকার) যদি মনে করেন এখন যে অবস্থায় আছেন তারা, ছয়মাস পরে একই অবস্থায় থাকবেন- তাহলে তারা ভুল করছেন। সমঝোতায় আসতে হবে, তা নাহলে দেশের মানুষ রাস্তায় নামবে, গণবিস্ফোরণ হবে। সেই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অতীতে যেমন সরকারের পরিবর্তন হয়েছে, বর্তমান সরকারেরও ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন হবে। গতকাল (শনিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, মানুষের এখন অন্য কোনও আশ্রয় নেই, পথ নেই। ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তারা একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। সরকারকে বলব- একটা ভোট দিয়ে দেখেন, মানুষ পরিবর্তন চায় কিনা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আপনারা বুঝতে পারবেন, আপনাদের জনপ্রিয়তা কোথায় নেমে গেছে। জোর করে সন্ত্রাস করে, পুলিশ দিয়ে, র‌্যাব দিয়ে কত দিন আপনারা দেশ চালাবেন? তিনি বলেন, একটা সময় আসবে দেশের মানুষ ও প্রশাসন যখন দেখবে যে গণজোয়ার উঠে গেছে এই সরকারকে পরিবর্তন করার জন্য, তখন দেখবেন যে প্রশাসন আপনাদের পক্ষে আছে, যারা পুলিশ অফিসাররা আছেন, তারাই আবার জনগণের কাতারে এসে জনগণের সঙ্গে হাত মেলাবে, আপনাদের সঙ্গে থাকবে না। এটা আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি। আইয়ুব খানের আমল থেকে শুরু করে আমরা সর্বত্র দেখেছি। তখন এই সরকার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা করে কোন লাভ হবে না মন্তব্য করে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বাধার সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না। শত বাধা আমাদেরকে বন্ধ করতে পারবে না, আমাদেরকে রোধ করতে পারবে না। আমাদের যাত্রাপথে কোনো রকমের বাধা, যতরকমের বাধা দেন না কেন- এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করেছে। কারণ তারা গণমাধ্যম, সংবাদপত্র ও দেশের মানুষের স্বাধীনতায় কখনও বিশ্বাস করে না। সেই কারণেই শুধু গাড়িবহরে নয়, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ করেছে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। মওদুদ বলেন, আমাদের নেত্রী আরও যাবেন।একটা অংশে মানুষের ঢল দেখেই এমন করছেন আপনারা? এই ধরনের গাড়িবহরে হামলা করে বিএনপি ও জনগণের অগ্রযাত্রা বন্ধ করা যাবে না। আরও সফরে যাব আমরা। দেখব, কত বহরে আপনারা আক্রমণ করতে পারেন। বেগম খালেদা জিয়া যে উদ্যোগ নিয়েছেন, আমরা তার সঙ্গে থাকব। যেখানে খুশি সেখানে আমরা যাব এবং শত বাধা থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশের মানুষের কাছে যাব, জনমত সৃষ্টি করব।
নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনের চিন্তা করে থাকলে সরকার ভুল করছে বলে মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচনে সময়ে এমন একটি সরকার দেখতে চাই যে, যে সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ থাকবে না। অর্থাৎ এটা একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকতে হবে এবং নির্বাচনের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি আমীর হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর আলম সোহাগের পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়ার আলী নেওয়াজ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।