Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে বাঁশ-বেত শিল্পের বাজার ধস

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মোঃ গোলাম ফারুক : | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যতায় বাঁশ-বেত শিল্পের বাজারে ধস নেমেছে। প্রয়োজনীয় পুঁজি সঙ্কট, শ্রমিক মজুরিসহ উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি, উৎপাদিত পন্যে মূল্যের ন্যয্য মূল্য না পাওয়া ও প্লাস্টিক সামগ্রীর মূল্যের সাথে বাঁশ-বেতে তৈরি পন্যের মূল্যের তফাৎই আজ এ শিল্পের করুন হাল।
জানা যায়, এক সময়ের আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ছিল বাঁশ শিল্প। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে কুটির শিল্প। আর এই শিল্পের সাথে এখনো জড়িত রয়েছে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা সদরের পালপাড়ায়, খোলাশ, মাঝিপাড়াসহ জিয়ানগর, তালোড়া, গোবিন্দপুর, গুনাহারের বিভিন্ন এলাকার গ্রামে কৃষি সম্প্রদায়ের লোকেরা এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাস সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস্তার ধারে ও বাড়ির আঙ্গিনায় বসে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, ডালি, টোপা, মাছ ধরার খলসানি, মোড়া, মুরগীর খাচা বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরীর কাজ করত। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও রান্না, ঘরের কাজ শেষে এই সব জিনিস তৈরীর কাজে পুরুষদের সহযোগিতা করত। বাঁশের তৈরী এই সব জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ও এলাকার হাটবাজারে বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। বিভিন্ন মেলায় এই সব সামগ্রীর পসড়া সাজিয়েও বিক্রি করা হতো। প্রতি বছর আমন ধান কাটার এই মৌসুমে শুরুতেই এই শিল্পের কুলা, ডালা, চালুনসহ বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যেত। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এই সব কুটির শিল্প সামগ্রী সরবরাহ করা হতো পার্শ্ববর্তী উপজেলা সহ জেলাগুলোতেও। দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার পালপাড়ার রাম গোপাল মহন্তের পুত্র শ্যামল মহন্ত (৩২), দুলন মহন্ত (৩০), মৃতঃ গৌর চন্দ্র মহন্তের পুত্র মনিন্দ্র মহন্ত (৫৫) ও ক্ষুধারাম মহন্তের পুত্র দিলীপ মহন্ত (৫০) ‘দৈনিক ইনকিলাব’কে জানান, এক সময় গ্রামগঞ্জের ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরী এই সব সামগ্রীর খুবই কদর ছিল। এখন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের তৈরী সস্তা দরের রঙ বেরঙের নানা জিনিস।
বর্তমানে বেশী দামের কারনে বাঁশের তৈরী জিনিসপত্র তেমন আর বিক্রি হয় না। তবে এখনো অনেকেই পৈতিৃক সূত্রে প্রাপ্ত এ ব্যবসা ধরে রেখেছে। সৌখিন মানুষ আছে যারা আজও তাদের এ সব জিনিস ক্রয় করতে চায়। দাম বেশি হওয়ায় অনেকে পিছিয়ে যায়। পালপাড়ার মৃতঃ শিরিস মহন্তের পুত্র শরজিৎ মহন্ত (৭৫) বলেন, এ শিল্প কে আকড়ে ধরে ৫০ টি বছর পার করে দিয়েছে। এখনো রোজ সকালে বাঁশের তৈরী নানা ধরনের সামগ্রী তৈরী করে কাঁধে ঝুলিয়ে গ্রামে গ্রামে হাঁক ডাক দিয়ে ফেরি করে বেড়ায়। বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো এ কাজে তেমন একটা ভালো লাভ হয় না। বয়স হয়েছে অন্য কাজ করতে পারে না তাই এ কাজই আকঁড়ে ধরে আছে। আগে গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই বাড়ির পতিত জমিতে বাঁশের ঝাড় ছিল। তাতে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বছরে অনেক টাকার বাঁশ বিক্রি করত। তখন বাঁশের দাম ছিল কম। বর্তমানে এলাকায় বাঁশ ঝাড় কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে অনেক। তাই বাঁশের মূল্যে ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সব জিনিস বিক্রি করে লাভ কম হওয়ায় এই শিল্পে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছে। এক সময় প্রতিটি বাড়িতে বাঁশের তৈরী এসব জিনিসের ব্যবহার ছিল। হাটবাজারে বিক্রিও হতো প্রচুর। বর্তমানে হাটবাজারগুলোতে বাঁশ শিল্পের ধ্বংস নেমেছে। মন্দাবস্তা বিরাজ করছে। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরী সস্তা দরের বিভিন্ন জিনিসপত্র এসব পন্যের স্থান দখল করে নিয়েছে। ফলে প্লাস্টিকের এসব জিনিসপত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই কুটির শিল্পটি। ক্রেতার অভাব আর এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারনে কুটির শিল্পিরা বাধ্য হচ্ছেন তাদের পৈতিৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে। ফলে এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল অনেকেই বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারপরও অনেকেই নিরূপায় হয়ে খেয়ে না খেয়ে পূর্ব পুরুষের এ পেশা টিকে রাখতে আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশ শিল্প বাঙালি জাতির সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন আবহমান গ্রাম বাংলার হাজার বছরের বাঁশ শিল্পের এ ঐতিহ্য কে টিকে রাখতে বাঁশ উৎপাদনে জনগন কে উৎসাহিত করতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্লাস্টিক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ