গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বন্দরনগরীর ব্যস্ততম স্টেশন রোডের রাস্তার দুই পাশে দূরপাল্লার বাসের অসংখ্য কাউন্টার। এসব কাউন্টারের সামনের সড়কে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। এতে করে সড়কটিতে বিঘিœত হচ্ছে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। একই অবস্থা নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ মাজার এলাকায়ও। নগরীর সিনেমা প্যালেস, বহদ্দারহাটের বহদ্দারবাড়ির মোড়, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উত্তর প্রান্ত, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, একে খান গেট, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও স্টিলমিল এলাকায়ও একই চিত্র। সড়কের একাংশ দখল করে দূরপাল্লার বাসের যাত্রী ওঠানামার কারণে ওইসব সড়কজুড়ে চরম বিশৃঙ্খলা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামে নেই কোন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের মালিকরা নিজেদের মতো করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টার্মিনাল গড়ে তুলেছেন। মহানগরীতে চলাচলরত গণপরিবনেরও নেই কোন টার্মিনাল। রাস্তার উপর রাখা হয় এসব বাস, মিনি-বাস। মহানগরীতে চলাচলকারি কয়েক হাজার টেম্পু ও হিউম্যান হলারের জন্যও নেই কোন টার্মিনাল। ফলে যত্রতত্র এসব যানবাহন রাখা হচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য মহানগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে কোন পার্কিং প্লেস নেই। কর্মদিবসের সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি বড় বড় সড়কের দুই পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে সারি সারি গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। প্রধান প্রধান সড়কের বিশাল অংশ ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়ে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কদমতলীতে রেলের জমিতে গড়ে উঠা বাস টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লার প্রায় ৫৭টি রুটের বাস চলাচল করে। এই টার্মিনালটি অস্থায়ী, বিভিন্ন টার্মিনালটি উচ্ছেদও করা হয়েছে। ওই টার্মিনালকে ঘিরে পুরো কদমতলী এলাকায় যানবাহন চলাচলে চরম বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর কদমতলী টার্মিনাল থেকে বাস সরিয়ে নেওয়া হয় নগরীর পাহাড়তলী অলংকার মোড়ে। পরে আবার অনেক রুটের বাস কদমতলীতে ফিরে আসে। অংলকার মোড় থেকেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যায়। অংলকার মোড় থেকে শুরু করে একে খান গেইট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। এর ফলে ওই এলাকায় যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার রুটের বাস ছেড়ে যায়। আবার চান্দগাঁও থানার মোড় থেকেও দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বাস ছেড়ে যায়। সেখানে রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠা নামা করা হয়।
নগরীর অন্যতম প্রবেশপথ কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উত্তর প্রান্তের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় অঘোষিত বাস টার্মিনাল। সেখানে রাস্তা দখল করে বাস রাখা হচ্ছে। রাস্তার উপর বাস রেখে যাত্রী তোলা হচ্ছে। ফলে পুরো এলাকায় চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নগরীর মুরাদপুর ও অক্সিজেন মোড় থেকে ছেড়ে যায় রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটের বাস মিনিবাস। সেখানেও সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা।
মহানগরীর ১৩টি রুটে কয়েক হাজার বাস মিনিবাস, চলাচল করে। এসব বাস রাখার জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট টার্মিনাল। নগরীর কালুরঘাট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, বায়েজিদ, কাট্রলী, লালদীঘির পাড়, সল্টগোলা ক্রসিং ও কাটগড় এলাকায় সড়ক দখল করে এসব সিটি সার্ভিসের বাস রাখা হয়। কাটগড় মোড় থেকে স্টিলমিল বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অসংখ্য বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মহানগরীর পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল। এসব টার্মিনালের কন্টেইনার মুভারসহ লংভেহিক্যাল রাখা হয় সড়কে। কাটগড় মোড় থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এসব ভারী যানবাহন পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের কোন কোন অংশ ধসে পড়েছে। আবার সড়ক দখল করে ভারী যানবাহন রাখায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। যানজটে আটকা পড়ছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাতায়াতকারী যানবাহন এবং পর্যটকবাহি যানবাহনও।
মহানগরীতে প্রতিদিন জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য শত শত ট্যাংক লরী চট্টগ্রাম আসছে। নগরীর পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে এসব ট্যাংক লরী দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে। ট্যাংক লরী মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নগরীতে একটি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দাবিতে তারা বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে বার বার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টার্মিনাল না থাকায় এসব ট্যাংক লরীও রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নগরীতে কোন স্থায়ী পার্কিং নেই। কয়েকটি মার্কেট ও বিপনি কেন্দ্রে সীমিত কিছু যানবাহন পার্কিং করার সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগ মার্কেটে এই সুবিধা নেই। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করতে হচ্ছে। নগরীর প্রধান সড়কের আগ্রাবাদ থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিনই রাস্তার দুই পাশে শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। একই চিত্র সিডিএ এভিনিউ, মুরাদপুর, জুবিলী রোড, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, লালদীঘির পাড়, কেসিদে রোড়, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট এলাকায়ও।
মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূর পাল্লার বাসের জন্য নেই কোন স্থায়ী টার্মিনাল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র উদ্যোগে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর হালিশহর এলাকায় একটি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত ওই উদ্যোগে কোন গতি আসেনি।
রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একদিকে ফুটপাত দখল অন্যদিকে যানবাহন রেখে সড়কের একাংশ দখলের ফলে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।