Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গভীর সাগরে তেল খালাসের মুরিং টার্মিনাল হচ্ছে

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে চীন
জাহাজ থেকে তেল খালাসের সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে গভীর সাগরে একটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি করতে যাচ্ছে (প্রায় চার হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে দেশটি) বাংলাদেশ।
আগামী রোববার শেরে-বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও চীনের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে এই চুক্তি হবে। এতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং স্বাক্ষর করবেন। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিম চৌধুরী। এরপরই শুরু হবে ঋণচুক্তির প্রক্রিয়া। গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে সমঝোতা সই হওয়ার ১১ মাস পর এ কাঠামোগত চুক্তি হচ্ছে। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো দুটি প্রকল্পে কাঠামোগত চুক্তি করেছিল দেশটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি সরবরাহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড প্রডাক্ট (এইচএসডি) সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে খালাস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি লাইটারেজ অপারেশনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ফিনিশড প্রডাক্ট আমদানিতে যে সিস্টেম লস হয়, তা কমানো যাবে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হবে।
ইআরডির চীন ডেস্কের দায়িতপ্রাপ্ত উপসচিব ড. মতিউর রহমান গতকাল ইনকিলাকে জানান, দীর্ঘদিন নানা আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অবশেষে কাঠামোগত চুক্তি হচ্ছে। এর পরই কারিগরি চুক্তি হবে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে। তিনি বলেন, কাঠামোগত চুক্তির পর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ঋণচুক্তি করা হবে। কেননা এরই মধ্যে ঋণচুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে। তিনি জানান, নমনীয় শর্তের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণচুক্তির আগে কাঠামোগত চুক্তি করতে হয়। এ প্রকল্পেও কিছু ঋণ রয়েছে নমনীয় শর্তের। তিনি জানান, আগে যে দুটি প্রকল্পে কাঠামোগত চুক্তি হয়েছিল, তার একটির ঋণচুক্তিও হয়ে গেছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল ও ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন মোট যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তার মধ্যে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন বা নমনীয় শর্তের ঋণ রয়েছে আট কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। বায়ার্স ক্রেডিট অর্থাৎ কিছুটা কঠিন শর্তের ঋণ রয়েছে ৪৬ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। ঋণের ফ্লাট সুদের হার হবে দুই শতাংশ। এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রতিশ্রæতি ফি এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ফি দিতে হবে। এ ছাড়া পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (রেয়াতকাল) ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে তৈরি হবে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টর্মিনাল এবং স্থাপন করা হবে ডাবল পাইপলাইন। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এবং দেশের একমাত্র পেট্রোলিয়াম অয়েল রিফাইনারি। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বাৎসরিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা দেড় মিলিয়ন টন। ইউনিট-টু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ইআরএলের ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা প্রতিবছর সাড়ে চার মিলিয়ন টন হবে। অন্যদিকে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিবছর তিন মিলিয়ন টন এইচএসডি আমদানি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া আন্তঃদেশীয় এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আরো বেশি পরিমাণ এইচএসডি আমদানি প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোতে বড় ক্রুড ভেসেল হ্যান্ডেল করা সম্ভব নয়। কেননা কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম (মাত্র ৮ থকে ১৪ মিটার)। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে বড় ক্রুড ভেসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করা হয়। এরপর ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড আনলোডিং করা হয়। এভাবে ১১ দিনে একটি এক লাখ ডিডবিøউ ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য একটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় থাকছে, পাইপলাইন এবং সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল তৈরি। অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনশোরে ৭৪ কিলোমিটার, সর্বমোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন (এর মধ্যে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ৩২ কিলোমিটার এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৮৮ কিলোমিটার) স্থাপন। মহেশখালী দ্বীপে ট্যাঙ্ক ফার্ম ও পাম্প স্টেশন স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন, ভ‚মি অধিগ্রহণ, অধিযাচন ও ক্ষতিপূরণ, বিশেষজ্ঞ সেবা এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট পূর্ত কাজ করা হবে।
২০১৫ সালে এ প্রকল্প পুনরায় অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর আগে ২০১০ সালে ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল মুরিং (এসপিএম) শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেক অনুমোদন দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তেল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ