পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে ট্রেন। লেভেল ক্রসিং ফাঁকা। নেই গেটম্যান, নেই যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক। আর ফাঁকা পেয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে তৈরি রাস্তা পার হতেই ট্রেনের ধাক্কায় ধুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে যানবাহন, খন্ডবিখন্ড হয়ে ছিটকে পড়ছে পথচারির তাজা দেহ। এমনিভাবে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের আওতাধীন অরিক্ষত লেভেল ক্রসিংগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যথাযথ তদারকির অভাব, গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকায় প্রায়ই প্রাণহানিসহ যানবাহন দুঘর্টনার শিকার হচ্ছে। কুমিল্লা লাকসাম রেলওয়ে জংশনের আওতাধীন ১১৭টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৪টি অবৈধ। আর এসব অস্বীকৃত লেভেলক্রসিং অরক্ষিত থাকায় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনায় যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অস্বীকৃত লেভেলক্রসিংয়ের সামনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে পারাপারের সর্তকবাণীর সাইনবোর্ড বছরের পর বছর ঝুললেও বিষয়টি সমাধানে সরকারি কোন উদ্যোগ নেই।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেলপথে ৬৮টি, চাঁদপুর রেলপথের আউটার সিগন্যাল পর্যন্ত ১টি এবং লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথে ৪৮টিসহ ১১৭টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। তারমধ্যে ৩৩টি লেভেলক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার, গেটম্যান রক্ষিত থাকলেও বাকি ৮৪টি রয়েছে অরক্ষিত। রেলওয়ের হিসেবে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংগুলো অস্বীকৃত বা অবৈধ। যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ ও অনুমতি ছাড়াই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। আর তাই এসব লেভেল ক্রসিংয়ে লোকবল এবং ব্যারিয়ার নির্মাণের কোন এখতিয়ার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে প্রতিবছর অস্বীকৃত ও অরক্ষিত ৮৪ লেভেল ক্রসিংয়ের মৃত্যুকুপে ঝরছে অন্তত শতাধিক তাজাপ্রাণ। লেভেল ক্রসিংকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত ও অস্বীকৃত বা অবৈধ হিসেবে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে রেললাইনের ওপর দিয়ে যেসব সড়ক তৈরি করেছে এগুলো অবৈধ লেভেলক্রসিং হিসেবে চিহ্নিত। এধরণের লেভেলক্রসিংয়ে রেলওয়ের নিযুক্ত গেটম্যান, যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক বা ব্যারিয়ার দেয়ার সুযোগ নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওইসব লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন। এসব সাইনবোর্ডের কোনটিতে লেখা রয়েছে-সাবধান! এইস্থানে রেল লাইনের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। সাবধান! অবৈধ রাস্তা। নিজ দায়িত্বে পারাপার হইবেন। এখানে কোন গেটম্যান নাই। পথচারি ও সকল যানবাহন নিজ দায়িত্বে পারাপার হইবেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্কতার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ, যানবাহন পারাপারের দৃশ্যের দেখা মিলছে ওইসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। আর এভাবে নিজ দায়িত্বে ঝুঁকির পারাপারে চলন্ত ট্রেনের মুখে পড়তে হচ্ছে পথচারি এবং বিভিন্ন পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনকে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘রেলওয়ের অনুমতি ছাড়া এলজিইডি, সওজ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ জনস্বার্থের কথা বলে নিয়মনীতি না মেনে রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে যাচ্ছে। কিন্তু এরকম রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে বিষয়টি রেলওয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করে অনুমতি নেয়া এবং গেট, অবকাঠামো নির্মানের খরচ ও গেটম্যানের আট বছরের বেতনভাতার অর্থ অগ্রিম প্রদান করতে হয়।’ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেভেলক্রসিং নির্মাণে এসব নিয়ম মানা হয়না বলেই লেভেল ক্রসিংগুলো অবৈধ বা অস্বীকৃত ঘোষণা করে থাকে রেলওয়ে। বিশেষ করে রেলওয়ে ও সরকারের ওইসব বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই লেভেল ক্রসিংগুলো বৈধতার স্বীকৃতি পাচ্ছেনা। আর তাই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সব দায় থেকে মুক্ত থাকছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রেলওয়ের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের আওতাধীন লাকসাম পৌর কার্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণাংশ, দৌলতগঞ্জ, ফতেহপুর, বাটিয়াভিটা, কালিয়াচৌ, চন্দনাবাজার, বিষ্ণুপুর, রাজাপুর, খিলা, বাতাবাড়িয়া, সাতেশ্বর, লুদুয়া, টুগুরিয়া, হাতিমারা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাশার পেয়ারাপুর, চিতৈষী বাজার, গন্ডামারা, কুচাইতলি, সাতবাড়িয়া, হরিশ্বর, আজগরা বাজার, বাইনচাটিয়া, ভৈষকপালিয়া, ফয়েজগঞ্জ, পেরুল, দুর্লবপুর, কাকসার, শ্রীরামপুর, মাতাইলপুর, আলীশ্বর, জয়নগর, বরল, সৈয়দপুর, বাগমারা, বিজয়পুর জেলখানা বাড়ি, দত্তপুর,শ্রীমন্তপুর, শ্রীনিবাস, জাঙ্গালিয়া, নোয়াগাঁও, গোমতী নদীর উত্তরপাড়, রসুলপুর, গাজীপুর, রাজাপুর, হরিমঙ্গলবাজার, শশীদল, বজরা, চৌমুহনী, মাইজদী ও সোনাপুর এলাকাসহ প্রায় ৮৪টি অনুমোদনবিহীন লেভেলক্রসিং রয়েছে।
এসব লেভেলক্রসিং পারাপার হতে গিয়ে ট্রেন ও যানবাহন সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বহু মানুষকে। এখনো প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত ১৭ অক্টোবর কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের জেলখানা বাড়ির অনুমোদনহীন লেভেলক্রসিং পার হতে গিয়ে সিলেটগামী পাহাড়িকা ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাইক্রোবাসের তিন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে ২০১১ সালের ১৯ ফেব্রয়ারি ব্রাক্ষ্রণপাড়ার শশীদলে অবৈধ লেভেলক্রসিয়ে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী বাসের ১৮ যাত্রী নিহত এবং ২৫জন আহত হওয়ার ঘটনাটি দেশব্যাপি তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে যেমন মুত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তেমনি বৈধ লেভেলক্রসিংয়ের অনেক জায়গায় লোক নিয়োগ না থাকায় সেখান দিয়েও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। কখনো কখনো লেভেল ক্রসিংয়ের কাছাকাছি রেলওয়ের ভুমিতে অবৈধভাবে যারা দোকানদারি করছে তারা মাঝেমধ্যে গেইটে তদারকি করে থাকেন। কিন্তু এধরণের তদারকি কী সবসময় ঝুঁকি এড়াতে পারবে? এমন প্রশ্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের। তারা মনে করেন অনুমতি ছাড়া যেসব লেভেলক্রসিং তৈরি হয়েছে তা জনসাধারণ ও পণ্য-যাত্রীবাহী পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। চলাচলে সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় এসব লেভেলক্রসিং ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠেছে। তাই জনসাধারণের স্বার্থ ও জানমালের কথা বিবেচনা করে রেলওয়ে ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলে রেলের লোকবল সঙ্কট নিরসন করে লেলেভক্রসিংয়ের মৃত্যুকুপ থেকে মানুষকে রক্ষায় রেলপথ মন্ত্রণালয় অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।