চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
\ শেষ \
অন্ধকার যুগের অপবিত্রা এক নারীর স্পর্শে পাথরটি হয়ে পড়ে জ্যোতিহীন, কালো। ( তাফসীরে মাজহারী)
মুশরিকদের অপবিত্র স্পর্শ্বের কারণেই নাকি তা কালো বর্ণে পর্যবসিত হয়। সম্মানিত পাঠক, এ পাথরটিই বর্তমানে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান একমাত্র পাথর যা বেহেশত হতে প্রেরিত। এটা আল্লাহর একটা বিশাল কুদরত। হাজী সাহেবানদের জন্য এ পাথরে চুমু দিতে পারার সুযোগ এক বিরল সৌভাগ্যই বটে।
এক পর্যায়ে গৃহের দেয়াল উচু হয়ে গেলে (উচ্চতা কোমর পর্যন্ত হলে) ইব্রাহিম আ. এর পক্ষে তা নাগাল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ল। তখন ইসমাইল আ. একটি পাথর খন্ড সংগ্রহ করে নিয়ে এলেন। (উচ্চতা কোমর পর্যন্ত হলে আমাদের দেশে বাশেঁর মাচা তৈরী করে) হযরত ইব্রাহিম আ. এর উপর দাঁড়িয়ে কাবা গৃহের গাঁথুনী কর্ম সম্পাদন করেন। হাদীসে এসেছে কাবা গৃহের দেয়াল যতই উচু হতে লাগল পাথরটির উচ্চতাও ততই বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তাছাড়া পাথরটির পৃষ্ঠে ইব্রাহিম আ. এর দু পায়ের স্পষ্ট ছাপ আজও বিদ্যমান। যা একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলেই দর্শকের কাছে দৃষ্ট হবে। গৃহের চতুর্দিকের দেয়াল নির্মাণে এ পাথরটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যবহার করতেন। তখন থেকে এ পাথরটি মাকামে ইব্রাহিম নামে পরিচিত। অবশেষে গৃহের সম্মুখে এসে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করলেন। (তখনও পর্যন্ত কাবার কোন ছাদ ছিলো না)
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে- ইব্রাহিম আ. যখন কাবা গৃহের নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করলেন তখন জিব্রাইল আ. এসে তাকে বললেন: এবার এর চতুস্পার্শ্বে সাত চক্কর তাওয়াফ করে নিন। তখন তিনি এবং ইসমাইল আ. কাবা গৃহের চতুর্দিকে সাতবার তাওয়াফ করলেন। প্রত্যেক তাওয়াফে চারটি কোনার প্রত্যেকটি একবার করে স্পর্শ করতেন। সম্মানিত পাঠক, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের এই তাওয়াফকে এত পছন্দ করেছেন যে কেয়ামত পর্যন্ত জারী রাখার জন্যে উম্মতে মুহাম্মদীর উপরে এই তাওয়াফকে হজ্বের ফরজ করে দিয়েছেন। (সুবহান আল্লাহ)
সাত চক্কর তাওয়াফ শেষে তিনি এবং ইসমাইল আ. মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে দাঁড়িয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করলেন। সম্মানিত পাঠক, আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের এই নামাজকে এত পছন্দ করেছেন যে কেয়ামত পর্যন্ত জারী রাখার জন্যে উম্মতে মুহাম্মদীর উপরে এই নামাজকে হজে¦র সুন্নাত করে দিয়েছেন। (সুবহান আল্লাহ)
হজ্জের আহবানঃ হযরত জিব্রাইল আ. তাদের সাথে দাড়িয়ে তাদেরকে হজ্জের রীতিনীতি বিস্তারিতভাবে শিখিয়ে দিলেন। অতঃপর জিব্রাইল আ. তাদেরকে নিয়ে আরাফাতে পৌঁছলেন। তখন জিব্রাইল আ. হযরত ইব্রাহিম আ. কে প্রশ্ন করলেন, “হাল আরাফতা মানাসিকাকা” আপনি কি হজ্জের নিয়ম কানুন জেনে নিয়েছেন? তখন হযরত ইব্রাহিম আ. উত্তর দিয়ে বললেন- “আরাফতু” হ্যাঁ আমি জানি। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আ. কে হুকুম দিয়ে বললেন- তুমি শুধু নিজে জানলেই হবে না, তুমি জনতার উদ্দেশ্যে হজ্জের আহবান জানাও। আল্লাহ বলেন- “এবং লোকদেরকে হজ্জের জন্য সাধারণ হুকুম দিয়ে দাও। যেন তারা প্রত্যেকে দূর- দূরান্ত থেকে পায়ে হেটে ও উটের পিঠে চড়ে আসে”। (সূরা আল-হাজ্জ-২৭)
হযরত ইব্রাহিম আ. বললেন ও আল্লাহ! আমার আওয়াজতো বেশী দূর পৌঁছবেনা। ইমাম মাজহারী রহ. বলেন, ইব্রাহিম আ. হজ্বের আহবান জানানোর উদ্দেশ্যে একটি পাথরের উপর দাঁড়ালেন। সেই পাথরটি এত উচুতে উঠে গিয়েছিল যে, পৃথিবীর যে কোন পর্বতের চাইতেও এর উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিল। (বর্তমানে সবচেয়ে বড় পর্বত চূড়া হলো মাউন্ট এভারেষ্ট। যার উচ্চতা হলো ৮৮৫০ মিটার) সেদিন হযরত ইব্রাহিম আ. এর জন্য গোটা দুনিয়ার সমস্ত জায়গা ও জগৎ বাসীকে তার নিকটবর্তী করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি সেখান থেকে বিশ্ববাসীকে উদ্দেশ্য করে একেকবার একেক দিকে মুখ করে আহবান জানালেন: অর্থাৎ “হে মানব গোষ্ঠী, তোমাদের উপর প্রাচীন গৃহের উদ্দেশ্যে হজ্ব পালনের বিধান নির্ধারিত হয়েছে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের এ আহবানে সাড়া দাও”। তখন চতুর্দিক থেকে উত্তর এসেছিল “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” হে প্রভু আমরা আপনার দরবারে উপস্থিত। সেদিন রূহের জগত থেকেও যারা হযরত ইব্রাহিমের এ আহবানে সারা দিয়েছিল তাদের ভাগ্যে হজ্জ সম্পাদন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এখন যারা হজ্জ করে তাদের সবারই রূহ ইব্রাহিমের আহবানে “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” বলে উঠেছিল আলমে আরওয়ায়। আমাদের রূহটাও আল্লাহ তায়ালা তাদের রূহের মধ্যে কবুল করে নিন। আমীন!!
লেখকঃ সভাপতি: বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদ, টাঙ্গাইল জেলা।
ঊসধরষ- ধুধফ৯১নফ@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।