Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে বিনোদনের শিষ্টাচার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 

\ শেষ \
শারীরিক সবলতা ও সুস্থতা অর্জন ইসলামে একটি কাঙ্কিত বিষয়। যে সমস্ত অনুশীলন ও শারীরিক কসরত মানুষকে সবল ও সুস্থ রাখে তার মধ্যে ভার উত্তোলন ও বহন অন্যতম। এটা একটি বৈধ খেলা ও চিত্ত বিনোদনের সুন্দর উপায়ও। ইসলামের সীমারেখা মেনে চলে সীমিত পরিসরে একজন মুমিন ব্যক্তি নিজের জীবন সচল ও সুস্থ রাখার মানসে ভার বহন বা উত্তোলন চর্চা করলে, সেটা একদিকে যেমন শারীরিক ব্যায়াম হবে, তেমনিভাবে তা বৈধ একটি বিনোদন ব্যবস্থা হিসেবে ও গণ্য হবে।
কবিতা আবৃত্তি এবং তা শ্রবণের মাঝে রয়েছে আনন্দ উপভোগের এক প্রকার উপাদান। এটি মানুষকে আকর্ষণ করে, ঝোঁক প্রবণতা সৃষিট করে এবং যে কোনো বিষয়ের প্রতি মোহত করে তোলে। সমাজ, ব্যক্তি ও সৃষ্টিজগতের নানা বিষয়কে কবি তার মনোবীণায় ঝংকৃত করে কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপন করে থাকেন। মানুষ অবসর সময়ে আনন্দ আহলাদ প্রকাশের নিমিত্তে সুন্দর অর্থ সম্পন্ন ও রুচিশীল কবিতা আবৃত্তি কিংবা কবিতার আসর জমিয়ে বিনোদন উদযাপন করতে পারে। কবিতা আবৃত্তি ইসলাম সম্মত বিনোদনের একটি বৈধ উপায় ও। রাসূল স. অর্থপূর্ণ ও ভাল কবিতা রচনায় উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূল স. হযরত হাস্ =সান ইবনু সাবিত র. কে আল্লাহর রাসূলের প্রশংসা ও কাফিরদের নিন্দার জবাবে কবিতার রচনার জন্যে উৎসাহিত করেছেন এবং তাঁ জন্যে দু আ করেছেন।
ইসলামী সংগীত বলতে ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও বিধি বিধান অক্ষুণœ রেখে দীনী ভাবধারায় রচিত ও বাদ্যযন্ত্র বর্জিত গানকে বোঝানো হয়। এ জাতীয় সংগীত একদিকে মানুষকে সুমহান আদর্শের প্রতি অণুপ্রাণিত করে,অপরদিকে মানুষ অবসর সময়ে এরূপ সংগীত চর্চা বা শ্রবণ করে বিনোদন উপভোগ করতে পারে। প্রচলিত নান অশ্লীল গান বাজনা ও বেহায়াপনার বিপরীতে ইসলামী গান ও সংগীত চর্চা জাতীয় বৃহত্তর কল্যাণে খুবই দরকার।
বই পড়া চিত্ত বিনোদনের একটি অন্যতম উপায়। ভাল বই ব্যক্তির নির্জনতার সাথী। বই পুস্তক জ্ঞান বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার। বই পাঠ যেমন ব্যক্তির মনকে আমোদিত ও প্রফুল্ল করে, তেমনিভাবে জ্ঞানের পরিধিকে করে বিস্তৃত। ব্যক্তি জীবনের সর্বোত্তম সময় হলো যা অধ্যয়নে অতিবাহিত করে। বই মানুষের এমন সঙ্গী, যা সাথীকে প্রলোভন দেখায় না, কৌশলের আশ্রয় ও নেয় না। মূলত বই ব্যক্তির একাকিত্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এটি হলো কৌতুক, হাসি ঠাট্রা, আনন্দ আহলাদ ও নানা রসপূর্ণ বিষয়ে ভরপুর এক অনন্য আধার। এভাবে দেখা যায়, যে কোন ঘটনার আকর্ষণীয় বিবরণ ব্যক্তিকে আলোড়িত করে। কবিতা কিংবা উপকারী বই পুস্তকের নিবিড় অধ্যয়ন তার হৃদয় মনে শান্তির আবহ গড়ে তোলে। এজন্য জ্ঞানগর্ভ ও রুচিশীল বই পাঠের মাধ্যমে মানুষ মনের আনন্দ ও আত্মার তৃপ্তি লাভ করতে পারে। তবে যে সমস্ত বই পুস্তক অশ্লীল ও বাজে কথাবার্তায় ভরপুর, তা একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্যে পাঠ করা বৈধ হতে পারে না। কারণ, এত ব্যক্তির চরিত্র ও নৈতিক মান ভুলুষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা বিদ্যমান।
ইসলাম উপস্থাপিত বিনোদন ব্যবস্থা সত্যিই মানবজাতির জন্যে কল্যাণকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ। এতে মানুষের স্বভাবজাত চাহিদার প্রতি যেমন দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, তেমনিভাবে তা প্রণীত হয়েছে নৈতিকতার সীমারেখা অক্ষুন্ন রেখে। বিনোদনের প্রচলিত মাধ্যমগুলো যেখানে মানুষকে নানরকম অনৈতিক, অশালীন ও অশোভন কাজের দিকে ধাবিত করে, সেখানে ইসলামী বিনোদনমূলক উপায়গুলো মানুষকে সত্য, সুন্দর, শোভন ও মার্জিত আচার আচরণে অভ্যস্ত করে তোলে। ইসলাম মানুষের চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে নিষেধ করেনা বটে; কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, তা যেন কানো মতেই সততা ও বাস্তবতার পরিপন্থি না হয়। বিনোদন হবে মানুষের কাছে গৌণ একটি বিষয়, তা কখনো মানুষের নিকট মুখ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারবে না। মানুষ তার মৌলিক দায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ক্লান্ত শ্রান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে, তা কাটিয়ে উঠতে অবরস সময়ে বৈধতার সীমারেখা অটুট রেখে একটু আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতে পারবে। এতে তার শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকবে। এ করণেই ইসলাম সুস্থ ধারার বিনোদন ব্যবস্থাকে মুবাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। রাসূল স. ও সাহাবা কিরামের সময়কালে শালীন ও রুচিশীল বিনোদনের চর্চার প্রমাণ আমরা উল্লেখ করেছি। রাসূল স. সাহাবা কিরামের সাথে আনন্দপূর্ণ ও রসাত্মক অথচ সত্য কথা বলতেন এতে তাঁরা আনন্দবোধ করতেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ