Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেনাবাহিনীর হাতে আটক ডিবির ৭ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত

ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে টাকা আদায়

কক্সবাজার ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টেকনাফের কম্বল ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাতজনকে নগদ ১৭ লাখ টাকাসহ আটক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। এই ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় চলছে। গতকাল বুধবার ভোরে ১৭ লাখ টাকাসহ ডিবির ওই সাত সদস্যকে আটক করা হয় বলে জানাগেছে। সেনাবাহিনীর একটি সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টেকনাফে সেনাবাহিনীর হাতে আটক কক্সবাজার পুলিশের ডিবি সদস্যরা হলো এসআই আবুল কালাম আজাদ, এসআই আলাউদ্দিন ও এসআই মনিরুজ্জামান, তিনজন এএসআই এবং ২ কনস্টেবলসহ ৮ জন। সেনাবাহিনী তাদের গাড়ি থামানোর পর এসআই মনিরুজ্জামান কৌশলে পালিয়ে যান। গাড়ি থেকে জিম্মির বিনিময়ে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর বাকি ৭ জনকে সাবরাং সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়া পাড়ার আবদুল গফুরকে গত মঙ্গলবার সকালে অপহরণ করে ডিবি পুলিশের একটি দল। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। কিন্তু দর-কষাকষির পর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পাওয়ার পর তাকে ভোররাতে কক্সবাজার-টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়।
ওই ব্যবসায়ীর পরিবার বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকার লম্বরী সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে ডিবির গাড়িটি থামানো হয়। এ সময় মুনিরুজ্জামান নামের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পালিয়ে যান। গাড়িতে থাকা অন্য সাতজনকে আটক করা হয়। গাড়ি থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ভোররাতেই তাদের সাবরাং সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই এলাকায় দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজর নাজিম আহমদ বলেন, ‘জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সেনাবাহিনী ক্যাম্পে এসে আলোচনার মাধ্যমে আটক কর্মকর্তাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমাদের জানান তাঁরা। তবে উদ্ধার করা টাকা আমাদের হাতেই রয়েছে।’
আবদুল গফুরের বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদেও জানান, ‘আমার ভাইকে কক্সবাজার থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল অপহরণ করেছে। তাঁকে আটক করে আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। আমরা টাকা দেওয়ার জন্য রাজিও হই। তবে টাকা দেওয়ার বিষয়টি টেকনাফ সেনাবাহিনীকে অবহিত করেছি। পরে ভোররাত ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর লম্বরী ক্যাম্পের কিছু দূরে ১৭ লাখ টাকা দেওয়ার পর আমার ভাইকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশের দল। ডিবি পুলিশের দলটি কক্সবাজার যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর ওই ক্যাম্পে তাদের আটক করা হয়।’ পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আটক করা ডিবি সদস্যদের জেলা পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, অভিযুক্ত দু’এসআই তিন এএসআই ও দু’কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এটি জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাতের নিয়ন্ত্রণাধীন ২ নম্বর টিম। ইনচার্জকে না জানিয়ে আটককৃতরা এসব অপকর্ম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসআই আবুল কালাম আযাদ কক্সবাজার জেলায় ডিবি পুলিশে যোগ দেওয়ার পর থেকে অপকর্মের খতিয়ান অনেক লম্বা। সে জোর করে মানুষকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে, মুক্তিপণ আদায় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এই টাকায় সে অনেক গাড়ি-বাড়ি করেছে। বিষয়টি পুলিশের বিভাগীয় তদন্তসহ দুদকের নজরে আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে গ্রেফতারসহ নানাভাবে নিরীহ লোকজনকে হেনস্তা করার অভিযোগ ছিল। গতকালের এই ঘটনাটি ডিবি পুলিশের অপকর্মের বড় প্রমাণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও জেলা পুলিশের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • খাজা ময়েনউদ্দিন চিশতি ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৫৪ এএম says : 0
    সত্য ঘটনা লেখেন। দেরিতে হলেও সত্যের বিজয় আসবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Hemayetuddin Ahmed ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৬:২৭ এএম says : 0
    Bangladesh is an Independent country. This sort of news is absolutely painful. Up to what extent this kind of occurrence will be made in this country by Police & RAB administration.
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Islam ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১:২৬ পিএম says : 0
    কাদের সাহেব আপনারা যেই পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করতে চান, সেই পুলিশ তো ধরা খাইছে সেনাবাহিনীর কাছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Oaliullah ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১:২৬ পিএম says : 0
    Ora manushke onnai vabe cross fire kore, oder kothin punishment hote hobe
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmad Anam ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১:২৭ পিএম says : 0
    বরখাস্ত'ই কি সমাধান? কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিবি

২০ জানুয়ারি, ২০২৩
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ