Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে হলে প্রবেশ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাবলিক পরীক্ষায় যাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সেজন্য গতকাল (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে সচিবালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সময়ের পর কোনো পরীক্ষার্থী এলে তাকে আর হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা স্ট্রংলি বলছি, আধ ঘণ্টা আগে পৌঁছাতে হবে। না হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না- এটা যদি বলে ফেলি তবে আমরা আর ফিরতে পারব না। যেহেতু প্রথমবার, যদি ছয় মাস আগে যদি বলতে পারতাম। তাই আমরা বলছি (এবারের জেএসসি-জেডিসিতে) ঢুকতে দেওয়া হবে কি না, সেটা বিবেচনা করা হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পরে বোঝা যাবে। আগামী বছর থেকে আমরা ছয় মাস বা তিন মাস আগে থেকে প্রচার শুরু করব। আধ ঘণ্টা আগে না ঢুকলে ঢুকতে পারবে না। আগামী বছরের ১ ফেব্রæয়ারি এসএসসি পরীক্ষার সময় থেকে নিয়মটি কড়াভাবে অনুসরণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন জানান, জেএসসি-জেডিসির পর যেসব পাবলিক পরীক্ষা হবে ওইসব পরীক্ষা সূচির সঙ্গেই পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্র প্রবেশের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে তা উল্লেখ করা হবে। সভায় গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গত এক বছরে নয়টি মামলায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে এইচএসসিতে ১৮ জন, এসএসসিতে ৩৫ জন এবং অন্যরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার সময় গ্রেপ্তর হন। এসব মামলার কোনোটিরই অভিযোগপত্র হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শিগগিরই’ অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবরা ক্যামেরাবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহারের নির্দেশনাটি যথাযথভাবে মানছেন না বলে অভিযোগ করেন নাজমুল। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ এই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকেই আসে।
সভায় সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেছুর রহমান বলেন, পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্র সচিব ছাড়া কারও কাছেই মোবাইল থাকবে না- এটা নিশ্চিত করতে পারলেই প্রশ্ন ফাঁস হবে না। কারণ ফোনে ছবি তুলে তারা বাইরে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেন। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও তার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন বাইরে চলে আসে বলে দাবি করেন তিনি। এজন্য তিনি পরীক্ষার্থীদের আগে কেন্দ্রে ঢুকিয়ে তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার পরামর্শ দেন। সভায় র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর রাহাত বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে হাতে হাতে প্রশ্ন দেখা যায়। বৃষ্টি না হলেও হাতে হাতে ছাতা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক প্রশ্নের সমাধান দেখেন। পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ রেখে তিনি বলেন, ওরা হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের ওয়ান অব দ্য মিডিয়া। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআইয়ের যুগ্ম-পরিচালক শিরিন আক্তার পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। প্রশ্ন ফাঁসে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের জড়িত থাকার কথা বলেন পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্র সহজেই জামিনে বেরিয়ে বের হয়ে আবার একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন বলেও জানান সাজ্জাদ। সবার বক্তব্য শুনে সচিব সোহরাব বলেন, (প্রশ্ন ফাঁসকারীদের) যতই ধরছেন, শেষ হচ্ছে না। যত কিছুই করি এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না এটাই হল বাস্তবতা। পরীক্ষা কেন্দ্র বা উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা থাকলেও ও এখনই তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন, শতভাত নিরাপদ হলেই এটা বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ এর সঙ্গে লাখ লাখ পরিবারের ইনভলবমেন্ট, কোনো ভুল হওয়া যাবে না। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নিতে পারলে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এমসিকিউ পদ্ধতি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষকদের ব্যবহার করে হলের সব পরীক্ষার্থীকে এমসিকিউ’র পুরো নম্বর পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রশ্ন পদ্ধতি রাখার কোনো মানে নেই। পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে নাহিদ বলেন, কোচিং সেন্টারের একটি বড় বাণিজ্যের কারণ হল যেখান থেকে প্রশ্ন আউট হলে সঠিক প্রমাণিত হয় সেখানে ব্যবসাটা পরের বছর তাদের ভালো হয়। ভবিষ্যতে আমাদের যে আইন হচ্ছে তাতে কোচিং সেন্টারই থাকবে না। পরীক্ষা কী, আর অপরীক্ষা কী, কোনো সময়ই কোচিং সেন্টার থাকবে না। সেটা আমরা পাস করতে পারলে...এখন তো বন্ধ করলে কোর্টে গেলে পেয়ে যায়। নাহিদ বলেন, আমরা এবার বলে দেব পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেবল কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন। এছাড়া পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষক কোনো ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরীক্ষা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ