Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মুনফায় খুলনা শিপইয়ার্ড

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত অর্থ বছরে মুনফা প্রায় ৮০ কোটি ৪৬ কোটি টাকার আয়কর ও ভ্যাট প্রদান কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত ৪টি বোনাস
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থ বছরে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মুনফা অর্জন ছাড়াও উৎপাদন, বিক্রী ও টার্ণওভারের ক্ষেত্রে নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। নিরিক্ষত হিসেব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে প্রায় ৮০ কোটি ১২ লাখ টাকা করপূর্ব মুনফা অর্জনের পাশাপাশি ৪৩১ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন এবং ৫২৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রী করার নতুন রেকর্ড অর্জন করে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির টার্ণওভার ছিল ৫৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকার মত। গতকাল নৌ সদর দফতরে খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনা পরিষদের সভায় গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিরিক্ষত হিসেব অনুমোদন করা হয়। নৌ বাহিনী প্রধান ও খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ-ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন’এর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে সহকারী নৌ বাহিনী প্রধান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যডমিরাল এম সফিউল আজম-এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর অনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন সহ পরিষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড গত কয়েকবছর যাবত দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ করদাতা ও ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও সরকারী কোষাগারে বিপুল অর্থ জমা করছে। গত অর্থ বছরেও খুলনা শিপইয়ার্ড আয়কর বাবদ ২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং ভ্যাট বাবদ ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছে। এনিয়ে গত ৭টি অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি ৭ লাখ টাকার আয়কর প্রদান করল। পাশাপাশি একই সময়ে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে। তবে গত অর্থবছরেই প্রতিষ্ঠানটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমান ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে টার্ণওভার, পণ্য উৎপাদন ও বিক্রী সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থবছরে সাফল্যের শিখরে উপনীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জন্য ২টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের মাধ্যমে নৌ সমর সরঞ্জাম নির্মাণের ক্ষেত্রে উপ-মহাদেশে তার শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি উৎকর্ষতার ক্ষেত্রেও খুলনা শিপইয়ার্ড আরো পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোপূর্বে নৌ বাহিনীর জন্য আরো ৫টি মধ্যম মানের প্রেট্রোল ক্রাফট নির্মান করে। তারই ধারাবাহিকতায় নৌবাহিনীর জন্য দু’টি বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজ নির্মানে সফলতা অর্জন করল খুলনা শিপইয়ার্ড। আগামী ৮নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধীনায়ক এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ দেশে নির্মিত এযাবতকালের সর্ববৃহত যুদ্ধ জাহাজ দুটির আনুষ্ঠানিক কমিশনিং করবেন। এ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে নৌ বাহিনীর জন্য দুটি সাবমেরিন টাগ-এর নির্মনকাজও সম্পন্ন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড, বিআইডবিøউটিসি ও বিআইডবিøউটিএ সহ নৌ কল্যান ফাউন্ডেশনের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণ কাজও সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে।
গত অর্থ বছরে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে। এসময়কালে মোট উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ১৫৮ কোটি ১০ লাখ টাকার মত। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে ৪৩১ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়। যা ছিল প্রাক্কলনের ২৭২.৬৪%। এসময়ে নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন খাতে টার্ণওভারের প্রাক্কলিত লক্ষমাত্রা ছিল ২৩১ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে আয় হয়েছে ৫৪০ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকার মত। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৩.৪৪% বেশী। গত অর্থ বছরে খুলনা শিপইয়ার্ড তার উৎপাদিত বিভন্ন পণ্য বিক্রী থেকে আয় করেছে ৫২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত তার স্থায়ী আমনত থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকার মত মুনফা অর্জন করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি তার বিভিন্ন স্ক্রাপ বিক্রী বাবদ এসময়ে ১.৩৮ কোটি টাকারও বেশী আয় করতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৫৭ সালে স্থাপিত খুলনা শিপইয়ার্ড স্বাধীনতার পরে কিছুকাল লাভজন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালত হলেও পরবর্তিতে অব্যাহত লোকশানে তা রূগ্ন শিল্পে পরিণত হয়। একপর্যায়ে তা বিরাষ্ট্রীয়করনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও তা সম্ভব হয়নি নানা জটিলতার কারনে। পরবর্তিতে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে প্রায় পৌনে ২শ’ কোটি টাকার দায়দেনা নিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডটি বাংলাদেশ নৌবাহনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এক সময়ের এ লোকশানী প্রতিষ্ঠানটিকে। সব দায়-দেনা কাটিয়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি গত প্রায় ১৭ বছরে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা মুনফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দের নিরলশ ও আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই।
এ ব্যাপারে গতকাল খুলনা শিপইয়ার্ড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর অনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন ইনকিলাব’কে জানান, আমরা আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এ প্রতিষ্ঠানটিকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে। এখানের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ড আজ উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে বলে জানান তিনি। কমোডর আনিস জানান, আমরা ছোট মাপের যুদ্ধ জাহাজ থেকে শুরু করে আজ বড়মাপের যুদ্ধ জাহাজ নির্মানে সফলতা অর্জন করেছি। ভব্যিষ্যতে আরো উন্নত প্রযুক্তি ও রপ্তানীযোগ্য নৌযান নির্মাণে খুলনা শিপইয়ার্ড সফলতা অর্জন করবে বলেও দৃড় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, উৎপাদন, বিক্রী ও মুনফার লক্ষ অতিক্রমের ফলে খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দের জন্য দু’টি উৎসব ভাতার অতিরিক্ত আরো ৪টি বোনাস প্রদান করেছে। এছাড়াও শ্রম আইন অনুযায়ী নিট মুনফার ৫% ওয়র্কার্স পার্টিসিপেশন ও কল্যান তহবিলে প্রদান করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। এরফলে এখানের কর্মরতদের কর্মস্পৃহা আরো অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন কতৃপক্ষ। খুলনা শিপইয়ার্ড বিগত দিনে প্রায় সোয়া ৭শ’ নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আরো ২হাজার ২শ’ ৩০টির মত মাঝারী ও বড় মাপের নৌযানের মেরামত কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা শিপইয়ার্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ