Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারই রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি করেছে তাদেরই সমাধান করতে হবে : ইউএনওসিএইচএ

ডয়েটশে ভেলে | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে যখন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে তখন তাদের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের জন্য অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সোমবার জেনেভায় দাতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠক ও এ বিষয়ে বিশ^ সম্প্রদায়ের সাড়া নিয়ে ডয়েটশে ভেলে (ডি ডব্লিউ) ১৯ অক্টোবর কথা বলে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক বিষয় সমন্বয় সংক্রান্ত কার্যালয়ের (ইউএনওসিএইচএ)-এর উপ মুখপাত্র জেনস লেরকির সাথে। জেনস লেরকি বলেন, মিয়ানমারই রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং অবশ্যই মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। তবে এ জন্য দীর্ঘ সময় লাগবে।
ডি ডব্লিউঃ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের কিছু বলবেন কি?
জেনস লেরকিঃ আজ পর্যন্ত (১৯ অক্টোবর) পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে ২৫ আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ সব মানুষ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে পালিয়ে এসেছে। তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশের কক্সবাজার দিয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করছে। আজকের দিন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮২ হাজার উদ্বাস্তুকে নিবন্ধন করা হয়েছে। প্রতিদিনই আরো নতুন লোক আসছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর আগে আসা উদ্বাস্তুরাও আছে। আমরা এলাাকা ঘুরে নয়া উদ্বাস্তুদের চিহ্নিত করে তাদের নিবন্ধিত করছি। এটি হচ্ছে বিশে^র সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান উদ্বাস্তু সংকট। সুতরাং সবকিছুর উপর এটাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হচ্ছে এবং বিপুল সংখ্যক লোককে সাহায্য দিতে হচ্ছে যাদের সাহায্য্র প্রয়োজন।
বাংলাদেশে যে সব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এসেছে তারা সাথে কাপড়-চোপড় ছাড়া আর কিছু আনতে পারেনি। আমরা তাদের গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিতে দেখেছি। সেখানে তাদের উপর যে ভয়াবহ সহিংসতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তার লোমহর্ষক কাহিনী শুনেছি। উদ্বাস্তুদের অনেকেই আহত এবং তাদের কারো কারো হাড় ভেঙ্গেছে। নারীরা ধর্ষণ ও অন্যান্য ধরনের যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশে যে সব ্উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে তাদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
ডি ডিব্লিউ আপনার দৃষ্টিতে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কি পরিমাণ আন্তর্জাতিক আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন?
জেনস লেরকিঃ এ এক জটিল প্রশ্ন। কারণ এ হচ্ছে এক বেড়ে চলা সংকট। তাই এ মুহূর্তে কত ব্যয় হতে পারে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ব্যয় ও প্রয়োজন বেড়েই চলেছে। আমরা উদ্বিগ্ন যে এ সব লোক বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয় ও শিবিরে বাস করছে যা তারা নিজেরাই তৈরি করেছে। এ সব স্থানে প্রয়োজনীয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নেই।
এখানে রয়েছে যাকে বলে জরুরির মধ্যে জরুরি ঝুঁকি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় শিবিরগুলোতে কলেরার মত মহামারি ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বিদ্যমান নিরাপত্তা সমস্যার সাথে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এক্ষেত্রে এখনো তেমন কিছু ঘটতে দেখিনি, তবে তা ঘটার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
ডি ডব্লিউ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য কি করা প্রয়োজন?
জেনস লেরকিঃ ইউএনওসিএইচএ আন্তর্জাতিক বেসরকারি অংশীদারদের নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই জবাবি পরিকল্পনায় ১২ লাখ লোককে সাহায্য দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে যেখান উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ৬ লাখ সেখানে ১২ লাখ লোকের জন্য এ পরিকল্পনা কেন। এটা এ কারণে যে আমরা আশ্রয় প্রদানকারী সম্প্রদায়কেও সাহায্য করতে চাই। উদ্বাস্তুরা আসছে অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ একটি দেশে যেখানে লোকজন দরিদ্র। তাদের কাছে হঠাৎ করে অতিরিক্ত ৬ লাখ মানুষ এসে পড়ায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পদের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাদেরও আমাদের সাহায্য করা প্রয়োজন।
এ সব জবাবি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার (৩৬ কোটি ৭০ লাখ ইউরো)। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ মাস সময় সাহায্য বাবদ এ অর্থ ব্যয় হবে।
ডি ডব্লিউউঃ জবাবি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কি কি ব্যবস্থা আপনারা নিতে চান?
জেনস লেরকিঃ যেমনটি আমি বলেছি , এ সব উদ্বাস্তু শূন্য হাতে ও বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছে। তাদের বেঁচে থাকার উপকরণ চাই। তাদের খাদ্য প্রয়োজন। সে জন্য আমরা খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছি। আমরা তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সাহায্য প্রদান করছি। তাদের পানি ও স্যানিটেশন প্রয়োজন যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অপরিষ্কার পানি বিপর্যয় সৃষ্টি ও মহামারি সংঘটিত হওয়ার কারণ। এ সব লোকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য্রসেবা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক আহত। তাদের জরুরি চিকিৎসা দরকার। আমাদের একটি মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দরকার যা যে কোনো সমাজেরই প্রয়োজন। আমরা বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছি যৌন সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীর্দে যাদের মনস্তাত্তি¡ক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তাদের মনস্তাত্তি¡ক সমর্থন লাভের সুযোগ দিতে হবে।
যে সব শিশু তাদের পরিবারে সদস্যদের তাদের সামনে হত্যা করতে দেখেছে, ইউনিসেফে আমাদের বন্ধুরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ সব শিশু বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু তারা প্রায় অনুভূতিশূন্য। তারা ঠায় বসে থাকে, কথা বলে না, শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। তারা সম্পূর্ণরূপে মানসিক আঘাতগ্রস্ত। এ থেকে সুস্থ হতে হলে তাদের মনস্তাত্তি¡ক চিকিৎসা প্রয়োজন। এটা অত্যন্ত জরুরি।
ডি ডব্লিউ জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন কেমন সাড়া আপনারা প্রত্যাশা করেন? রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য জোরদার করবে বলে আমরা আশা করছি। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশাপাশি বিশে^র দেশগুলোও আশা করি রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনে এগিয়ে আসবে । বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত খুলে রেখেছে ও রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছে। তারা তাদের যা আছে রোহিঙ্গাদের দিয়েছে, আশ্রয় দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদেরও এগিয়ে আসা দরকার। সে জন্য দাতাদের সাহায্যও আমাদের প্রয়োজন।
ডি ডব্লিউ আপনি বলেছেন জবাবি পরিকল্পনা আগামী ছয় মাসের জন্য। তাহল এ সমস্যা রাজনৈতিক পর্যায়ে সমাধানে কি করা প্রয়োজন?
জেনস লেরকিঃ মানবিক সাহায্য কর্মী হিসেবে আমি আসলে রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে কথা বলতে পারি না। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অব্যাহত ভাবে আমরা যা বলে আসছি তা হল, এ সমস্যা মিয়ানমারেরই সৃষ্টি এবং মিযানমারকেই্ এর সমাধান করতে হবে। যারা এখানে পালিয়ে এসেছে তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হল জীবন রক্ষা। কিন্তু আমরা সচেতন যে ছয় মাসের পরও তাদের কথা আমাদের ভাবতে হব্।ে এটা এ কারণে যে একটা উল্লেখযোগ্য সময়ের পরও যাতে আমরা এ লোকদের সাহায্য করতে পারি। একই সাথে তারা যাতে রাখাইনে ফিরে যেতে পারে সে জন্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে যদি তারা তা চায় , যদি তারা নিরাপদে ও নিরাত্তাধনে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চায়।
তবে কখন সেটা ঘটবে তা এখন বলা আমার পক্ষে এক কথায় সম্ভব। তবে এটা হবে এক দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ