Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে চীনের সমর্থন ঘোষণা

মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর এগিয়ে আসা উচিত : শি জিনপিং

প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি উন্মুক্ত সমর্থন জানিয়ে বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমই হবে এই রাষ্ট্রের রাজধানী। আরব লিগের কার্যালয়ে বক্তব্য দানকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই ঘোষণা দেন। মিশরে আরব লিগের প্রধান কার্যালয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি’র এটি প্রথম ভাষণ। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদের জীবন-মান উন্নয়নে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থন ব্যক্ত করে চীনা প্রেসিডেন্ট দৃঢ়ভাবে বলেন, ফিলিস্তিন সঙ্কটটি আলোচনার টেবিলে অচল করে রাখার উচিত নয়। শি আরব লিগ প্রতিনিধিদের বলেন, চীন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও সমর্থন করে।
ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল শান্তি প্রক্রিয়ায় জেরুজালেম বিতর্কটি একটি প্রধান ইস্যু। ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয়ই ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এই স্থানটিকে নিজ নিজ দেশের রাজধানী করতে চায়। জাতিসংঘ মনে করে, পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিন ভূ-খ-েরই অংশ। তবে এটাও মনে করে, একদিন জেরুজালেম ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল, উভয় দেশেরই রাজধানী হবে।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় যখন জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী দাবি করে, তখন ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। এভাবে জেরুজালেম যদি একদিন দুই রাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, তাহলে পশ্চিম জেরুজালেম হবে ইসরাইলের রাজধানী।
এদিকে ইসরায়েল কাউকে এই পবিত্র শহরের ভাগ দিতে চায় না। ২০১৫ সালের মে মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল সবসময় জেরুজালেমকে তার সার্বভৌম এলাকার অংশ হিসেবেই ধরে রাখবে। ইসরায়েলের এই দাবিকে আরও পোক্ত করতে ইহুদীরা পূর্ব জেরুজালেমে তাদের বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
জেরুজালেমকে নিয়ে ফিলিস্তিনি ও ইহুদীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাত লেগেই আছে। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি ভূ-খ-ে পাথর নিক্ষেপ করে। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়, যা ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজায় ছড়িয়ে পড়ে। গত চার মাসে ফিলিস্তিনিরা ২৪ জন ইসরাইলীকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ইসরাইলী সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৪৫ জন ফিলিস্তিনি।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, মধ্যপ্রচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। এই সঙ্কট সমাধানে এটাই মূল ইস্যু। চীনা নেতা বলেন, ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত।
এর আগে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সউদি আরব সফর শুরু হওয়ার পরপরই ইয়েমেনের সউদি-সমর্থিত সরকারের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম দিন প্রেসিডেন্ট শি সউদি আরবের বাদশা সালামন বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর গত বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইয়েমেনের অখ-তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করে দেশ দু’টি। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, ইয়েমেনের সকল সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর উচিত তাদের জাতীয় সংহতি বজায় রাখা এবং সামাজিক অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলা। বিবৃতিতে বলা হয়, উভয়পক্ষ ইয়েমেনের বৈধ সরকারের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থনের কথা জানিয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের এই মধ্যপ্রাচ্য সফরে সউদি আরবের পর ইরানে যাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর চীনা প্রেসিডেন্টের মিশরে যাত্রা বিরতি করবেন।
গত বছরের প্রথমদিকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী দখল করে সউদি আরব-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদিকে গৃহবন্দি করে। পরে রাজধানী থেকে পালিয়ে দক্ষিণের বন্দর শহর এডেনে আশ্রয় নেন হাদি। কিন্তু ইয়েমেনের অধিকাংশ স্থান দখল করে হুতিরা এডেন দখলের উদ্যোগ নিলে সউদি আরবে চলে যান হাদি। প্রতিবেশী দেশ ইরানের প্রভাবে চলে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কায় শঙ্কিত সউদি আরব উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে হুতিদের ও তাদের মিত্র ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহর অনুগত সেনাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদিকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতেই হামলা শুরু করা হয়েছে বলে দাবি সউদি নেতৃত্বাধীন জোটের।
গত মার্চে সউদি জোটের বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনজুড়ে গৃহযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। অপরদিকে তেলের জন্য চীন মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরশীল হলেও এলাকাটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বিষয়গুলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অপর চার স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও রাশিয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে চীনারা। আরটি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে চীনের সমর্থন ঘোষণা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ