Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসময়ের বৃষ্টি কৃষকের উপকারী

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তবে বর্ষণ বেশিদিন চললে আবাদ-ফলনে উল্টো ক্ষতিই হবে : দুর্বল নি¤œচাপে অতিবৃষ্টিতে বর্ষাকালীন অবস্থা
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বিদায় নিলেও বর্ষণের ঘোর কাটেনি। প্রায় বছরজুড়েই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিহারে বৃষ্টিপাতেরর রেকর্ড। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণে হেমন্তের কার্তিক মাসেও গতকাল (শুক্রবার) দেশের অধিকাংশ স্থানে বর্ষাকালীন অবস্থা বিরাজ করে। অবশ্য নি¤œচাপটি দ্রæত স্থলভাগের দিকে ধাবিত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। রয়ে গেছে তার বর্ধিত প্রভাব। আজ (শনিবার) পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অসময়ে ঘন ঘন ও ভারী বৃষ্টিপাত বর্তমান শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ ও উৎপাদনের ভরা মওসুমে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে? ফল-ফসলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে একজন কৃষিবিদ জানিয়েছেন, অসময়ের এই বৃষ্টিপাত কৃষকের জন্য উপকার বয়ে আনবে। জমিতে সেচের অভাব মেটাবে। তবে বর্ষণ আরও বেশিদিন চলতে থাকলে আবাদ-ফলনে উল্টো ক্ষতিরই কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত দুই দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে শীতকালীন শাক-সবজির কোন ক্ষতি হবে না। অনেক ক্ষেত্রে তা শাক-সবজির ফলনে ভাল ভূমিকা রাখবে। তবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা যদি বেড়ে যায় এবং তা যদি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকে তাহলে শীতকালীন শাক-সবজির বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, শালগম, বেগুনসহ নানা শীতকালীন শাক-সবজির বীজতলা তৈরীর কাজ চলছে। টানা যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে বীজতলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে এখন পর্যন্ত যে হারে বৃষ্টিপাত হয়েছে বা হচ্ছে তাতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য তা ইতিবাচক হবে।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক এলাকায় উঁচু জমি, পাহাড়-টিলা বিশেষ করে চট্টগ্রামের সীতাকুÐ, হাটহাজারী, দোহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালীর উঁচু ভূমি, পাহাড়ী এলাকা ও হালদা নদীর দুই তীরে নানা ধরনের শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত এসব এলাকায় শাক-সবজির আবাদের জন্য ভাল ফল দেবে। এসময় বৃষ্টিপাত আমন ফলনের জন্যও অত্যন্ত উপকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ জমিতে এখন আমনের ফুল আসতে শুরু করেছে। এসময় বৃষ্টি হলে ফলনও ভাল হবে। তবে বৃষ্টির সাথে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বা তুফান হলে ফুল ঝড়ে যাবে। আর তাতে ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ঝড়ের কারণে আমনে পরাগায়ন ব্যাহত হবে। এতে করে ধান চিটা হয়ে যাবে। চট্টগ্রামসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অসময়ের এ বৃষ্টিপাত বেশি হলে এবং টানা চলতে থাকলে কৃষিতে বিশেষ করে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ ও ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আমন ধানের ফলনের জন্য এই অসময়ের বৃষ্টিপাত বরং উপকারই বয়ে আনবে। যদি এ মওসুমে ঝড়ের ঘনঘটা না থাকে।
এদিকে আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ু এবার আগেভাগে এবং বেশিমাত্রায় সক্রিয় থাকায় গত কয়েক মাস ধরে দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় দুর্যোগকালীন আবহাওয়া বিরাজ করে। এ কারণে সার্বিকভাবে শাক-সবজির আবাদ ও ফলন ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারে শাক-সবজির সঙ্কট চলছে। আর এ কারণে দামও আকাশছোঁয়া। অস্থির কাঁচাবাজারে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। কোন কোন সবজির দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। অথচ নিকট অতীতে এমনটা দেখা যায়নি। শাক-সবজির উৎপাদন বেশি হয় এমন সব এলাকায় আবাদ ও ফলন মার খেয়েছে। এর কারণ মূলত বন্যা, পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণ, উপকূলীয় এলাকায় লোনা পানির আগ্রাসন বৃদ্ধি। চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় শাক-সবজির জমিতে (ফাউন্দি ক্ষেতে) পাহাড়ি ঢল-বানে বালি ও মাটির স্তুপ জমে গিয়ে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ আবহাওয়া সতর্কবার্তায় জানা গেছে, উপকূলীয় উড়িষ্যা ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নি¤œচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল দুপুরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং সংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থান করছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নি¤œচাপটি খুব দ্রæত স্থলভাগের দিকে চলে আসে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরী অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নি¤œচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে স্থল নি¤œচাপের কারণে আজ শনিবার পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঢাকায় ৯৫ গোপালগঞ্জে ১৪৩ মিমি বৃষ্টিপাত
গতকাল সারাদেশে বর্ষা ঋতুর মতোই বর্ষণ হয়েছে। অধিকাংশ স্থানে ভারী থেকে অতিভারী, কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের (পরে স্থল নি¤œচাপ আকারে দুর্বলতর হচ্ছে) সক্রিয় প্রভাবে আবহাওয়া পাল্টে যায়। সাগরও রয়েছে উত্তাল। অব্যাহত বর্ষণে গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের অবসান হয় তাপমাত্রা হ্রাসে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে ১৪৩ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯৫ মিমি। তাছাড়া চট্টগ্রামে ২০ মিমি, হাতিয়ায় ১১৩ মিমি, চাঁদপুরে ৮৬ মিমি, কক্সবাজারে ৩৮ মিমি, ময়মনসিংহে ৪০ মিমি, সিলেটে ২১ মিমি, রাজশাহীতে ৪৭ মিমি, রংপুরে ১৫ মিমি, খুলনায় ১১১ মিমি, বরিশালে ১০৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অকালে অতি বর্ষণে বিভিন্ন এলাকা হঠাৎ প্লাবিত হয়। আবার অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে তলিয়ে যায় উপকূলীয় নি¤œাঞ্চলসমূহ। ঢাকায় তাপমাপক পারদ নেমে আসে সর্বোচ্চ ২৫.২ এবং সর্বনি¤œ ২৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এদিকে আজ (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমে আসতে পারে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।



 

Show all comments
  • Hossain Sazzad ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৪২ পিএম says : 0
    বাতাসে ধান গাছ পড়ে গেছে, কি যে হবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ