Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসময়ের বৃষ্টি : ভোগান্তিতে নগরবাসী

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 সায়ীদ আবদুল মালিক : বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার দুই মাস পরেও রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাবে অসময়ে এ বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলসহ ছোট-বড় সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতার। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে কোন কোন এলাকায় কাদা-পানি মিলে একাকার হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তির। সকাল থেকেই নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হলেও মানুষ নানা প্রয়োজনে রাস্তায় নেমেই পড়েছে দুর্ভোগে। কোথায়ও যানজট আবার কোথায়ও যানবাহনের সঙ্কট। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে কোথায়ও হাঁটু পানি আবার কোথায়ও কাদা-পানি মিলে একাকার অবস্থা।

বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার থেকে থেমে থেমে চলা এই বৃষ্টি আজ শনিবার পর্যন্ত ঝরবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে রোববার বৃষ্টি কমে আসবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সব সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে জানান, নিম্নচাপের কারণে আজ ও আগামীকাল (গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার) সারাদেশে বৃষ্টি থাকবে। আর সন্ধ্যার পর থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। তবে আজ (গতকাল) মধ্যরাত থেকে আবারো টানা বৃষ্টি হবে। শনিবার (আজ) সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত সারাদেশে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আবার কোন কোন এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়। ডিএনডি বাঁধ এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওই এলাকার মানুষকে। পুরান ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবচেয়ে অপ্রতুল। হালকা বৃষ্টি হলেই ড্রেন ভরে রাস্তায় জমে যায় পানি। ফলে দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা পানিতেই চলতে হয়ে পুরান ঢাকাবাসীকে। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকারও। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্যও খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে যায়। রাস্তার এসব গর্তে যানবাহন পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদেশের প্রকৃতিতে হেমন্ত মানেই গাঁয়ের মেঠো পথে ভোরের হালকা কুয়াশা আবার কোথাও কোথায় রাতের বেলায় শীতের প্রকোপও বাড়ে। খাল, বিল, নদীতে নিরুত্তাপ ঢেউ। কাশবনে মৃদু বাতাস। বাতাসের তালে কাশফুলের দোল। ঝকঝকে কাঁচের মতো স্বচ্ছ নীলাকাশ। শরতের আকাশে গ্রীষ্ম ও বর্ষার মত গগণবিদারী তর্জন-গর্জন নেই। হেমন্ত বড় নিবিড়, কোমল, মায়াবি। কিন্তু গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সঙ্কিত নগরবাসী। রিকশায় হুট তুলে, পলিথিন মুড়ি দিয়ে অথবা বৃষ্টিতে কাঁক ভেজা হয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে যাত্রীরা।
দুই মাস আগেই বর্ষার শেষ হলেও গতকালের দিনভর হালকা বৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যেন আবারও বর্ষা ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার পর থেকেই রাজধানীতে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় তা অব্যাহত ছিল। কোথাও থেমে থেমে, আবার কোথাও অবিরত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
গতকাল সকালে খিলগাঁও রেলগেট গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি ছুটির কারণে সড়কে তেমন কোনও যানবাহন ছিল না। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা, লেগুনা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও কিছু গণপরিবহন ছিল। এসব পরিবহনেও যাত্রীদের উপস্থিতি কম ছিল। পল্টনের একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলেও ভালোই লাগছে। কারণ রাস্তায় যানজট নেই। রিকশায় করে ফাঁকা রাস্তায় অফিসে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। যখন বৃষ্টির সঙ্গে পানিজট এবং যানজট দেখা দেয় তখনই ভোগান্তি মনে হয়।
দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে ফাঁকা রাস্তায় দ্রæতগতিতে গাড়ি চলাচল করছে। কোথাও তেমন কোনও ট্রাফিক সিগন্যালের কবলে পড়তে হচ্ছে না যানবাহনগুলোকে। মিরপুর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি মানববন্ধনে যোগ দিতে এসেছেন রাজিব হোসেন। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম বৃষ্টির কারণে একটু জ্যাম হবে। তাই কিছু সময় হাতে রেখেই বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু মাত্র ২৫ মিনিটেই মিরপুর ১২ নম্বর থেকে প্রেসক্লাবে চলে এসেছি। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চলছে, ভালোই লেগেছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে সে পানি নামতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ি, সূত্রাপুর, রামপুরা, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, ওয়ারী, ল²ীবাজার, রায়সাহেব বাজার, লালবাগ এলাকার নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পানি থৈ-থৈ করছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ অফিসের সামনের খিলগাঁও, তিঁলপাপাড়া সড়কটি বৃষ্টিতে কাদা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। একই অবস্থা রাজধানীর ফকিরাপুল, আরামবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, আগারগাঁও, মিরপুর, গুলশানসহ পুরো নগরী। এসব এলাকায় ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর। যে কারণে বৃষ্টির পানি জমে থাকলেও তড়িৎ গতিতে সরে যাওয়ার কোন পথ নেই। তাই দিনের পর দিন হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওই এলাকার মানুষকে।
কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। পানিবদ্ধাতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
অল্প বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা। নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন দিন মানুষকে নানা প্রয়োজনে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, গত দুইদিন ধরে রাজধানীতে গুঁটি গুঁটি বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে পানি সহজেই নেমে যাতে পারছে। কোথাও পানিজটের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পরিদর্শকরা মাঠে আছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ