পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর জালে ১১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এরা সবাই রাজধানীর ৯টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা (স্কুল-কলেজ) প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তারা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দুদকের অনুসন্ধানে এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের এমনই একটি তালিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছে বিশেষ অনুসন্ধান কমিটি। সবচেয়ে বেশি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের। ইতোমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে কাজও শুরু করেছে কমিশন। জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রেখে কোচিং বন্ধে আইন প্রণয়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা নয়। কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। দুদক এ সংক্রান্ত নীতিমালার নথি চেয়ে আবেদন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর। এরপর কার্যকরী ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিন ইনকিলাবকে বলেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে আমরা কাজ করছি। প্রকৃতপক্ষে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কোচিং এর শিক্ষকরা এবং হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা নেন। কিন্তু তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন না। তারা অধিকাংশ সময় তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে এবং কোচিং সেন্টারে সময় দেন। সরকারি চাকরির টাকা তো আসবে বাড়তি আয় করতে পারেন তাই তারা এ কাজ করেন। এটা এক ধরনের দুর্নীতি। তিনি আরো বলেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে কাজ করবে মূলত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আমরা কি করতে পারি? দুদক সচিব বলেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কঠোর আইন করা যায় কিনা এটাও নিয়ে ভাবা উচিত। তবে আমি মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু নথি চেয়েছি। তাদের রেগুলেশনে কি আছে দেখব। এরপর কি ব্যবস্থা নেয়া যায় দেখব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ও দুদকের কৌশলী খুরশেদ আলম খান ইনকিলাবকে বলেন, আমি যতটুকু জানি বর্তমানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে কোন আইন নাই। এখন আর নীতিমালা দিয়ে কাজ হচ্ছে না। বর্তমানে কোচিং এত পরিমাণ বেড়েছে যে কোনভাবে এটা বন্ধ হচ্ছে না। সরকারের উচিত দ্রুত এ নিয়ে আইন প্রণয়ন করা। একই সঙ্গে ওই আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দুদক কাজ করছে। তবে দুদকে যে সীমাবদ্ধতা আছে সে অনুযায়ী কাজ করছে। প্রতিবেদন দেখে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারে দুদক।
এর আগে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, যারা সরকারি শিক্ষক এবং যারা এমপিওভুক্ত, তারা ক্লাসে শিক্ষাদান করবেন এটাই নিয়ম। সরকারি অনুমোদন ছাড়া এর বাইরে যদি তারা কিছু (কোচিং) করেন, সেটা আমরা দুর্নীতির মধ্যেই ফেলবো। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুুদক সূত্রে জানা যায়, বর্তমান চেয়াম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর রাজধানীর ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। এর কিছুদিন পর কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে কিছুসংখ্যক কোচিং সেন্টারের নাম, সেখানকার শিক্ষক, শিক্ষকদের স্কুল বা কলেজ, আয়-ব্যয়, নামে-বেনামে সম্পদ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের নাম ও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম সংগ্রহ করে। এরপর ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টিম গঠন করে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আবদুল ওয়াদুদ, মনিরুল ইসলাম, ফজলুল বারী ও উপ-সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। এছাড়্ওা কোচিং নিয়ে অনুসন্ধানের দুদকের নজরদারিতে রয়েছে মহানগরীর ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গত মঙ্গলবার জড়িত শিক্ষকদের তালিকাসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর ৯টি শিক্ষা প্রতষ্ঠানের মধ্যে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার ৩২ জন ও বনশ্রী শাখার ৪ জনসহ মোট ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ জন, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১৪, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ জন ও রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৫ জন শিক্ষকসহ মোট ১১১ জন শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে দুদক।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ ইংরেজি, গণিত ও রসায়নের শিক্ষক। এদের মধ্যে কয়েকজন আছেন সাধারণ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ বিষয়াবলী শিক্ষকও রয়েছেন। এতে দেখা যায় কোচিং এর সঙ্গে জড়িত সব চেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।
প্রতিবেদনে সুপারিশসমূহ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না হলেও কোচিংয়ে যুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা হলেও কোন আইন হয়নি। সুনির্দিষ্ট আইনের আলোকে শাস্তির বিধান না রাখলে চূড়ান্তভাবে কোচিং বন্ধ করা কঠিন। ফলে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রেখে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা যেতে পারে। ২০১২ সালের ২০ জুন মাসে কোচিং বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং অথবা প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে চূড়ান্ত বরখাস্ত, এমপিওভুক্ত শিক্ষক হলে এমপিও স্থাগিত, বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। প্রশ্ন ফাঁস ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে কয়েকবার আলোচনা আসলেও পরবর্তীতে আইন প্রণয়নের কথা বলেন শিক্ষাবিদরা ও আইনজ্ঞনা। তবে এখন পর্যন্ত আইন্ প্রণয়ন করতে পারেনি সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।