Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমার জেনারেলদের সম্পদ জব্দের আহ্বান

রাখাইনের নতুন ছবি প্রকাশ এইচআরডব্লিউ’র

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বেশি সঙ্কটে আছে রোহিঙ্গারা -লেসি সুইং
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর অংশের ২৮৮ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার প্রমাণ দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এসব গ্রামে ২৫ আগস্টের আগে বসতভিটা ছিল, ছিল সাজানো-গোছানো সংসার; যার সবই এখন অতীত। গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্র বিবৃতিতে পাঠিয়ে এইচআরডব্লিউ এ প্রমাণ দিয়েছে। এর আগে মধ্য সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইনে রোহিঙ্গা-গ্রামগুলোতে সহিংসতার স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে। সেখানেও ফুটে ওঠে ধ্বংস। নতুন করে তুলে ধরা চিত্রে এইচআরডব্লিউ বলছে, রাখাইনে অব্যাহত অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, গণধর্ষণের জেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়েছে। যৌক্তিক কারণেই তারা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তারা এও বলছে, সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে’ ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এইচআরডবিøউ’র ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, এই চিত্রই প্রমাণ করে কেন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে স্রোতের মতো অন্যদেশে ঢুকেছে। বার্মিজ সেনারা গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী নানা কর্মকান্ড চালিয়েছে, এতে মানুষ আসতে বাধ্য হয়েছে। তারা তুলে ধরেছে নতুন করে রাখাইনে অগ্নিসংযোগের তথ্যও। ৫ সেপ্টেম্বরের পর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নতুন করে আগুন দিয়ে মানুষ তাড়ানো হয়েছে, বলছে সংস্থাটি।
এইচআরডব্লিউ বলছে, এ অবস্থায় জাতিসংঘের ম্যান্ডেট আছে এমন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে সেখানে নির্যাতন তদন্তের সুবিধা দিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর। পাশাপাশি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের। এর আওতায় থাকবে সামরিক সহযোগিতা বন্ধ ও সেনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করা। ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য দায়ী মিয়ানমারের কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মংডু, রাথেডাং ও বুথিডাংয়ে মোট ৮৬৬টি গ্রামে মনিটরিং করা হয়েছে এবং সেখান থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মংডু।
ইতঃপূর্বে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেছিলেন, স্যাটেলাইটের পাওয়া ছবি, ভিডিও অকাট্য প্রমাণ। সেখানে জাতিগত নিধন চালিয়ে পুরো অঞ্চল রোহিঙ্গামুক্ত করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্যাতিত এ জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরানোর পরিবেশ তৈরির কার্যক্রম জোরদার করতে বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় ইউএনএইচসিআর, মানবতাবিষয়ক কাজে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী কার্যালয় (ওসিএইচএ) এবং আইওমের যুক্ত বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সমস্যা নিয়ে আগামী সোমবার (২৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই তিন সংস্থার আয়োজনে হতে যাচ্ছে ‘প্লেজিং কনফারেন্স’। যার উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কুয়েত সরকার। আইওএম বলছে, সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে সংখ্যাটা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে না বলে নতুন আপডেট পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, এর জেরে অভিযানের নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্ব›েদ্বর জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সূত্র : এইচআরডবিøউ ওয়েবসাইট।
বেশি সঙ্কটে আছে রোহিঙ্গারা : লেসি সুইং
রোহিঙ্গারা সুদান ও ইয়েমেনের শরণার্থীদের চেয়েও বেশি সঙ্কটে আছে আর তাদের জন্য আরো বেশি অর্থ সহায়তা দরকার বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব মাইগ্রেশন আইওএম। গতকাল দুপুরে কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করে এ কথা বলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে যত শরণার্থী আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে আছে রোহিঙ্গারা। তাদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন তিনি। আগামী সোমবার বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তার বিষয়টি আইওএম তুলে ধরবে বলে জানান তিনি। এর আগে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ করেন মাইগ্রেশন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম এর মহাপরিচালক।



 

Show all comments
  • তানিয়া ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৩৩ এএম says : 0
    বিশ্বের সব মানুষ কী অন্ধ হয়ে গেছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shabbir ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ২:২৭ পিএম says : 0
    অাধু‌নিক এই সভ্য সমা‌জে বরবর মায়ানমার‌দের থামা‌নোর কি কোন উপায় নেই , নেই শিক্কা দেওয়ার কোন ঐক্য বদ্ধ শ‌ক্তি !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ