Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থকরা নড়েচড়ে বসছেন

ইসির সঙ্গে সংলাপ ও খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপ ও বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে অনেকটা আকস্মিকভাবেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকরা নড়েচড়ে বসেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চোখেমুখে আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা উচ্ছাসের ছাপ। সবার মধ্যেই একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে এবার আর বর্জন নয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে। চারিদিকে নির্বাচনী আবহও বিরাজ করছে। অবশ্য বোদ্ধা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সামগ্রিক ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। তাদের মতে, আবেগতাড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপের পর বাস্তব অবস্থাটা বিশ্লেষণের পরই বক্তব্য দেওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে কি অবস্থা দাঁড়ায় সেটি দেখার বিষয়। সবদিক দিয়েই নির্বাচনী সুবাতাস বইছে এটি জোর দিয়ে বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপের পর বক্তব্য দিয়েছেন, সংলাপ যেন প্রহসনে পরিণত না হয়। অবশ্য বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের যেসব নেতা ও কর্মীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, সৌহার্দ্যপুর্ণ পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে ইসির সঙ্গে সংলাপকে আমরা সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তাছাড়া নেতৃবৃন্দকে যথাযথ মূল্যায়নও করা হয়েছে বলে মনে করছি। এটি বলা যায়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমের ১০ জেলার ৩৬টি সংসদীয় আসন এলাকায় বর্তমানে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেএসডিসহ সকল রাজনৈতিক দল ভোটের লড়াইয়ের প্রস্ততি নিচ্ছে বেশ জোরেশোরে। সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডও নির্বাচনকেন্দ্রিক।
বিএনপিবিএনপি জোটের একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবকিছুই চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সংলাপের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। ইসির সামগ্রিক বিষয়ে সরল অভিব্যক্তি হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে সংলাপে বিএনপিকে অতিমাত্রায় খুশী করার বিষয় ‘বিশ্বাস ও আস্থা’ সৃষ্টির কৌশল মনে করছেন। বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও শরীক দলের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হয়। অনেকেই সরাসরি মন্তব্য করেছেন, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সেজন্য নেতা ও কর্মীদের নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছি। তৃণমূলের প্রায় সব রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী মনে করেন নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। তাদের অনেকেরই মতে, নির্বাচনী পরিবেশ তাদের অনুকুলে। এর সঙ্গে অনেকে আবার দ্বিমত পোষণ না করেই সাপ্লিমেন্ট বক্তব্য দিয়েছেন যে, শুধু আবেগতাড়িত হয়ে নয়, সত্যিকারর্থে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। যাতে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া যায়। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে অনেক অনেক কৌশলী ও শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে ইসির সংলাপের পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আরো অনেক বিষয় পরিস্কার হবে বলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, এখন জনমত গঠণ ও মানুষকে জাগানোর কাজটি করতে হবে। খুলনা বিভাগীয়সহ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ার কয়েকজন নেতা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইসির সঙ্গে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী ও ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনাকে সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এর পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবর যুক্ত হওয়ায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন, শরীক এবং সমমনা দলগুলোর নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা মনে করছেন, যেহেতু একটা নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হচ্ছে এখন নতুন করে বিএনপিসহ জোটের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা, মামলা, প্রশাসনিক হয়রানী, জেল-জুলুম হুলিয়ার মুখোমুখি হতে হবে না।
একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা বললেন, এতদিন যারা কার্যত নিজেদের গুটিয়ে রাখছিলেন। তারা নির্বাচনী আবহে অনেকটাই সোচ্চার। সংশ্লিষ্টরা দলীয় রাজনীতির মন্দা কাটাতে সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করার প্রস্ততি নিচ্ছে। হতাশায় নেতা ও কর্মীদের ভেঙ্গে পড়া মনোবল চাঙ্গা এবং দল পুনর্গঠন করে ঘর গোছাতে বিএনপি এখন বেশ তৎপর। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিএনপির দলীয় একাধিক সুত্রমতে, সাংগঠনিক কর্মকান্ডে লাগামছাড়া ফাঁকি, নানা দুর্বলতা, নেতা-কর্মীরা দৌড়ের ওপর থাকার কারণে গোটা অঞ্চলে সাংগঠণিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। এর জন্য নির্বাচনই হচ্ছে মোক্ষম সুযোগ। একাধিক সুত্র জানায়, দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী কিংবা পরীক্ষিত নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মূল্যায়ন করার প্রয়োজনবোধটা ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা ইতিপুর্বে অনুপস্থিত ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। বিএনপির নেতৃস্থানীয় কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার বক্তব্য, নির্বাচনের ব্যাপারে হাইকমান্ড থেকে মাঠপর্যায়ে দিকনির্দেশনামূলক পরিস্কার একটা ম্যাসেজ পাওয়ার অপেক্ষা করছেন নেতা, কর্মী ও সমর্থক এবং শরীক জোট।



 

Show all comments
  • রূপম ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:১১ এএম says : 0
    নড়েচড়ে বসলে হবে না সকল ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার মানষিকতা তৈরি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ