হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কোনো একটি কাহিনীতে বলা হয়েছে, ‘আমি কমলিকে ছাড়তে চাইলে কী হবে, কমলি যে আমাকে ছাড়ে না’। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দিকে তাকিয়ে দেখুন। ছোটকালে শুনতাম, রাজরোষে পড়লে পালিয়েও নাকি বাঁচা যায় না। তত্ত¡গতভাবে বা সাংবিধানিকভাবে এখনও তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদের টাইটেল দেওয়া হয়েছে ‘অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ’। সংবিধানের কোথাও ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি’ বলে কোনো শব্দ নেই, কোনো ব্যবস্থাও নেই। বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা কর্মে প্রবীণ। তাই সংবিধান মোতাবেক তিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি। কিন্তু তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলা হচ্ছে কেন? ভাবে সপ্তমীতে অনেক কিছুই বোঝা যায়। আমি তো বেশ কয়েক দিন থেকেই বলে আসছি যে, প্রধান বিচারপতি হিসেবে সিনহা বাবুর আয়ু শেষ। ৩ জুলাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের ৭ জন বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন তার কয়েকদিন পর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে পরোক্ষভাবে তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল যে, সেপ্টেম্বরের পর তাকে তারা প্রধান বিচারপতির গদিতে আর দেখতে চান না। এখন পর্যন্ত যা ঘটে যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, আসলেই সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবর থেকে এস কে সিনহা আর প্রধান বিচারপতির গদিতে বসতে পারছেন না। ২ অক্টোবর তিনি কোর্টে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটি তার লম্বা ছুটির দরখাস্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে। তারপর তিনি আর ফিরতে পারেননি। তিনি আর ফিরতে পারবেন বলে আমি মনে করি না। সেজন্যই গত মঙ্গলবারের কলামে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটি নিয়ে ভাবতে থাকুন।
আমার-আপনার মত চুনোপুঁটিদের আর ভাবতে হলো না। আমাদের ভাবনার দায়িত্ব সরকারের রাঘব বোয়ালরাই নিয়েছেন। গত ১৪ অক্টোবর শনিবার এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সিনহা বাবুর পক্ষে প্রধান বিচারপতির আসনে ফিরে আসার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তার পক্ষে আর প্রধান বিচারপতি হিসেবে ফিরে আসা সম্ভব নয়। ফিরে যে তিনি আসছেন না সেটা তো ১৫ অক্টোবর রবিবার সুপ্রিম কোর্টের একটি বিরাট রদবদল থেকেই বোঝা গেলো। সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনের খোল নলিচা ঐ দিন অর্থাৎ রবিবার বদলে ফেলা হয়েছে। ১০ জন সিনিয়র অফিসারকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশ যাওয়ার দু’দিন পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামকে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিশেষ জজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. যাবিদ হোসেনকে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজকে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মো. আনিসুর রহমানকে পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার এ ই এম ইসমাইল হোসেনকে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়েছে। হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) আজিজুল হককে ঠাকুরগাঁওয়ের যুগ্ম জেলা জজ ও দায়রা জজ, ফারজানা ইয়াসমিনকে পিরোজপুরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদারকে চুয়াডাঙ্গার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার সাথে তার খাস কামরায় বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ওই বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিছু অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ চেঞ্জ (প্রশাসনিক পরিবর্তন) করতে চান, সেগুলো উনি আমাকে অবহিত করেছেন।
\দুই\
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ১১ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সাথে তার খাস কামরায় বৈঠক করেন। এই বৈঠকটি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠকেরই ফল হলো সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপক রদবদল। মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী এবং বিচার বিভাগ স্বাধীন, সংবিধানের এই মৌলিক কাঠামো মোতাবেক এই ব্যাপক রদবদল হওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক। চিফ জাস্টিস সিনহা বিদেশ যাওয়ার আগে বলে গেছেন যে, সরকার অস্থায়ী প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটাচ্ছেন। এটি সরকার পারেন না। অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির কাজ হলো দৈনন্দিন রুটিন কর্ম সম্পাদন করা, মৌলিক কাজে হাত দেওয়া নয়। এসকে সিনহার কথা রাখা হলো না। কে রাখলেন না, সেটি আমরা জানি না। অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি? নাকি সরকার? সময় মত ঠিকই সেটি বেরিয়ে যাবে।
গত শুক্রবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই অবিশ্বাস্য দ্রæত গতিতে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটছে। কারণ তার যাওয়ার পরদিন অর্থাৎ শনিবার জানা গেল যে, তার বিরুদ্ধে নাকি দুর্নীতি এবং নৈতিক স্খলন সংক্রান্ত ১১টি অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির হাতে এসেছে। এসব অভিযোগ পাওয়ার পর ঐ ৫ বিচারপতি নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা আর এস কে সিনহার সাথে এক বেঞ্চে বিচার কাজে বসবেন না। সরকারি বর্ণনা মতে, এটিই নাকি এস কে সিনহার লম্বা ছুটিতে যাওয়ার মূল কারণ।
এই ১১ দফা অভিযোগ আসার পর রাজনৈতিক মহলে প্রবল গুঞ্জরণ শুরু হয়েছে। প্রথমেই যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হচ্ছে সেটি হলো, যতক্ষণ সিনহা বাবু দেশে ছিলেন ততদিন কেন এসব অভিযোগ প্রকাশ করা হলো না? তিনি দেশে থাকাকালীন এসব অভিযোগ প্রকাশ করলে তো তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এগুলোর একটা জবাব দিতে পারতেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, এসব অভিযোগ কোথা থেকে উৎসারিত হয়েছে? এর উৎপত্তি কোথায়? কবে এর উৎপত্তি? ৫ বিচারপতির হাতে এগুলো কীভাবে এলো? এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের একটি অফিসিয়াল বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। রবিবারের পত্রপত্রিকায় এ সম্পর্কে একটি অফিসিয়াল ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। ঐ ভাষ্যে দেখা যায় যে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৪ জন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি ইমান আলী তখন বিদেশে ছিলেন। তাই তিনি ঐ বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তো তার হেয়ার রোডের অফিসিয়াল বাস ভবনেই ছিলেন। তাকে কেন ডাকা হলো না? তাকে বাদ দিয়ে তার অধস্তন ৪ বিচারপতির সাথে প্রেসিডেন্ট বৈঠক করলেন। এটি শুনতে কেমন লাগে। ঐ বৈঠকেই প্রেসিডেন্ট এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ সংবলিত একটি পেপার বিচারপতিদের হাতে দেন। পরদিন অর্থাৎ ১ অক্টোবর বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান এবং বলেন যে, এসব অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা সিনহা বাবুর সাথে এক বেঞ্চে বসে বিচার কাজ চালাবেন না। এসব কথা মানুষ ঐ ৫ বিচারপতির মুখ থেকে শোনেননি, শুনেছেন অফিসিয়াল ভাষ্য হিসেবে। বিচারপতিদের এই অবস্থান দেখে নাকি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
\তিন\
এখানে এসে পড়ে দুটি কথা। ১৫ অক্টোবর রবিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন যে, দুদক এই ১১ দফা অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধান রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যাদের সামান্যতম জ্ঞান রয়েছে তারা জানেন যে, আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হন ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে দোষী বা অপরাধী বলা যাবে না। বড় জোর তিনি হবেন অভিযুক্ত। অভিযোগ থেকে তিনি যদি খালাস পান তাহলে কোনো কথা নেই। দ্বিতীয়ত অনুসন্ধান হলো বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। অনুসন্ধানে অভিযোগগুলি যদি প্রাথমিকভাবে (প্রাইমা ফ্যাসি) প্রতিষ্ঠিত বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে তদন্ত কমিটি গঠিত হবে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দেওয়া হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। আমি তদন্তের বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছি না। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তদন্ত করবে নাকি অন্য কেউ করবে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি। এখানে অনেক প্রশাসনিক এবং আইনগত জটিলতা রয়েছে। যাই হোক, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং এক সময় বিচারের ফলাফল জানা যাবে।
প্রশ্ন হলো, দুদক এখনো অনুসন্ধান শুরুই করেনি। এই সামগ্রিক বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করতে কম করে হলেও এক বছর লাগবে। তার আগেই এস কে সিনহা পরোক্ষভাবে অগ্রিম শাস্তি পান কীভাবে? এ তো দেখছি বিচারের আগেই রায়।
\চার\
বাংলাদেশের টেলিভিশন এবং পত্র পত্রিকায় ১১ দফা অভিযোগ সম্পর্কে সর্বপ্রথম খবর বের হয় ১৪ অক্টোবর শনিবার। কিন্তু একই খবর এবং একই অভিযোগ ‘দৈনিক জনকণ্ঠে’ ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় কীভাবে? জনৈক স্বদেশ রায় নিজ নামে জনকণ্ঠে একটি কলাম লিখেছেন। সেখানে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১১ দফার সারাংশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরো কিছু খবর দেওয়া হয়েছে, যেগুলোকে বলা যেতে পারে ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন। সরকারি মহল থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে লিক আউট না করলে এই ধরনের ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন বের হতে পারে না। এসব দেখে কেউ যদি মনে করেন যে, ওপর তলায় এবং মাঝের তলায় একটি যোগসূত্র রয়েছে তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না।
যে ব্যক্তি এখনো প্রধান বিচারপতি রয়েছেন সেই ব্যক্তির লিখিত বক্তব্যকে তারই অধস্তন অফিসার অর্থাৎ রেজিস্ট্রার বিভ্রান্তিমূলক বলেন কীভাবে? তবে রেজিস্ট্রারের এই প্রেস রিলিজের পর ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়নি। স্বয়ং রেজিস্ট্রারই বদলির খড়গের তলে পড়েছেন।
আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। এরা ৫ জনই ষোড়শ সংশোধনী সর্ব সম্মতভাবে বাতিল করেছেন। এজন্য দেশবাসী তাদের ধন্য ধন্য করছেন। তাদের ওপর আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তাদের নিকট থেকে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে জানতে চাই যে, আপনারা বিচারের রায়, বিচারের তদন্ত, বিচারের শুনানী এমনকি অভিযোগের ইনভেস্টিগেশন বা অনুসন্ধানের পূর্বেই দু’দিন আগে যিনি আপনাদের চিফ জাস্টিস ছিলেন তাকে বর্জন করলেন কীভাবে? আপনাদের এই কাজ সঠিক না বেঠিক হয়েছে সেই প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস আমাদের নেই। শুধু জানতে ইচ্ছে করে যে, যদি আদতেই সিনহা বাবুর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ বিচার হয় এবং বিচারে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
শেষ করছি ভারতের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফের’ একটি নিবন্ধের অংশ বিশেষের উদ্ধৃতি দিয়ে। নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে ১৫ অক্টোবর রবিবার। নিবন্ধটির শিরোনাম, ‘সুপ্রিম ডিভাইড ইন ঢাকা’। নিবন্ধের এক স্থানে বলা হয়েছে, স¤প্রতি এক দশকের জন্য পাকিস্তানে সরকারি দায়িত্ব থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে নিষিদ্ধ করে একটি রায় দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন। নিবন্ধের অন্যত্র বলা হয়, ৪৬ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে এবারই প্রথম একজন প্রধান বিচারপতি, যাকে বলা হয় সংবিধানের অভিভাবক, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতি প্রকাশ করলো।
ডেইলি টেলিগ্রাফের ঐ রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সেই রায় দিয়েছেন এমন একটি বেঞ্চ, যার প্রধান ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের অযোগ্যতা ও অসদাচরণের অভিযোগে তাকে বা তাদের অপসারণে পার্লামেন্টকে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এ জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। সেই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছিল ওই বেঞ্চ।
তারপর থেকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের তরফ থেকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রধান বিচারপতি সিনহাকে। নেতাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে ওই রায়কে কেন্দ্র করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি তার রায়ে পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নওয়াজ শরীফকে বরখাস্তের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। এটাই আগুনে ঘি ঢেলেছে। এর ধারাবাহিকতায় এস কে সিনহাকে ৩রা সেপ্টেম্বর থেকে ছুটিতে যেতে হয়েছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়, যে দেশ সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছে, দেখেছে রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ, সামরিক শাসন, সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও বেসামরিক শাসক গোষ্ঠী- সেই দেশটির জনমত এখন প্রধান বিচারপতি সিনহাকে নিয়ে বিভক্ত।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।