Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউপি’র নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় গ্রাম্য রাজনীতি চরম উত্তপ্ত

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক, খুলনা থেকে : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রাম্য রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে খুলনায়। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে হামলা-পাল্টা হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, হুমকি-ধমকি ও বিরোধী পক্ষকে প্রচারণায় বাঁধাÑএ সবই এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ। অভিযোগ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের অভাবে এ ধরনের সহিংস ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী ২২ মার্চ জেলার ৬৭টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল রয়েছে অনেকটা এগিয়ে। কোন কোন ইউনিয়নে নৌকার প্রতীক পেয়েও বিদ্রোহীদের কারনে অনেকটা বিরোধী ভূমিকায় রয়েছেন কোন কোন সরকার দলীয় প্রার্থী।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার পুরনো দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে চলে আসে। তৃণমুল দখল থাকায় অধিকাংশ ইউনিয়নে জেলার এক শীর্ষনেতারপন্থীরা নৌকা প্রতীক পায়। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যান অপর শীর্ষ নেতার অনুসারীরা। অপরদিকে প্রার্থী নির্ধারনে তৃণমুলের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়ায় যোগ্যরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, এমন অভিযোগে বিএনপিতেও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রার্থী হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে অশান্ত ওঠে খুলনা জেলার জনপদ।
প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে আয়োজিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ঘটছে সংঘাত-সহিংসতা। প্রথম ধাপের ইউপি ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সংঘাত-সহিংসতা ততই বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে নির্বাচনী এলাকায় পনেরটির বেশি সশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সহিংসতার শিকার হয়েছেন
বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। কোন কোন এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় মূল প্রার্থী রয়েছেন কোনঠাসা অবস্থায়। জেলার তেরখাদার দু’টি ইউনিয়নে এমনটি দেখা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ৪৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। বিএনপিতে রয়েছেন আরো ১১ বিদ্রোহী প্রার্থী। এতোদিন যারা (দলীয় নেতা-কর্মী)একত্রে মিছিল-সমাবেশ করেছেন এখন বিদ্রোহী হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে শত্রুতা। গত ৬ ফেব্ররুয়ারি সকালে কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলামের সমর্থক মোঃ মতিউর রহমানকে পিটিয়ে আহত করে একই দলের মূল চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন। এসময় তার মটরসাইকেল ভাংচুর ও ৩৫হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ৭ মার্চ রাতে খুলনার আউটার বাইপাশে মোস্তর মোড়ে গুটুদিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর আগে ৫ মার্চ রাতে বটিয়াঘাটার ৬নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসান ও তার সহযোগী মিরাজুল তরফদারকে কুপিয়ে জখম করা হয়। উপজেলার বিরাট সোলাকুড়া এলাকায় লিফলেট বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। গোলাম হাসান বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তেরখাদার মধুপুর ও সাচিয়াদাহ ইউনিয়নে উপজেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধির মনোনীত প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি ওই দু’টি ইউনিয়নে নির্বাচনী গনসংযোগে যোগদান থেকে ঘোষণা দিয়ে বিরত রয়েছেন। এতে দলীয় কোন্দল যেমন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে তেমনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েও বিপরীত মেরুতে অবস্থান করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদ্বয়কে। দিঘলিয়া উপজেলার ২নং বারাকপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী হাফিজুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থী ও সমর্থকদের অবৈধ অস্ত্রের মুখে এখানে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনে শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করবেন জানানো হলেও মূলত কারো কারো ইন্ধনে দলের মূল প্রার্থীরা ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি’র নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় গ্রাম্য রাজনীতি চরম উত্তপ্ত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ