Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাখাইনকে সেনা-নিয়ন্ত্রণের বাইরে আনার চেষ্টা করছেন সু চি!

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
রাখাইনের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সেখানকার ত্রাণ কার্যক্রমসহ অবকাঠামো পুনর্নিমাণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। তার একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের গতকালের পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সু চি নিজেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রভাগে থেকে রাখাইনের সঙ্কট উত্তোরণে একটি বেসামরিক সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এদিকে বিশেষজ্ঞরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওই উপদেষ্টা সু চির খুবই ঘনিষ্ঠ।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইএমও)’র সবশেষ হিসেব অনুযায়ী রাখাইনের সহিংসতা থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সু চি প্রতিশ্রুতি দেন, রাখাইনের উত্তেজনা নিরসনের করণীয় নির্ধারণে তিনি মানবিক সহায়তা সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আমন্ত্রিতদের সমন্বয়ে একটি বেসামরিক নেতৃত্বের সংস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন সু চি। বেশ কিছুদিন আগেই এই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
‘তার একটাই চিন্তা। কেমন করে এই সঙ্কট দূর করা যায়। কেমন করে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম, সমন্বয় আর পুনর্নির্মাণের ক্ষমতা বেসামরিক সরকারের হাতে দেওয়া যায়।’ সু চিকে নিয়ে টেলিফোনে সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তার ওই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। তিনি জানান, সু চি নিজেকে ওই কাজেই নিয়োজিত রেখেছেন। ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সংস্থাটি এক ধরনের পরিকল্পনা-বাস্তবায়নকারী ইউনিট হতে যাচ্ছে যা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতাকে সামনে আনবে।
গার্ডিয়ান ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে আরও লিখেছে, সু চি মানবিক সহায়তার নৈতিক উপযোগিতা বুঝেছেন। নিজেকেই তিনি সামনে এনেছেন। বলেছেন, ‘আমিই দায়িত্ব নেব’। ‘তিনি সেই মানুষ যিনি তার গোটা জীবনটাকেই মানবাধিকারের পক্ষে নিবেদন করেছেন। তিনি বদলে যাননি, তবে সঙ্কট নিয়ে কথা বলার চেয়ে তা সমাধানেই তিনি বেশি মনোযোগী’ -বলেন সু চির সেই ঘনিষ্টজন।
সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন প্রশ্নে তিনি নীরব থাকায় প্রচÐ সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি একটি যথাযথ রাস্তা খুঁজছিলেন। কারণ শঙ্কা ছিল, সেনাবাহিনী তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারে। ‘যেটা তার কাছে পরিস্কার ছিল না, সেটা হলো কী করে তিনি এটা করবেন। কী করে তিনি বেসামরিক সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা তুলে দেবেন’ -বলেন ওই উপদেষ্টা।
রয়টার্স জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে ওই উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে তার (সু চি) অন্য কোনও প্রতিনিধির কাছে থেকে কোনও তথ্য পায়নি তারা। তবে দু’জন বিশেষজ্ঞ দু’জনের ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারটি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে গত শুক্রবার ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, এই সঙ্কট উত্তরণে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা যথেষ্ট পরিমাণে প্রত্যয়ী। শুক্রবার রয়টার্সকে ওই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সু চি চান না পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হোক। সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চান। তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তা দেখে সু চি ভেঙে পড়েছেন। তিনি এ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমি জানি, তার এই উদ্বেগের কথা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে আমি জানি, তিনি নিশ্চয় পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাবেন’।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে ৬ জন কূটনীতিকের দাবির বরাত দিয়ে শুক্রবার জানিয়েছে, সু চি রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আর রাখাইন হত্যাকাÐের মূল ক্রীড়নক সেনাপ্রধান মিন অং। সু চিকে মিয়ানমারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে মনে করা হলেও তিনি আসলে সেখানকার সামরিক বাহিনীর কাছে ‘অসহায়’। রোহিঙ্গা সঙ্কটে সু চির হৃদয় ভেঙে পড়েছে বলে তার উপদেষ্টাও রয়টার্সের কাছে এইকদিনে দাবি করেছেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সা¤প্রতিক এক অনুসন্ধানে সু চির রোহিঙ্গা ভীতির কথা উঠে আসে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধান বলছে, সু চি সরকারে এসে আরও বেশি করে সেনাক্ষমতার হাতে বন্দি হয়ে পড়েছেন। ‘এশিয়ার ম্যান্ডেলা’ খ্যাত এই নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর ক্ষমতাহীনতাকে সেনাবাহিনী ও তার মধ্যকার স্বার্থগত বন্ধন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সু চির উপদেষ্টা যা বলছেন, তা সত্যি হলে সেই স্বার্থগত বন্ধন ক্ষুণেœর আশঙ্কাই জোরালো হবে।
রোহিঙ্গাদের পালানো ‘পরিকল্পিত’: মিয়ানমারের প্রত্যাবাসনমন্ত্রী
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দায়িত্বে নিযুক্ত মন্ত্রী দাবি করেছেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পালানো হয়তো পরিকল্পিত। গতকাল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি করেন।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ি জানান, পুরো ঘটনাকে জাতিগত নিধন হিসেবে উপস্থাপন করতে রোহিঙ্গারা হয়ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে পালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দলগতভাবে তারা পালিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে এটি জাতিগত নিধন। হয়ত তারা পরিকল্পিতভাবেই এটি করছে। আমি বলছি, এমনটি হতে পারে। কিন্তু আমি জানি না। কিন্তু হতে পারে তারা এজন্য পরিকল্পনা করেছে। যাতে করে পুরো বিষয়টি জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়’।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলতি মাসের শেষ দিকে বৈঠকে বসবে। প্রতিদিন অন্তত ১০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মিয়ানমারের। যাদের পরিচয় মিয়ানমার সরকারের নথিতে থাকবে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তাদের শনাক্ত করতে হবে যারা সঠিক। তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হবে। যদি তাদের বাড়ি সেখানে না থাকে তাহলে আপাতত তাদের জন্য নির্মিত অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হবে’। সূত্র : দ্যা গার্ডিয়ান, রয়টার্স ও আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সু চি

২৪ জানুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ