Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাশরাফি-সাকিবেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানতে আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ছুটির কারণে দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। পরিণতি, টেস্ট সিরিজে বাজে হার। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস। ওয়ানডে সিরিজে ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। সঙ্গে যোগ হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্ব। সিরিজের আগে একমাত্র ওয়ানডেতে হেরে গেলেও ফিফটির দেখা পেয়েছেন সাকিব। ইনজুরি কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সব মিলিয়ে টেস্ট সিরিজের হতাশা কাটিয়ে ওঠার পরিবেশ ফিরেছে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে। হারানো সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার কঠিন পরীক্ষায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ মাশরাফির দল নামবে কিম্বার্লিতে। তার আগে সাকিবের বিশ্বাস, ঘুরে দাঁড়াবে টিম বাংলাদেশ। ডায়মন্ড ওভালে গতকাল অনুশীলন শেষে তাঁর মন্তব্য, ভালো ব্যাটিং করা, ভালো জায়গায় বেশি বোলিং করা; এই মৌলিক কাজগুলো যদি ভালোভাবে করতে পারে টিম বাংলাদেশ তাহলে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ শুরুর আগে ম্যাচ ভেন্যু কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে টাইগারদের অনুশীলন শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অলরাউন্ডার সাকিব। আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে গণমাধ্যমকে সাকিব জানিয়েছেন, ‘খেলব তো আমরা জেতার জন্যই। বাকিটা দেখা যাক কি হয়। অবশ্যই এদের কন্ডিশনে অনেক কঠিন হবে। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু এগুলো সব দেশের জন্য একই রকম। এরা যখন আমাদের দেশে যায় শেষবার ওরাও হেরেছে। কন্ডিশনের কারণে একটা বড় প্রভাব পড়ে অবশ্যই।’
ডু প্লেসিসদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা ভালো না কাটায় ওয়ানডেতে ভালো কিছু করে দেখানোর প্রতিজ্ঞা পুরো দলের ভেতর। তাতে বাংলাদেশ দল যে উন্নতির সিঁড়িতেই আছে, সেটা নিয়ে অন্তত কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সাকিবও জানালেন, ‘সবাই এখন ওয়ানডে সিরিজে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। যেহেতু আমরা টেস্ট ভালো খেলিনি, এটাই আমাদের প্রমাণ করার জায়গা যে আমরা উন্নতি করছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে মৌলিক কাজগুলো যেন ঠিকভাবে করতে পারি। ভালো ব্যাটিং করা, শুরুটা ভালো করা। বোলিং ভালো করা। ভালো জায়গায় বেশি বোলিং করা। এই মৌলিক কাজগুলো যদি ভালোভাবে করতে পারি আমাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।’
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে শেষ হওয়া দুই টেস্টে সাকিব ছিলেন ছুটিতে। বিশ্রাম কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে এসেই করলেন ফিফটি। পাঁচ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ইঞ্জুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্টে দলের বাহিরে থাকা ওপেনার তামিমও ফিরেছেন অনুশীলনে। উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য সবচেয়ে কঠিন জায়গা দক্ষিণ আফ্রিকা। এখানে ভালো করা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সাকিব মুখিয়ে আছেন বিাংদ্ধ কন্ডিশনে নিজেদের প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নিতে। ওয়ানডেতে টাইগার দলে সবচেয়ে বড় তারকা মাশরাফিসহ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ফেরা নিয়েও সাকিব জানান, ‘অ্যাডভান্টেজ-ডিজঅ্যাডভান্টেজের চেয়ে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের কন্ডিশনে আমরা খুব বেশি খেলি না। হঠাৎ করে এসেই ভালো কেউই করে না। আপনি এশিয়ার দলগুলোরর নিকট অতীতের পারফরম্যান্সে দেখেন, উপমহাদেশের বাইরে কারোরই ভালো না। এশিয়ার বাইরের যারা তারা যখন এশিয়ায় গেছে তাদেরও পারফরম্যান্স ভালো না।’
বর্তমান বাংলাদেশ দলে অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। বড় দলের বিপক্ষে বড় বড় জায়গায় ম্যাচ জেতার অভিজ্ঞতা আছে দলটার। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ এবং দেশের মাটিতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করেছে টাইগাররা। তবে সহ-অধিনায়কের আশা, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টের যন্ত্রণা ভুলে সবাই এখন ওয়ানডে নিয়েই বেশি মনোযোগী হবে। ব্যাটিংয়ে তাঁর বেশি প্রত্যাশা দলের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে, ‘আশা করি, আমাদের ব্যাটসম্যান যারা আছে তারা সবাই চেষ্টা করবে ভালো করার। একটা ম্যাচে সবাই ভালো করবে না, খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ওপরের দিকে তিন জন-চার জন যদি ভালো করে, তালে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য রানটা করা অনেক সহজ হয়ে যায়।’
বাংলাদেশ দল গত দুই-তিন বছরে যে সাফল্য পেয়েছে, তাতে জ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তরুণ খেলোয়াড়দের। সাকিব-তামিম-মুশফিকদের পাশাপাশি মোস্তাফিজ-সৌম্য-সাব্বিররাও জ্বলে উঠেছিলেন বলেই বাংলাদেশ লিখেছে একের পর এক গৌরবগাথা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখনো দেখা যায়নি মোস্তাফিজ-সাব্বিরদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। তবে তরুণদের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেললেও সে সাফল্য এসেছিল দলের সিনিয়রদের হাত ধরে। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখা যায়নি দলের তরুণ খেলোয়াড়দের মাঝে। এরপর আর ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। তাই এখনই তরুণদের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করতে চান না মাশরাফি, ‘আমি তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে চাই না। অনেক নেতিবাচক কথা হবে, সেটা স্বাভাবিক। একজন খেলোয়াড় হিসেবে সব মেনে খেলতে হবে। ভালো সময়-খারাপ সময় যাবে। ওদের এটা শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা ২-৩ বছর ধরে খেলছে। যখন দেশের বাইরে খেলতে আসবে, সবকিছু আমাদের বাইরে থাকবে। তখন খারাপ সময় গেলে এটা মেনে নিয়েই লড়তে হবে। এতে যেন তারা চাপ অনুভব না করে। সা¤প্রতিক অতীতে তাদের অবদান ছোট করে দেখি না। অবশ্যই চাইব মানসিকভাবে ওরা শক্ত হোক।’
টেস্টে বাংলাদেশ দলের দল নির্বাচন, টস জিতে বোলিং নেওয়া ও মানসিকতা-সবকিছু নিয়েই সমালোচনা হয়েছে। তবে রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামাটাই সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ওয়ানডেতে অন্তত এমন কিছু দেখতে চান না অধিনায়ক, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের প্রশ্নই আসে না। যদি এমন ভাবনা থাকে, ওদের হারাতে নিজেদের দিনের অপেক্ষায় থাকব, তাহলে ওদের কাছে সুযোগই পাব না। এ থেকে বেরিয়ে আসার একটাই উপায়, প্রথম বল থেকেই আক্রমণ! এই কন্ডিশনে উপমহাদেশের দল হিসেবে আমাদের জন্য খুবই কঠিন। কিন্তু এখান থেকে বেরোতে পারি একমাত্র আক্রমণাত্মক খেলে।’
আক্রমণাত্মক মানসিকতা প্রথম বল থেকেই দলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন যিনি, সেই তামিম ইকবালকে নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে ম্যাচের আগের দিনও। মাশরাফি অবশ্য দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে পাওয়ার আশা ছাড়ছেন না, ‘আমরা পজিটিভ, আশা করছি তামিম ফিট হয়ে ফিরবে।’

বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা ওয়ানডে সূচি
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু
১৫ অক্টোবর ১ম ওয়ানডে ডায়মন্ড ওভাল, কিম্বার্লি
১৮ অক্টোবর ২য় ওয়ানডে বোল্যান্ড পার্ক, পার্ল
২২ অক্টোবর ৩য় ওয়ানডে বাফেলো পার্ক, ইস্ট লন্ডন
*সবক’টি ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়
*সরাসরি দেখাবে বিটিভি/জিটিভি/মাছরাঙা/সনি সিক্স


ওয়ানডেতে বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা
ম্যাচ জয় হার টাই/পরি. সাফল্যাঙ্ক
বাংলাদেশ ১৭ ৩ ১৪ ০/০ ১৭.৬৪%
দ.আফ্রিকা ১৭ ১৪ ৩ ০/০ ৮২.৩৫%

সাম্প্রতিক ফল
বাংলাদেশ- হার, জয়, হার, জয়, জয়
দ.আফ্রিকা- হার, হার, জয়, জয়, হার
সর্বাধিক ম্যাচ
বাংলাদেশ : আশরাফুল/সাকিব/তামিম, ১০টি করে
দ.আফ্রিকা : গ্রায়েম স্মিথ, ১২
অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ম্যাচ
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ৫টি
দ.আফ্রিকা : গ্রায়েম স্মিথ, ৯টি
সর্বোচ্চ দলীয়
বাংলাদেশ : ২৫১/৮ ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০০৭
দ.আফ্রিকা : ৩৫৮/৪ বিনোনি, ৯ নভে. ২০০৮
দলীয় সর্বনি¤œ
বাংলাদেশ : ৭৮ ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০১১
দ.আফ্রিকা : ১৬২ ঢাকা, ১২ জুলাই ২০১৫
বড় জয়
বাংলাদেশ : ৬৭ রানে ও ৯ উইকেটে
দ.আফ্রিকা : ২০৬ রানে ও ১০ উইকেটে
সর্বাধিক রান
বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল, ১০ ম্যাচে ২৬৪
দ.আফ্রিকা : গ্রায়েম স্মিথ, ১২ ম্যাচে ৫৭২
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত
বাংলাদেশ : সৌম্য সরকার ৯০, চট্টগ্রাম ২০১৫
দ.আফ্রিকা : হার্শেল গিবস ১৫৩, পোচেফস্ট্রুম ২০০২
সর্বাধিক সেঞ্চুরি
বাংলাদেশ : নেই
দ.আফ্রিকা : স্মিথ/গিবস/আমলা, একটি করে
সর্বাধিক ফিফটি বা ততোধিক
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ আশরাফুল, ১০ ম্যাচে ৩টি
দ.আফ্রিকা : হার্শেল গিবস, ১১ ম্যাচে ৫টি
এক সিরিজে সর্বোচ্চ রান
বাংলাদেশ : সৌম্য সরকার, ২ ম্যাচে ২০৫
দ.আফ্রিকা : হার্শেল গিবস, ৩ ম্যাচে ২৫৬
সেরা পার্টনারশিপ
বাংলাদেশ : তামিম-সৌম্য, ১ম উইকেটে ১৫৪
দ.আফ্রিকা : স্মিথ-গিবস, ১ম উইকেটে ১৫৫*
সর্বাধিক উইকেট
বাংলাদেশ : সাকিব আল হাসান, ৮ ম্যাচে ১০টি
দ.আফ্রিকা : মাখায়া এনটিনি, ৮ ম্যাচে ১৮টি
সেরা বোলিং
বাংলাদেশ : আব্দুর রাজ্জাক ৯.৪-১-২৫-৩
দ.আফ্রিকা : কাগিসো রাবাদা ৮-৩-১৬-৬
এক সিরিজে সর্বাধিক উইকেট
বাংলাদেশ : তালহা জুবায়ের, ৩ ম্যাচে ৬টি
দ.আফ্রিকা : কাগিসো রাবাদা, ৩ ম্যাচে ৮টি
সর্বাধিক ক্যাচ
বাংলাদেশ : সাব্বির রহমান, ৩ ম্যাচে ৫টি
দ.আফ্রিকা : গ্রায়েম স্মিথ, ১২ ম্যাচে ১০টি
সর্বাধিক ডিসমিসাল
বাংলাদেশ : মুশফিকুর রহিম, ৭ ম্যাচে ৫টি
দ.আফ্রিকা : মার্ক বাউচার, ৯ ম্যাচে ১৯টি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ