Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গড়ে উঠছে মসজিদ মাদরাসা ও হেফজখানা

শামসুল হক শারেক, উখিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে : | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সন্ত্রাসবাদ ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখতে কাজ করছেন শত শত আলেম-ওলামা : বাংলাদেশের প্রতি আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের ধন্যবাদ জ্ঞাপন


মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে জাগতিক শিক্ষা দীক্ষা থেকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে শতাব্দীকাল ধরে। কিন্তু খেয়ে না খেয়ে ধর্মীয় শিক্ষা বুকে ধারণ করে তারা এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে রোহিঙ্গা জাতিসত্তাকে। শত দমন পীড়নের পরেও আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ইসলামী শিক্ষা ও কৃষ্টি কালচার লালন করে মুসলিম জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বেঁচে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। জাতির আলেম-ওলামা পীর মশায়েখগণ রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন সেই রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাসের শুরু থেকেই। এই ঐতিহ্য গোটা আরাকানে এখনো বিদ্যমান। এমনকি সম্প্রতি মিয়ানমার সেনা পুলিশ ও মগদস্যুদের নিষ্ঠুর নির্যাতনে নিঃস্ব এবং রিক্ত হাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী পুরুষের মাঝেও দেখা যাচ্ছে সেই ধর্মী শিক্ষার চাপ এবং প্রভাব।
উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বর্ণনাতীত দুঃখভরা জীবনেও ইসলামী শিক্ষা চেতনা তারা ভুলে যায়নি। দেখা গেছে মহিলাদের শরীর ঢাকার মত বস্ত্র নেই, তার পরেও যতটুক সম্ভব রোহিঙ্গা মহিলারা পর্দা মেনেই ত্রাণকর্মী, সেনা সদস্য, পুলিশ ও দেশী বিদেশী-মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলছে। কোন মানুষ দেখলেই তাদের উপর চালানো মিয়ানমার সরকারের নিষ্ঠুর জুলুম নির্যাতনের শত ব্যথা ভুলে গিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে কথা শুরু করছে। আলেম ওলামা ও পুরুষরা দাড়ি রাখার পাশাপাশি টুপিসহ ইসলামী লেবাস ধারণ করে আছেন এই দুরবস্থাতেও।
দেখা গেছে, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে যে যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানেই তারা নিজের আরাম আয়েশের দিকে নজর না দিয়ে গড়ে তুলেছেন মসজিদ, শিশুদের পড়ালেখার জন্য ফুরকানিয়া মাদরাসা ও হেফজখানা। এভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গড়ে উঠেছে শত শত মসজিদ-মাদরাসা-মক্তব, স্কুল ও হেফজখানা। পাশাপাশি শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় শিক্ষা বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আলেম-ওলামারা। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ছাড়াও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঈমান আকিদা সংরক্ষণ ও নৈতিকতা এবং বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার শিক্ষা দিয়ে চলেছেন শত শত ওলামায়ে কেরাম। অভাব অনটন ও দুঃখ-দুর্দশার সময় কারো উস্কানীর মুখে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ যাতে অনৈতিক কোন কাজে, মাদক বেচা-বিক্রির সাথে জড়িয়ে না পড়ে, কোন গোষ্ঠীর ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির উস্কানীতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সাথে যেন জড়িয়ে না পড়ে, এসব বিষয়ের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যও ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে রোহিঙ্গা কমিউনিটির ওলামায়ে কেরাম তাদের চেষ্টা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
বিশেষ করে অভাব অনটনের এই সময়ে নগদ টাকা অথবা সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুদের যেন ধর্মান্তর করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির ওলামায়ে কেরাম। গতকাল এ প্রসঙ্গে কথা হয় কুতুপালং নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অরাকানের সায়াদুল্লাহর চর বড় মাদরাসার শিক্ষক মুহাদ্দিস মাওলানা ছিদ্দিক আহমদের সাথে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা জাতিগতভাবেই ধর্মপ্রাণ। ইসলামী তাহযিব তমদ্দুন রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। শতাব্দীকাল ধরে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্যেও তারা ঈমান আকিদা ছাড়েনি। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ঈমান আকিদা ও ইসলামী তাহযিব তমদ্দুন রক্ষার জন্য আরাকানে বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা ও হেফজ খানাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যাতে নিজের পরিচয় না ভুলে না যায় সেজন্য রোহিঙ্গা অলেম ওলামারা শত কষ্টের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছে। একই কথা জানালেন উখিয়ার বালুখালী শিবিরে অবস্থান রত মুহাদ্দিস মাওলানা ওমর সোলাইমান ও টেকনাফের মুছনি শিবিরে আশ্রয় নেয়া মুফতি মাওলানা নূরুল ইসলাম।
এদিকে রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (এআরইউ) আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছে। আমেরিকায় অবস্থানরত আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের ডিজি প্রফেসর ড. ওয়াকার উদ্দিনের পক্ষে রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (এআরইউ) আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন এর আন্তর্জাতিক কোঅর্ডিনেটর আবু ছিদ্দিক আরমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমার সরকার আরাকান রাজ্য থেকে সেখানকার হাজার বছেরের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যে নজিরবিহীন নির্যাতন চালিয়ে আসছে তা নিন্দার কোন ভাষা নেই। এই নির্যাতন পৃথিবীর সব নির্যাতনকে হার মানিয়েছে। এ নির্যাতনে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশু পুরুষ বাস্তুচ্যূত। বাংলাদেশ সরকার এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতা দেখিয়েছেন এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে শুকরিয়া জ্ঞাাপন করেন। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অনৈতিক কাজে না জড়াতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সেনাবাহিনীসহ পুলিশও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের নিয়মনীতি মেনে চলার তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় অধিকাসীদের অসুবিধার কথা চিন্তা তাদের প্রতি ভদ্র আচরণর করার জন্যও রোহিঙ্গাদের প্রতি আহবান জানান। সাথে সাথে বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেভাবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন এজন্য ধন্যবাদ জানান ড. ওয়াকার।



 

Show all comments
  • সাইফ ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৪৭ এএম says : 0
    এটা অত্যান্ত ভালো উদ্যোগ
    Total Reply(0) Reply
  • asaduzzaman fakir anis ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ৫:৫৮ এএম says : 0
    রোহিঙ্গা গোষ্ঠিগত ভাবে মুসলিমজাতি। আর এটাই মগদের মাথা ব্যথার কাল হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhmmad Kawsar ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৫২ এএম says : 0
    Jazak Allahu khairan, gaiaan orjon kora musolmander upor fard.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Hannan ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৫২ এএম says : 0
    Good
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Moinuddin ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৫৩ এএম says : 0
    Ameen.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ হারুন অর রশিদ ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৪৮ পিএম says : 0
    আরাকানকে একটি স্বাধীন রাস্ট্র হিসাবে ঘোষনা করা হোক।আরাকনের সকল নাগরিককে ধমীয় শিক্ষাদেয়া জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে যথা সাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ