Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতল যুদ্ধোত্তর সবচেয়ে বড় পারমাণবিক হুমকিতে বিশ্ব

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সংকটময় শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব। এই আশঙ্কাকে আরো ঘনীভূত করে তুলছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা হলো- ক্রমাগত অবনতি হতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হুমকি এবং কিছু উগ্রপন্থি রাষ্ট্রের কর্মকান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বিতর্কিত আচরণ। প্যারিসে অনুষ্ঠিত লুক্সেমবার্গ ফোরামের দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বক্তারা। ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি ছিন্ন করতে চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে পারমাণবিক হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তিনি সা¤প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছেন। তা নিয়ে কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র মোতায়েন করেছে পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী যুদ্ধজাহাজ। এসব বিষয় বিচলিত করে তুলেছে ওই অনুানে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের। এর সঙ্গে আরো অনিশ্চয়তা যোগ করেছে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক সমঝোতা আলোচনা বারবার ব্যর্থ হওয়ায়। ইউক্রেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই অমীমাংসিত ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত দিন দিন অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলছে বলে মত দিয়েছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি এ সপ্তাহে বাতিল করে দেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। এ ধরনের পদক্ষেপ সুদীর্ঘ সময়ের কূটনৈতিক সমঝোতাকে অসাড় করে দেবে। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাব আগ্রাসী। এতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক সংকট তৈরি হতে পারে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি বেøয়ার। তিনি বলেছেন, দ্য জয়েন্ট ক¤িপ্রহেন্সিভ প্ল্যান ফর অ্যাকশন (জেসিপিওএ) এর আলোকে শুরুতেই ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির বেশ কিছু অংশ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যদিও চুক্তিটি কিছুটা ত্রæটিপূর্ণ, তবুও এর মাধ্যমে আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছি। যেহেতু চুক্তিটি সম্পাদিত হয়ে গেছে, তাই বিচক্ষণতা হবে যদি আমরা এটাকে বাতিল না করে ধরে রাখি। তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই একটা অস্থিতিশীল সময় যাচ্ছে এবং এ অবস্থায় পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়াটা হবে অনুচিত। কারণ, এটা আরো অনভিপ্রেত বিপর্যয় ডেকে আনবে। টনি বেøয়ার উত্তর কোরিয়াকে একটি বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু কূটনৈতিকভাবে চীনের সহায়তা নিয়ে বিপর্যয় এড়িয়ে কিম জং উনকে পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া থেকে থামানো সম্ভব বলে তিনি মত দেন। তিনি আরো বলেন, আমরা চাইলেই সামরিক হামলা চালাতে পারি। কিন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের (উত্তর কোরিয়ার) প্রতিরক্ষা বাহিনীর এমন কোনো দুর্বলতা কিংবা আমাদের এমন কোনো সক্ষমতা নজরে আসছে, যাকে কেন্দ্র করে আমরা খুব সহজেই উত্তর কোরিয়াকে পরাস্ত করতে পারি, তার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কোনোভাবেই নিশ্চিত হতে পারি না যে- এ ধরনের আক্রমণ একটা বৈশ্বিক পারমাণবিক বিপর্যয় ডেকে আনছে না। এ অনুানে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম পেরি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, রোনাল্ড রিগ্যান ও বিল ক্লিনটনের অধীনে কাজ করেছেন। উইলিয়াম পেরি সেখানে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে তিনি আতঙ্কিত। তিনি বলেন, এমন ভাষার ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজিত করবে। সৃষ্টি করবে এমন এক পরিবেশ, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। যদি এমন যুদ্ধ শুরু হয়েই যায় তাহলে তা হবে মারাত্মক বিপর্যয়কর। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করা প্রসঙ্গে তিনি অমত পোষণ করেন। বলেন, এই চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের ধারণার সঙ্গে আমি মোটেই একমত নই। কারণ, এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে এই চুক্তির বেশ কিছু সুফল আমরা ইতিমধ্যেই পাচ্ছি। এটা নিশ্চিতভাবেই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমকে সীমিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন যে, তিনি এই চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে তার মনঃপূতভাবে চুক্তি সম্পাদন করবেন। কিন্ত বাস্তবতা হলো, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ। এই চুক্তি বাতিল করা হলে তার প্রভাব ইউরোপসহ প্রতিটি মিত্র দেশেই পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সির সাবেক প্রধান কর্মকর্তা হ্যান্স বিøক্স। তিনি অনুানে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সা¤প্রতিককালে জাতিসংঘকে এ সম্পর্কে তার ভাবনার কথা জানিয়েছেন। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ