পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719644854](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ওয়ারীতে সক্রিয় একাধিক গ্রুপ : ডিএমপির সবগুলো থানায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা : ১ মাসে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫ জন
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীচক্র। দিনে দুপুরে তারা প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে ছিনতাই করছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত এমনকি গুলী করে মানুষের নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীতে অহরহ ঘটছে এরকম ঘটনা। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্মে আতঙ্কিত নগরবাসী। গত কয়েকদিনে বেশক’টি বড় ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ওয়ারীতে। গত রোববার সকালে ওয়ারীর টিকাটুলীর কে এম দাস লেনের বাসা থেকে মাত্র কযেশ’ গজ দুরে ছিনতাইকারীর হাতে খুন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু তালহা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়ারীর কে এম দাস লেন সড়কে ছিনতাইকারী গ্রুপের ১০/১২ জন সদস্য তিন বছরে শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হাতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, গত এক মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছে কমপক্ষে ২৫জন। এর মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার একজন মাঠ কর্মকর্তাও আছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে ছিনতাইয়ের ঘটনা এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কারণ অনেকে ঝামেলা এড়াতে ঢাকা মেডিকেল বা থানা পর্যন্ত যান না। পুলিশের ভাষ্য মতে, ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকার অনেক সড়ক ও বাড়িতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা সিসিটিভি বসানো হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের পেট্রোল ডিউটি, ফুট পেট্রোল ও সাদা পোশাকে ডিউটির পাশাপাশি ছদ্মবেশে গোয়েন্দা নজরদারিও করা হচ্ছে। এরপরও দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
গত রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টিকাটুলরি কে এম দাস লেনের ১২/২ নং বাসা থেকে মাত্র কয়েকশ’ গজ দুরে হুমায়ুন সাহেবের বাড়ীর সামনে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু তালহা খন্দকার। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। একই স্থানে সাদিয়া নামের এক স্কুল শিক্ষিকা এবং তার ভাই সানির মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। এসময় তালহা সাহস করে এক ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরে চিৎকার দেয়। কিন্তু আশপাশের কেউ এগিয়ে না আসায় ছিনতাইকারীরা তালহাকে উপুর্যপরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর তালহার মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কে এম দাস লেনসহ টিকাটুলীর আর কে মিশন রোড, অভয় দাস লেন, গোপীবাগ রেল গেইট, হুমায়ুন সাহেবের রেল গেইটসহ পুরো এলাকাজুড়ে বহুদিন ধরেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম। প্রায় প্রতিদিনই এই সব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। টিকাটুলীর এক ব্যবসায়ী জানান, গত সপ্তাহেও ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তার মুখে পর পর দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, টিকাটুলী এলাকা একেবারে অরক্ষিত। পুলিশের টহল বলতে কিছু নেই। অভয় দাস লেনে পূজার মন্ডপের সামনে ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশের টহল চোখে পড়ে না। অথচ এই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে। তারা ভোরসহ রাত-বিরাতে চলাফেরা করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টিকাটুলী এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয়। এর মধ্যে আসলাম গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ও ভয়ঙ্কর। আসলাম গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে চান্দু রাসেল, লেংসু, ছুছনি রুবেল, লিটনসহ আরও কয়েকজন। গোলাপবাগ থেকে টিকাটুলী এবং গোপীবাগ এলাকায় এই গ্রুপের সদস্যরাই ছিনতাই করে। এ ছাড়া মকবুল গ্রুপের কামাল, করিম, কালাম, পলাশসহ আরও কয়েকজন টিকাটুলী থেকে মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনের এলাকা হয়ে মতিঝিল এলাকায় ছিনতাই করে। অন্যদিকে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সক্রিয় সোর্স হানিফের ছিনতাইকারী গ্রুপ। এই গ্রুপে আছে ডিব্বা রাব্বি, মোহাম্মদ আলী, রিয়াজ, সুমন, মিঠুসহ আরও কয়েকজন। আর যাত্রাবাড়ীর অলিগলিতে ছিনতাই করে সোর্স রাজুর নেতৃত্বে দিদার, খাকী বাবু, জাহাঙ্গীর, মিলনসহ বেশ কয়েকজন। টিকাটুলী থেকে রাজধানী মার্কেট হয়ে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত সক্রিয় আরও দুটি গ্রুপ। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ভুক্তভোগিদের মতে, এসব এলাকার ছিনতাইকারীচক্র বেশিরভাগ সময়ে ভোরে বা সকালে ছিনতাই করে। ভোরে রাস্তাগুলো থাকে ফাঁকা। টহল পুলিশ রাতভর ডিউটির পর ক্লান্ত হয়ে যখন ডিউটি বদল করতে যায়, ঠিক সেই সময় রাস্তায় নামে ছিনতাইকারীর দল। তখন তারা যাকে পায় তার উপরই চড়াও হয়। প্রথমে ধারালো অস্ত্র বের করে। কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। কখনও কখনও গুলী করতেও দ্বিধা করে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে টিকাটুলীর কে এম দাস লেনে ছিনতাই করতে গিয়ে এক ছিনতাইকারী ধরা পড়ে। নাদিম (৩০) নামের ওই ছিনতাইকারীকে জনতা গণধোলাই দিলে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানায়, ওই দিন সকাল ৬টার দিকে রিকশা করে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ছিনতাইকারী তার রিকশার গতিরোধ করে। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে রিকশা আরোহীর টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তিনি চিৎকার দেন। এক পর্যায়ে তিনি রিকশা থেকে লাফিয়ে পড়ে দৌড় দেন। ওই সময় ছিনতাইকারীরা রিকশাচালক স্বপন মিয়ার পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। তার চিৎকারে সরু গলির আশপাশ থেকে লোকজন বেরিয়ে এক ছিনতাইকারীকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। মোটরসাইকেল নিয়ে অপরজন পালিয়ে যায়। ওয়ারীর টিকাটুলী এলাকা ছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য থানা এলাকারও প্রায় একই চিত্র। গত ১৯ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই দিন স্টেডিয়াম মার্কেটের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী আবদুল হাই বিকেল সাড়ে ৪টায় বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে ব্যাগে করে ওই টাকা নবাবপুরে নেওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এর আগে ১৩ মার্চ পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় অলিউল্লাহ খান নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ ও নিউমার্কেটে অপর ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গুলি করে ১২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও উত্তরায় চলন্ত গাড়ি থামিয়ে মা ও মেয়েকে গুলী করে ৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটনা ছিল বেশ আলোচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত এক মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যে সব থানা এলাকার মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, কাফরুল, শাহআলী, দারুস সালাম, কলাবাগান, শেরে বাংলানগর, ভাষানটেক, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানা। ভুক্তভোগিদের মতে, এসব থানা বাদে ডিএমপির প্রতিটি থানায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে ছিনতাই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পেশাদার ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ার পর খুব সহজেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। পরে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সায়েদাবাদ এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পরা এক ছিনতাইকারীর উদাহরণ টেনে ওই কর্মকর্তা বলেন, মাত্র কয়েক দিন জেল হাজতে থেকে ছাড়া পেয়ে এখন সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীর যে কোনো স্থানে ছিনতাই, ডাকাতিসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ তৎপর আছে। নগরীকে নিরাপদ রাখতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুলিশি টহল, তল্লাশি, ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল ডিউটি চলছে। বিভিন্ন এলাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। এরপরও অপরাধীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। তাদেরকে গ্রেফতারসহ আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।