পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চাপ অব্যাহত না থাকলে মিয়ানমার মূল সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা তাদের (মিয়ানমারের) ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর একটি কৌশল বলে মনে করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে মিলিতভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে সু চির এনএলডি সরকার রাখাইনে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও জীবন যাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে এবং সামরিক বাহিনী নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এবং তারা যেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাধ্য হয়, বাংলাদেশ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট: বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আংশিক ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমিত করার কৌশল হতে পারে। মিয়ানমার নিজস্ব যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য প্রত্যাবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা সীমিত করার এবং নানা অজুহাতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে বিলম্বিত করতে পারে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমার নিজেরা যাচাই–বাছাই করে প্রত্যাবাসনের কথা বলছে এবং এ ক্ষেত্রে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসনের যে নীতি নেয়া হয়েছিল, সেটাকে অনুসরণ করতে চাইছে। বাংলাদেশ সরকার এবারের পরিস্থিতির মাত্রা ও ভিন্নতার বিষয়ে মিয়ানমারকে জানিয়েছে এবং প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে একটা খসড়া প্রস্তাব হস্তান্তর করেছে।
বাংলাদেশ চায়, এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) যুক্ত থাকুক এমনটা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চায়, আন্তর্জাতিক চাপটা অব্যাহত থাকুক। ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের নিস্পৃহ মনে হয়েছে। তারা বাংলাদেশ সফর করেছে তবে কখনোই আলোচনা এগোয়নি। এমনকি আজকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, সেখানকার গণমাধ্যমে এখনো রোহিঙ্গাদের ‘বেঙ্গল টেররিস্ট’ বলা হচ্ছে।
রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।
মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, মিয়ানমারে মূল সমস্যার সমাধান এবং দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়া। তিনি বলেন, প্রথম ক্ষেত্রে মূল সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরকিত্বসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অপপ্রচার, ধর্মীয় বিদ্বেষ, উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; ধর্মীয় ও জাতিগত স¤প্রীতি ফিরিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় চাপ প্রয়োগ না করলে মিয়ানমার মূল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে বলে মনে হয় না। নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ ও দ্রæত বাস্তবায়নে আস্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আরও তৎপর হতে হবে।
সঙ্কটের দ্বিতীয় অংশে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকে ‘জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী’ হিসেবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারেও মিয়ানমারকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেখানে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরবিশে সৃষ্টি করতে হবে। নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা না পেলে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে আগ্রহী হবে না। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন কেবল মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নেই। এটি এখন আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ পেয়েছে। তাছাড়া এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নয়। এ সমস্যার পেছনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। সমস্যার সৃষ্টি ও কেন্দ্রবিন্দু মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানে নিহিত।
আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারি ও সহযোগিতা ছাড়া মিয়ানমারকে দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রাখা ‘কঠিন হবে’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বহুপক্ষীয়, আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কূটনৈতিক তৎপরতায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়েরও সমর্থন রয়েছে।
১৬ তারিখে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক আছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে মিয়ানমার কী করছে, সেটা দেখেই বোঝা যাবে মিয়ানমার সত্যিই প্রত্যাবাসনে আগ্রহী কি না। বাংলাদেশ কী করেনি? বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও করেছে, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে। এর আগে একবারই জাতিসংঘের মহাসচিব লেবাননের সমস্যা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়েছিল। আর এবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে চিঠি দিল। এই নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে মোট চারটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।