Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপজ্জনক হলেও অনিন্দ্যসুন্দর এয়ারপোর্টের শহর পারু

একলাছ হক, পারু (ভূটান) থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পারুর রাস্তায় খুব একটা ভিড় নেই। উঁচু পাহাড়ি রাস্তা, এঁকে বেঁকে চলতে হয়। একদিকে খাড়া পাথর, অন্যদিকে গভীর খাদ। অপূর্ব পর্বতমালা, গাঢ় সবুজ থেকে দূর দূরান্তে আবছা ধূসর হয়ে আকাশে মিশে গেছে। অনিন্দ্য সুন্দর ও বিপজ্জনক এয়ারপোর্টের শহর পারু। রাজধানী থিম্পু থেকে ৬৫কিলোমিটার দূরের শহরটি ভূটানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর। এয়ারপোর্টের শহরও বলা হয় পারুকে। কারণ সারা দেশের একটি মাত্র এয়ারপোর্ট এই পারুতেই। একটাই রানওয়ে, শহরের ঠিক মাঝখানে তৈরি। পৃথিবীর বিপজ্জনক রানওয়েগুলোর মধ্যে পারুর অবস্থান বেশ ওপরের দিকেই।
কারণ এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হলে দুটো পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বিমান চালাতে হয়। পারু উপত্যকায় সেগুন গাছের শ্রেণী। সিডার ও ফার গাছের ভিড় বেশি দেখা যায়। অনেক নিচে খাদের দিকে তাকালে ঝিলমিল রূপালী ফিতের মতো পাহাড়ি নদী চলে এঁকে বেঁকে, কখনো ডানদিকে, কখনো বাঁয়ে। রাজধানী থিম্পু থেকে পারু যাবার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অভাব নেই। রাস্তার এক পাশে পাহাড়ের গায়ে আপেল বাগান। আপেল ছাড়াও স্থানীয় অনেক জাতের ফলের চাষ হয়। পথের ধারে মেয়েরা এসব ফলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে।
পর্যটকরাও সাচ্ছন্দে বিভিন্ন ফল কেনেন। পাহাড়ের উপত্যকায় বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব উপত্যকায় উৎপাদিত ধান তাদের প্রয়োজন মেটায়। পথে পড়ে ছোটখাট শহর। দল বেঁধে স্কুলযাত্রী ছেলেমেয়েদের দেখা যায়। সবাই দেশীয় পোশাকে সজ্জিত। পুরুষদের গায়ে ‹ঘো› অনেকটা হাঁটু পর্য়ন্ত লম্বা হাউসকোট, বেল্ট বাঁধা ও পায়ে লম্বা মোজা। মেয়েদের পরনে লম্বা পা পর্যন্ত কিরা স্কার্ট ও গায়ে ফুল হাতা বøাউজ। মেয়েদের গায়ে থাকে রঙিন শাল। সেটা প্রয়োজনে বাচ্চাদের পিঠে বাঁধার জন্য ব্যবহৃত হয়। রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায় লম্বা দড়ি বাঁধা প্রার্থনা-পতাকা। নানা রংয়ের ছোট্ট কাপড়ে তাতে প্রার্থনা ছাপা। সেগুলি দড়িতে বেঁধে টাঙিয়ে দেয়। কোনো কোনো জায়গায় বাঁশ পুঁতে তাতে লম্বা পতাকা বাঁধা। পারুর রিমপুন জং ভূটানের প্রধান লামার তৈরি, প্রায় ১৬৪৬ সালে। এটি এদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও সুরক্ষিত দুর্গ। বাইরে পানির নালা, তার ওপর কাঠের পুল দিয়ে ভিতরে ঢোকার দরজা। বিরাট দুর্গটিতে আছে সাধু সন্তদের থাকা খাওয়ার জায়গা। আছে প্রার্থনা মন্দির ও সারিবদ্ধ প্রার্থনা চাকা। প্রত্যেকটি দেয়ালে সুন্দর ছবি আঁকা বুদ্ধের কাহিনী বা পঞ্চতন্ত্র। কাঠের ছাদ ও দরজা, জানালার ফ্রেমগুলি সুন্দর ভূটানী স্টাইলে খোদাই ও রং করা। পারুর খুব কাছেই আছে একটি মন্দির, নাম কিইচু লাকাং বা কিইচু মন্দির। এটা ভূটানের সবথেকে পুরোনো ও বৌদ্ধ ধর্মের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। মন্দিরটার দুই অংশ। প্রথম মন্দিরের অনুকরণে দ্বিতীয় মন্দিরটি তৈরি হয় ১৯৬৮ সালে। দোকান ও রেস্তরাঁগুলিও বেশ পরিষ্কার। চীনে তৈরি জিনিস খুবই কম। বেশির ভাগই ভূটানে বা ভারতে তৈরি। সব বাড়িঘর এমনকি রাজার প্রাসাদ থেকে দু-তারা হোটেলও দু-তিনতলার বেশি উঁচু নয়। সব বাড়ি ভূটানী ধাঁচে কাঠে তৈরি, ওপরে সুন্দর কারুকার্য দরজা ও জানালার ধারে। কোনো কোনো দোকানের দেয়ালে পুরুষ লিঙ্গের ছবি আঁকা। সেগুলি অবশ্য পর্নগ্রাফি নয়। এগুলি সৌভাগ্যের চিহ্ন। যাতে দুষ্ট লোকের নজর না লাগে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ