ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকার ও বৌদ্ধদের নির্যাতন, বিতাড়ন ও জাতিগত নির্মূল অভিযান এখনো চলছে। এক সময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র আরাকান আজকের রাখাইন সম্পূর্ণ রোহিঙ্গাশূন্য হওয়ার পরই হয়ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের স্রোত থামবে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে রাখাইনের রোহিঙ্গা নামক আদি জনগোষ্ঠির অস্তিত্ব কি নির্মূল হয়ে ভূপৃষ্ঠ হতে মুছে যাবে? আর গোটা বিশ^ একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নিধনযজ্ঞের তামাশা দেখবে? রোহিঙ্গা সমস্যার প্রধান পক্ষ বাংলাদেশের কূটনীতির মতিগতি দেখে এই আশংকা কেন যেন মনে দিন দিন ঘনিভূত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হওয়ার চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে বাংলাদেশ আজ আক্রান্ত। এই আক্রমণ চালানো হয়েছে হত্যা, নির্যাতন, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে লাখে লাখে মানুষ চাপিয়ে দিয়ে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের উপর নজিরবিহীন নির্যাতনে সারা বিশে^ হৈচৈ চললেও বাংলাদেশ উদারতা ও মানবতার উদাহরণ সৃষ্টির জন্য অসম্ভব রকমের ধৈর্য নিয়ে বসে আছে।
বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অস্তিত্বের প্রশ্ন যতখানি জড়িত, তার চেয়ে বেশি জড়িত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ যদি প্রথম থেকে রোহিঙ্গা ভাইবোনদেরকে প্রাণের দুয়ার খুলে দিয়ে বরণ না করত, তাহলে যে সমস্যা দেখা দিত, তা কল্পনারও বাইরে। ইউরোপের অনেকগুলো উন্নত দেশকে ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধ পীড়িত শরণার্থী সামাল দিতে যেভাবে হিমশিম খেতে হয়েছে তা বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। তবে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি অবারিত সাহায্য ও সহযোগিতার নজির স্থাপন করার ফলে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি এবং প্রাপ্ত খবরাখবর অনুযায়ী আমাদের সেনাবাহিনী বেশ দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি যে, মানবতার বিরুদ্ধে এতবড় আক্রমণের পরও মিয়ানমার কূটনৈতিক চালে বাংলাদেশকে পরাজিত করেছে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম(?) বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ চলাকালে মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা দমন অভিযানকে সমর্থন জানান। এতবড় মানবিক বিপর্যয় ও বাংলাদেশের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া সত্তে¡ও মিয়ানমারকে সতর্ক হওয়ার মতো কোনো বার্তা ভারত এখানো দেয়নি। অপর দুই বন্ধুরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়া তো আগাগোড়াই মিয়ানমারের পক্ষে। প্রশ্ন হলো, তারা এ ঘটনায় বাংলাদেশের দোষ কি পেয়েছে? তারা কি মানুষের জগতে বাস করে না? কেন তারা এখনো মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে? ওসব দেশকে দোষারোপ করার আগে বলব যে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের উসকানিতে ধৈর্যধারণের যে পলিসি নিয়েছে এবং নিজে আক্রান্ত হওয়ার কথা বাইরের দুনিয়ায় বলছে না, তার ফলেই আমাদের এই দশা।
মিয়ানমার বিশ^ জনমতের নিন্দার বোঝা মাথায় নিয়েও একটি পয়েন্টে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আরেকটি পয়েন্টে খোদ বাংলাদেশকে ফাঁদে আটকে ফেলেছে। যে পয়েন্টে দুনিয়ার সামনে বাংলাদেশ সরকার লাজবাব হয়ে আছে তা হলো, শুরু থেকেই মিয়ানমার বলছে যে, রাখাইনে রোহিঙ্গা বলতে কোনো জনগোষ্ঠি নেই, যাদের খেদানো হচ্ছে তারা বাঙালি, বাংলাদেশ হতে অনুপ্রবেশকারী। কোনো দেশে লাখে লাখে অনুপ্রবেশকারী থাকলে তাদেরকে যে কোনো দেশ বের করে দিতে পারে। মিয়ানমারের বন্ধুরা এ কথাই তো বিশ্বাস করছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে রোহিঙ্গারা বাঙালি নয়, বাংলাভাষায় কথা বলে না, বাংলা লিখতে জানে না, বুঝেও না। এদের ভাষার সাথে মিল আছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করেনি, তারা রাখাইনের আদি জনগোষ্ঠি। দেড় হাজার বছর আগে থেকে তাদের বসবাস। আরব বণিকদের সংস্পর্শে চট্টগ্রামের লোকদের একই সময়ে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এ সত্য কথাটি যদি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফোরামে বলিষ্ঠ কণ্ঠে না বলে যে, আমরা মানবতা-উদারতা দেখিয়ে ধৈর্যের সাথে চুপ মেরে আছি, তাহলে শুধু ভারত বা চীন, রাশিয়া কেন, অন্য দেশগুলোর পক্ষেও উল্টে যাওয়া বিচিত্র নয়। দুঃখ হলো, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল এ ব্যাপারে সোচ্চার হলেও সরকারি মহলে নীরবতা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের নাগারিক না হয়েও কোথাও যদি কিছুলোককে ধরে বাংলাদেশি বলে নির্যাতন করা হয়, তা কি বাংলাদেশের জাতিসত্তার চরম অবমাননা নয়? এমতাবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রতিবাদ না করা বা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোর অর্থ কী দাঁড়াতে পারে? বাংলাদেশ কেন বলতে পারবে না যে, এরা বাঙালি নয়, রোহিঙ্গা। হাজার বছরের বেশিকাল ধরে রাখাইনে তাদের অধিবাস। চেহারায় মিল থাকার কারণে যদি বাঙালি বলা হয়, তাহলে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের; এমনকি শ্রীলঙ্কার লোকদের সাথেও তো বাংলাদেশিদের চেহারা ও শারীরিক গঠনের মিল আছে। তাই বলে কি সবাই বাঙালি? বাংলাদেশের অনেক নাগরিক, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের সাথে তো মিয়ানমারের লোকদের ভাষা ও চেহারার মিল পরিচ্ছন্ন এবং তাদের আদি নিবাস বার্মা, একথাও সত্য, তাহলে কি বলতে হবে যে, তারা মিয়ানমারের নাগরিক?
রোহিঙ্গাদের নিজস্ব বর্ণমালা নেই, ভাষার লেখ্যরূপ নেই। কাজেই ভাষার সূত্রেও তো বাঙালি বলা যাবে না। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মিলকে যুক্তি হিসেবে ধরা হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের নাগরিকদের মতো এ যুক্তি গ্রাহ্য হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের স্বতন্ত্র ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে সে বিষয়গুলো বিশ^সমাজে সঠিকভাবে তুলে ধরলেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের মিথ্যা প্রচারণার জবাব দিতে পারত এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও জাতিসত্তার জন্য মিয়ানমার যে সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে তার সমাধানের পথ বের হয়ে আসত।
মিয়ানমারের যে প্রচারণার ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি, তা হলো মিয়ানমার বলছে যে, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী এবং তাদের মাঝে আরসা নামে এক ভয়ানক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আছে। কাজেই তাদের দমন করতে হবে। একটি বিষয় সামনে রাখলে প্রচারণাটি কতখানি হাস্যকর তা বুঝা একেবারেই সহজ। গত ২৪ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন একটি সুপারিশমালা প্রকাশ করে। তাতে প্রধানত দুটি বিষয় ছিল, এক. রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, দুই. রোহিঙ্গাদের দেশের ভেতরে স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। এই রিপোর্ট প্রকাশের ফলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মনে আনন্দের দোলা লেগেছিল। কারণ, সেই সুপারিশে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছিল এবং তাদের ন্যূনতম অধিকারের স্বীকৃতি ছিল। কিন্তু মিডিয়ায় খবর এলো, ঐদিনই একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রæপ নাকি একযোগে মিয়ানমারের ত্রিশটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা করে। তার পরদিন ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় সূ চি সরকারের সামরিক অভিযান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ। বুঝাই যায় যে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের শত্রæরাই এই হামলার নাটক সাজিয়েছিল।
আমাদের দুঃখ হলো, বাংলাদেশ তো নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব আছে কিনা, থাকলেও একযোগে ত্রিশটি ফাঁড়িতে আক্রমণ চালানোর মুরোদ আছে কিনা, কিংবা আনান কমিশনের সুপারিশ প্রকাশের দিনেই এ ধরনের হামলা চালানোর রহস্য কী, তা জানার কথা। অথচ আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, ২৫ আগস্ট যখন রাখাইনে গণহত্যা শুরু হলো এবং হাজার হাজার বিতাড়িত রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধ নাফ নদীতে ভাসছিল তখন বাংলাদেশের পক্ষে ঘোষণা দেয়া হলো, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের সাথে যৌথভাবে নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করবে। আমরা দেখেছি, মিয়ানমার সে প্রস্তাবে সায় দেয়নি। কারণ, তারা তো এর রহস্য ভালোভাবে জানে। অথচ বাংলাদেশ এই সহজ কথাটুকু বুঝতে পারল না।
ধরে নিলাম, রাখাইনে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আছে। তাদের তৎপরতাও আছে। তাই বলে কি তাদের দমন না করে একটি বিশাল জনগোষ্ঠিকে নির্মূল করতে হবে। পার্র্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের সাথে শান্তি চুক্তির একটি উদাহরণ তো আমাদের আছে। তাছাড়া মিয়ানমার যেখানে রাখাইন অঞ্চলে বিদেশি সাংবাদিক; এমনকি জাতিসংঘ কর্মকর্তাদেরও প্রবেশ করতে দেয় না, সেখানে তার এসব দাবির সত্যতা কী আছে?
যখন বিশ^বাসী মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল, সারা দুনিয়ায় মিয়ানমার এক ঘরে হওয়ার উপক্রম হলো, তখনকার পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গত ২ অক্টোবর মিয়ানমারের এক মন্ত্রী ঢাকা সফরে এলেন। পরদিন সংবাদপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে যে বিবৃতি এলো তাতে মনে হয়েছে, আমরা মিয়নমারের পাতানো ফাঁদে সম্পূর্ণ জড়িয়ে গেছি। বিবৃতিতে বলা হলো, ‘মিয়ানমারের মন্ত্রীর সাথে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।’ মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী তখনও রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন জ¦লছিল এবং হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা সমানে আসছিল। এর মধ্যে ঢাকায় ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ এর খবর সমগ্র বিশে^ বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে যে জনমত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভের যে আগুন জ্বলছিল তা দপ করে নিভিয়ে দিয়েছে। সবাই ভাবছে, আক্রান্ত বাংলাদেশ যেখানে মিয়ানমারের সাথে পিরিত করেছে সেখানে অন্যদের আল্গা দরদ দেখানোর যুক্তি কোথায়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ‘নিরাপত্তা সহযোগিতার’ বিষয়েও ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। এ কথার অর্থ যে, প্রথম দিককার সীমান্তে যৌথ অভিযান পরিচালনার আগ্রহ দেখানোর মতোই, তা বুঝার জন্য ডিকশনারির প্রয়োজন হবে না। আমরা আশা করেছিলাম, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলবে, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য চাপ দিবে। বিশে^র বিভিন্ন দেশ যেভাবে মিয়ানমারের প্রতি দোষারোপ করছে, চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশ তার পুনরাবৃত্তি করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে সমস্যা সমাধানের জন্য যে পাঁচটি পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন, অন্তত সে পয়েন্টগুলো নিয়ে কথা বলবে। এমনকি কফি আনান কমিশন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফেরত দান ও চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহরের যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়নের জন্য বলবে; অথচ মিয়ানমারের গায়ে লাগে এমন একটি কথাও বাংলাদেশ বলল না, বলেছে বলে আমরা জানতে পারিনি।
প্রসঙ্গত যারা আরাকান মুক্ত করার জন্য অস্ত্র ধরার কথা বলেন, কথাটি শ্লোগান হিসেবে সুন্দর শোনালেও আসলে তা আরেকটি পাতানো ফাঁদ। রোহিঙ্গা বা মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার কৌশল হিসেবে এই ফাঁদ অনলাইনে সক্রিয়। সশস্ত্র অভিযান বা আন্দোলনের জন্য প্রথম শর্ত রাষ্ট্রশক্তি হাতে থাকা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বর্তমান সময়ে সশস্ত্র জিহাদ জায়েয নয়, এর পক্ষে বহু দলিল আছে। সবচেয়ে বড় দলিল, মুসলমানরা মক্কার জীবনে চরম নির্যাতিত হওয়া সত্তে¡ও মদিনা হিজরত এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কুরআন মজিদে কিতাল বা সশস্ত্র লড়াইয়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। বুঝতে হবে, এখন মিডিয়ার যুগ। প্রথম যুদ্ধটা হতে হবে মিডিয়ায়।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, লাখে লাখে রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে মানবেতর জীবন বেছে নিয়েছে। সরকার তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো কথা ভাবছে না; বরং কীভাবে উদারতা দেখিয়ে বাহবা কুড়ানো যায় তার ফিকির করছে। ক’দিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে একান্ত আলাপের প্রসঙ্গ টেনে আজকের লেখা শেষ করতে চাই। বন্ধু বলল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কিন্তু একটি পুরুস্কার পেতে যাচ্ছি। বললাম, কেন? আমরা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছি, সেজন্য। বললাম, দৈনিক ইনকিলাবে ৩ অক্টোবর সম্পাদকীয় পাতায় আমার একটি নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘প্রাণের দুয়ার খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ।’ মনে মনে প্রীত হলাম। জানতে চাইলাম, পুরস্কারটি কীভাবে আসবে? বলল, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আরো উদারতা, মানবতা দেখাতে হবে। দূরান্তের কোনো ভাসানচরে তাদের পুনর্বাসিত করতে হবে। বললাম, মারাত্মক চিন্তা তো!! মিয়ানমার রাখাইনকে মুসলমান শূন্য করার যে পরিকল্পনা নিয়ে ২৫ আগস্ট থেকে নির্যাতন, বিতাড়ন ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে সে পরিকল্পনাই তো তুমি বাস্তবায়নের কথা ভাবছ? রোহিঙ্গারা আর কখনো রাখাইনে ফিরে যাবে না, এমন চিন্তা কীভাবে করতে পারো? আমরা তো চাই, তাদেরকে সম্মানজনকভাবে তাদের পিতৃপুরুষের ভিটেমাটিতে ফেরত পাঠানো হোক। আগের বারে যাদের ফেরত নিয়েছে তাদের নাকি বাঙালি ক্যাম্প নামক খোঁয়াড় বানিয়ে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনটি যাতে না হয় তার জন্য সরকার অন্তত কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য দৌড়ঝাপ দিক। বন্ধুকে বুঝিয়ে বললাম, যে জল্পনা-কল্পনা তোমাকে আচ্ছন্ন করেছে তা কোনো পুরস্কারের প্রস্তাব নয়, বরং ঝুলানো আস্ত মূলা, প্রতারণার পাতানো ফাঁদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।