পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা ইস্যু এখন বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল সংকট সমাধানে কাজ করছে। বিপন্ন রোহিঙ্গার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে একমাত্র বাংলাদেশই বিপন্ন রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে আত্মমানবতার সেবায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। চীন-ভারত নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঝুকি নেয়নি। বরং হন্তারক মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন দিয়েছে। নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমরা শুধু জন্মভূমি হারায়নি; তারা নানাভাবে নিগৃহিত, নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের ওপর পৈচাসিকতা চালানোয় শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানসিক আঘাত এখনো কাটেনি। যাপিত জীবনে রোহিঙ্গারা খুবই সহজ-সরল ধর্মপ্রিয়। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তার মর্যাদা রক্ষা করতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রয়েছে শরণার্থী হিসেবে নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে নিজেদের চরম ক্ষতি জেনেও দেশহারা বাস্তচ্যূত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়েছে; তাদের খাদ্য-চিকিৎসা-শিক্ষার জন্য নানান উদ্যোগ নিচ্ছে; তেমনি রোহিঙ্গাদেরও শরণার্থী হিসেবে পরদেশে সুস্থভাবে থাকার দায়-দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষতি-দূর্নাম হয়, আইন শৃংখলার অবণতি হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় রোহিঙ্গাদের উচিত এমন কর্ম থেকে বিরত থাকা। কোনো অপকর্ম যাতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কেউ করতে না পারে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতৃস্থানীয়দের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সময় জীবন বাঁচাতে মানুষ ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। শিল্পে সমৃদ্ধ-অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত ইউরোপের দেশগুলো দুই তিন লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে চায়নি। নিজেদের মানবতাবাদী প্রমাণের লক্ষ্যে কিছু শরণার্থীকে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। অনেক দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ঝুকি নেয়নি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো অভিবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছেন। অথচ অর্থনীতিতে দুর্বল এবং আয়োতনে চেয়ে অধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশ ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঝুকি নিয়ে আশ্রয় দিয়েছে। এতে বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, নিজেরা প্রয়োজনে এক বেলা খেয়ে বাকী এক বেলার খাবার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খাওয়াব। প্রধানমন্ত্রীর এই মহানুভবতার মর্যাদা দেয়া রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব বটে।
নাইক্ষ্যাংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের তিন হাজার পাহাড় নষ্ট করে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে। শরণার্থী শিবির নির্মাণ করায় ওই সব পাহাড়ের প্রাকৃতির যৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। শরণার্থীদের বাড়তি চাপে বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটছে। অপ্রিয় হলেও সত্য সে ওই তিন উপজেলায় রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রা এখনই সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। নানা প্রকার অসুবিধার পরও তারা শরণার্থীদের আশ্রয় মেনে নিয়েছেন। এখন শরণার্থীদের উচিত স্থানীয়দের অসুবিধা হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। প্রথমেই বলতে হয় বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে শরণার্থীদের শুধু ত্রাণই দিচ্ছে না; বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের নাম নিবন্ধন করছে। আশ্রয় নেয়া শরণার্থী রোহিঙ্গাদের উচিত নিবন্ধন কার্যক্রমে সহায়তা করা। এটা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেতেও কাজে লাগবে। কারণ অশান্তির রানী নোবেল জয়ী অং সান সুচি ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের যারা বার্মার নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে পারবে তাদের কেবল ফিরিয়ে নেয়া হবে। সে জন্যে হলেও শরণার্থীদের উচিত অন্তত বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রমে নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করা। প্রচার রয়েছে অনেক শরণার্থী নিবন্ধনে নিজেদের নাম পরিচয় এবং রাখাইনের জন্মস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এ ধরণের মানসিকতা রোহিঙ্গাদের নিজের পায়ে কুড়াল মারার নামান্তর। তাদের উচিত নিবন্ধনে প্রকৃত তথ্য দেয়া। এতে ভবিষ্যতে তাদের জন্যই ভাল হবে। মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নিতে ঝামেলা করলে বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ওই নিবন্ধনের কাগজ দেখিয়ে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে পারবে।
শরণার্থী রোহিঙ্গাদের কোনো ভাবেই কোনো ধরনের উষ্কানিতে কান দেয়া-জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগ দস্যুরা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করেছে; বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে; শরণার্থীদের কারো মা ভাই বোন ছেলে স্ত্রীকে হত্যা করেছে। নারীদের ওপর পশুর মতো পৈচাসিকতা চালিয়েছে। শরণার্থীরা সে জন্য সুচির সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ। সেই সুযোগ নিয়ে কোনো ব্যাক্তি-গোষ্ঠী মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে বিয়োদগার করে শরণার্থীদের উত্তপ্ত করতে পারে। বর্মী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উষ্কে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের উষ্কানীতে কোনো ভাবেই জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। বরং অপকর্মে জড়ালে রোহিঙ্গাদের জন্য হিতে বিপরীত হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের ভূমিতে বসে প্রতিবেশি বন্ধু দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা বরদাস্ত করবে না।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারের রাখাইনে সম্পদশালী ছিলেন। পালিয়ে আসার সময় কিছুই সাথে আনতে পারেননি। যা নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন সেটাও পথে কেড়ে নেয় মগ দস্যুরা। সীমান্ত পাড় হয়ে শরণার্থী শিবিরে এসে এখন রিক্ত। আবার অনেক শরণার্থী আগ থেকেই আর্থিক ভাবে দুর্বল। পরিবারের লোকজন অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মাদক চোরাচালানি ও ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারে। সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আশ্রিত কোনো রোহিঙ্গার মাদক ব্যবসা বা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শুধু তাই নয় এ ধরণের ঘটনা আশ্রয় নেয়া সকল শরণার্থীর বাংলাদেশে নিরাপদে থাকার নিশ্চয়তাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে। ফলে শিবিরে থাকা দু’চারজন শরণার্থীও যাতে এ ধরনের আইন শৃংখলা বিরোধী কাজে জড়িয়ে না পড়তে পারে সে দিকে শিবিরের দায়িত্বশীলদের সজাগ থাকা উচিত। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মিয়ানমার সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ইয়াবা-মাদক উৎপাদন ও ব্যবসা করে থাকে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। আবার বাংলাদেশের টেকনাফ এলাকার একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও ইয়াবা-মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। মিডিয়ার খবরে প্রকাশ ওই এমপির সিÐিকেট ইয়াবার চালান সাগর পথে এনে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়। বাস্তবতায়ও দেখা যায় মিয়ানমার থেকে সাগর পথে বাংলাদেশে লাখ লাখ পিছ ইয়াবার চালান আসার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন শৃংখলা বাহিনী প্রায়ই বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদে এ ধরণের চালান ধরছেন। আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোনো চক্রের লোভ ও প্রলোভনে শরণার্থী শিবিরে থাকা ব্যাক্তিদের ইয়াবা চোরাচালানির কাজে ব্যবহার করতে না পারে সে দিকে সজাগ থাকতে হবে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারীদের অনেকেই স্বামী হারিয়েছেন। অনেক তরুণ-যুবতী রয়েছেন তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পৈচাসিকতার শিকার হয়ে সম্ভ্রম খুইয়েছেন। স্বামী সন্তান হারিয়ে সীমান্ত পাড় হয়ে এখন শরণার্থী। আবার অনেক তরুণী বিয়ের আগেই বর্মী সেনাবাহিনী ও মগদের পৈচাসিকতার শিকার হয়ে বেইজ্জতি হন। এখন শরণার্থী শিবির আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। তাদের কারোই আর্থিক সুবিধার পেতে বা কারো ট্রাপে পড়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। দশ-বিশ জন রোহিঙ্গা নারী-তরুণীর এ ধরণের নোংরা ঘটনায় জড়ালে ১০ লাখ শরণার্থীর বাংলাদেশে থাকার নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেবে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গা আলেম রয়েছেন। এদের কেউ রাখাইনে মসজিদের ইমাম ছিলেন; কেউ মাদ্রাসার শিক্ষকতা করেছেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান হওয়ায় রাখাইন থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমরা অত্যান্ত ধর্মভীরু ও পরহেজগার। সহায় সম্পদ সবকিছু ফেলে শুধু জীবন নিয়ে পালিয়ে আসায় আর্থিক ভাবে এখন দুর্বল। তাছাড়া শরণার্থী শিবিরে প্রচুর শিশু ছেলে মেয়ে রয়েছে যাদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল-মাদ্রাসায় শিক্ষা জরুরী। অনেক শিশু মা-বাবা হারিয়ে এতিম। আত্মীয়-প্রতিবেশির সঙ্গে বাংলাদেশে এসে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এই এতিমদের বসবাসের জন্য এতিম খানা এবং খাওয়া পড়া দরকার; ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রয়োজন আবার অন্যান্যদের আর্থিক সাহার্য সহায়তা অত্যাবশ্যক। এ জন্যই ‘ত্রাণ’ দেয়া হচ্ছে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে। ত্রাণ দেয়া এবং শিক্ষা-চিকিৎসায় কাজ করছে দেশী-বিদেশী এনজিও। আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষার নামে শিশুদের ধর্মান্তর করার টার্গেট নিয়েও কাজ করছে কিছু এনজিও। এ ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের সজাগ থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারন জুলুম চালাচ্ছে নিজেদের ক্ষতি জেনেও আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। শরণার্থী শিবিরে শুধু আর্থিক সুবিধা এবং লেখাপড়ার নামে কেউ যাতে ধর্মান্তর না হন সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রাদ্রীদের টার্গেট বড় ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড়িতের আর্থিক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাহাড়ি জাতীগোষ্ঠির অনেককেই ধর্মান্তর করেছে। ফলে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে শতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক বৈকি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।