Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধন ত্রুটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিতে ফেলবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আনাদলু বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন
বাংলাদেশের কক্সবাজারে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের একজন প্রতিনিধি। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতির বেশ কয়েক দিন পর এই উদ্বেগের বিষয়টি সামনে এল।
আরব আমিরাতে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি ও আইটি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আইঊব বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনকালে ব্যক্তিগত তথ্যে কোন ধরনের মারাত্মক ও কৌশলগত ত্রুটি ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরা কঠিন করে তুলতে পারে’।
জাতিসঙ্ঘের মতে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ৫ লাখ ৭ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বলপূর্বক বাস্তুচ্যূতির শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, বৌদ্ধ জঙ্গীরা সেখানে পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের হত্যা এবং বাড়িঘর লুটপাট ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ায় অন্যরা জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মতে, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৩ হাজারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে।
আইঊব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশের অনুমতি এবং তাদের নিবন্ধন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ সরকার গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং তাদের বায়োমেট্রিক কার্ড প্রদান করে। এদের অনেকের কাছেই মিয়ানমারের কোন আইনগত প্রমাণপত্রই নেই। আইঊব সতর্কতা ব্যক্ত করে বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সময় এ প্রমাণপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তিনি দাবি করেন, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং লিখনে কিছু ত্রুটি রয়েছে।
কৌশলগত গুরুত্ব
আনাদলু বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন কার্ডে ব্যক্তিগত বিবরণ এবং ঠিকানা লেখা মিয়ানমারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
‘বাংলাদেশে ঠিকানা লেখা হয়েছে নিম্নোক্ত ফরম্যাটে: নাম, গ্রামের নাম, ডাকঘর, পুলিশ স্টেশন, জেলা। কিন্তু মিয়ানমারে ঠিকানা লেখার পদ্ধতি হল, নাম, গ্রাম/ওয়ার্ড-এর নাম, গ্রাম ট্র্যাক-এর নাম, টাউনশিপ, ডিস্ট্রিক্ট’।
তিনি উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত সঠিক তথ্য দিয়ে নিবন্ধন ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’, কারণ, যাচাই প্রক্রিয়ার সময় এটাই হবে লাখ লাখ রোহিঙ্গা একমাত্র দলিল।
রোহিঙ্গা কর্তৃপক্ষের কথায়, ব্যাপক যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কেবলমাত্র যাচাইকৃত রোহিঙ্গারাই তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাবার সুযোগ পাবে। তবে প্রক্রিয়াটি নিয়ে ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা কিছু নিবন্ধন কার্ডে দেখা যাচ্ছে মূল ঠিকানার সাথে কার্ডে লেখা ঠিকানার কোন মিল নেই। ‘এটা এ কারণে হতে পারে যে, নিবন্ধন কেন্দ্রে কর্মরত স্বেচ্ছাসবীরা বাঙালি এবং মিয়ানমারের সরকারি পদ্ধতি সম্পর্কে তারা অবহিত নয়’ -বলেন আইঊব।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ব্যক্তিগত বিবরণের ত্রুটি ‘প্রত্যাবাসনের সময় অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা, বিলম্ব ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে’।
‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, সঠিক পদ্ধতিতে ডাটা এন্ট্রিতে ভুল হলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কোন সুনির্দিষ্ট শরণার্থী তাদের নাগরিক নয় বলে আপত্তি তুলতে পারে, ইতঃপূর্বে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে’ -বলেন তিনি।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, ‘ছোট ত্রুটি হতে পারে’ এবং তিনি আরো যোগ করেন যে, তারা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তারা সর্বাধিক যত্ম দেখিয়েছেন।
প্রকল্পটির উপ-পরিচালক লেঃ কর্নেল এ.টি.এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবী যারা রোহিঙ্গাদের ভাষা জানে, তাদের দিয়ে তথ্য, ঠিকানা যাচাই করছি’।
তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রায় ১ লাখ শরণার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন, ‘আমরা শিগগিরই এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব’।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার সময় এ কার্ড ব্যবহার করা হবে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হতে পারে নাও হতে পারে, উচ্চতর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তাছাড়া, নরওয়েজীয় রেফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) রাখাইনে মানবিক সংগঠনকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করেছে। সেখানে দুর্বল বেসামরিক নাগরিকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়াই আটকা পড়ে রয়েছেন।
এনআরসির মহাসচিব জন এজল্যান্ড শুক্রবার বলেন, ‘নরওয়েজীয় রেফিউজি কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষা করছে। আমাদের এমন এলাকাগুলিতে যেতে হবে যেখানে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, অনেক মানুষ পরিষ্কার পানি, খাবার বা আশ্রয়হীন অবস্থায় আটকে থাকতে পারে’।
জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ডজন খানেক ব্যক্তি নিহত হবার পর থেকে তারা রয়েছে হামলার সর্বোচ্চ ভয়ে। গত বছর অক্টোবরে রাখাইনের মংডুতে সীমান্ত চৌকিতে হামলার পর ৫ মাসের কঠোর অভিযানে রোহিঙ্গা গ্রুপগুলোর তথ্যমতে ৪শ’ মানুষ প্রাণ হারায়। জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমার সেনা সদস্যদের হাতে গণধর্ষণ, শিশুকিশোরদের গণহারে হত্যা, নির্মম নির্যাতন এবং গুমের তথ্য প্রকাশ করেছে। এক প্রতিবেদনে তদন্তকারীরা বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতার কারণে মিয়ানমার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। সূত্র : আনাদলু, এবং ঢাকা থেকে প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মুতামিল বিল্লাহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ