পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর গণপরিবহনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। বাস ও মিনিবাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কৌশল সিটিং, গেইটলক ও বিরতিহীন সার্ভিস। সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘সিটিং’ সার্ভিস বহু আগেই ‘চিটিং’ আখ্যা পেয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতিও এটা উপলব্ধি করে সিটিং সার্ভিস বন্ধের উদ্যোগ নেয়। গত মে মাসে মালিক সমিতির নেয়া সেই উদ্যোগও পন্ড হয়ে যায় স্বার্থন্বেষী মালিকদের কারসাজিতে।
সে সময় বিআরটিএ’এর মোবাইল কোর্টের অভিযান শুরু হলে নগরী থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় বাস ও মিনিবাস। এক পর্যায়ে পরিবহন যান সঙ্কটে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে সিটিং সার্ভিসের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। বিআরটিএর পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানীকে প্রধান করে গঠন করা হয় পেশাজীবীদের সমন্বয়ে আট সদস্যের কমিটি। গেলো ঈদুল আজহার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচবি মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রী হয়রানী বন্ধে এতোদিন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীন ছিল। এখন তারা দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এর দায়ভার পেশাজীবীদের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, বিআরটিএ ইচ্ছা করলে রুটভিত্তিক বাস মালিকদের ডেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারী দিতে পারে। এরপর কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তারা সেটা করে না। সাধারণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ বাসেই বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। সকালে পিক আওয়ারে যখন যাত্রীদের চাপ থাকে তখন সব বাসই হয়ে যায় সিটিং ও বিরতিহীন। এই সিটিং ও বিরতিহীনের দোহাই দিয়ে একেবারে শেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করা হয়। মাঝপথে কেউ নামলেও সেই স্থানের ভাড়া আর কার্যকর করা হয় না। যাত্রীরা এ নিয়ে আপত্তি করলেই হেলপার বা কন্ডাক্টর সাফ কথা জানিয়ে দেয়, এটা সিটিং বা বিরতিহীন গাড়ি, যেখানেই নামেন না কেনো ভাড়া একই। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরীপের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে পিকআওয়ারে ৯৮ শতাংশ বাসই সিটিং বা বিরতিহীন হিসাবে চলাচল করে। অফপিক আওয়ারে এর সংখ্যা ৭০ শতাংশ। এই সিটিং ও বিরতিহীনের কবলে পড়ে যাত্রীদের ৫ টাকা ভাড়া দিতে হয় ৫ গুণ। উদাহরণ হিসাবে একজন ভুক্তভোগি যাত্রী বলেন, রাজধানীর নর্দা বাজার থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিলোমিটারও নয়। অথচ সকালে যে কোনো বাসে এই দূরত্বে ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। মিরপুরের কালশী থেকে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। বিআরটিএ-এর হিসাব অনুযায়ী এই দূরত্বের সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। অথচ এই রুটে চলাচলকারী সবগুলো বাসে এই অংশের ভাড়া ২৫ টাকা। একইভাবে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু মিরপুর বাংলা কলেজ বা শ্যামলী থেকেও একই ভাড়া নেয়া হয়। আবার কল্যাণপুর টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর ১ নম্বরের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়, অথচ এই অংশের ভাড়া আদায় করা হয় ১০ টাকা। একইভাবে মিরপুর ১২ নম্বরের ভাড়াও ১০ টাকাই। মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। অথচ দূরত্ব হিসাবে এ পথের ভাড়া ১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভুক্তভোগি যাত্রীরা বলেন, এই অসঙ্গতি নিয়ে কথা বললেই পরিবহণ শ্রমিকরা যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, অপমান করে।
ভাড়া নিয়ে এ অসঙ্গতির কথা স্বীকার করেছেন বেশ কয়েকজন বাস মালিক। তাদের যুক্তি হলো পিকআওয়ারে একদিকে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও অপরদিকে যাত্রী থাকে না বললেই চলে। খরচ পোষাতে তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেন। তবে এর বিপক্ষেও মত দিয়েছেন কয়েকজন মালিক। তারা বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে গিয়ে বাসের হেলপার কন্ডাক্টরের সাথে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডার জের ধরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এজন্য তারা সিটিং সার্ভিস পরিবর্তনের পক্ষে।
জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা শহরে ১৫৯টি কোম্পানির বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে বাস ৪ হাজার ৯৩৭টি এবং মিনিবাস রয়েছে ২ হাজার ৮২৯টি। ৩২০টি রুটের মধ্যে ১৮০ থেকে ১৯০টি রুট সচল রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের জন্য দায়ী বেসরকারি বাস কোম্পানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। এই নির্ভরতার সুযোগে যখন-তখন মানুষকে জিম্মি করে যান চলাচল বন্ধ রাখতে পারেন মালিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি সুবিধামতো যে কোনো বাসকে যখন তখন সিটিংয়ে রুপান্তরিত করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত ভাড়ার বৈধতা আদায়ে নিত্য-নতুন কৌশল অবলম্বন করতেও দ্বিধা করে না মালিকপক্ষ।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১১৬ দশমিক ৮ বর্গমাইল আয়তনের রাজধানীতে ১২২টি রুটে চলাচল করে প্রায় ৫ হাজার বাস-মিনিবাস। অথচ ঢাকার জনসংখ্যা এখন প্রায় ২ কোটি। জনসংখ্যার তুলনায় রুট ও গণপরিবহন কম থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছে লাখো মানুষ। সাধারণ মানুষের এসব ভোগান্তির সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন গণপরিবহন কোম্পানি। চলতি বছরের জুন মাসে নগরীর সিটিং সার্ভিস নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীতে ৮৮ শতাংশ গাড়ি চলাচল করে সিটিং সার্ভিস লোগো লাগিয়ে। এগুলোতে আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। সিটিং হলেও এসব বাস নির্ধারিত স্টপেজ বাদ দিয়ে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে বাসগুলো যাত্রী ওঠা-নামা করায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।