পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। গতকাল শুক্রবারও ছিল ঘরমুখী মানুষের চাপ। এ সুযোগে রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে।
রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বাসের সংখ্যা কম। এ সুযোগ নিয়ে ঢাকায় চলাচলকারী বাস এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে চলাচল করা বাসগুলো তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বেশিরভাগ বাসে গেটলক সার্ভিস চালু ও রাজধানীতে সার্ভিস না দিয়ে বাস অন্য জেলায় চলে যাওয়াসহ নানান অনিয়ম চোখে পড়েছে। ফলে পরিবহন সঙ্কট ও ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, বাড্ডা, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে শত শত মানুষ। কেউ যাবেন বাড়িতে, আবার কেউবা যাবেন প্রয়োজনীয় কাজে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ির দেখা মেলা দায়। অনেকক্ষণ পর পর একটি দুটি গাড়ি এলেও তাতে ঠাঁই নেই তিল ধারণের। গেটে ঝুলছে মানুষ। আর এই সুযোগেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি। ফলে গাড়ির সঙ্কটের মধ্যে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়াই দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রাজধানীর উত্তরা, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে, গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। হাঁটতে হাঁটতে যানবাহন খুঁজছেন। উত্তরা থেকে অনেকেই হেঁটে আবদুল্লাহ পুর এবং কেউ কেউ টঙ্গী পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছেন। সেখানে বাস ধরে গ্রামে ফিরে যাবেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে গাবতলী এলাকায়। যারা বাস পাননি তারা দু’তিন কিলোমিটার দূরের স্পটে গিয়ে বাস ধরার চেষ্টা করছেন। আর রাজধানীতে যারা কাজে বের হয়েছেন তাদের কেউ কেউ বাস না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
সাভার থেকে চিটাগাং রোডে চলাচলকারী মৌমিতা, ধামরাই, ঠিকানা পরিবহনের অনেক বাস রাজধানীর ভেতরে আসছে না আজ। গাবতলী থেকে ট্রিপ নিয়ে চলে যাচ্ছে মানিগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে। সাভার-গাবতলী-গুলিস্তান রুটে পরিবহন সঙ্কটের জন্য এ অবস্থাও দায়ী।
পরিবহন সঙ্কটের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা গুলিস্তানগামী গাড়িগুলো শ্যামলী থেকে গুলিস্তানের ভাড়া পাঁচ গুণ বাড়িয়ে আদায় করছে ১৫০ টাকা। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশি রাজধানীর শ্যামলী বাস পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠতে ব্যর্থ হন শহিদুল ইসলাম। অবশেষে গাবতলী থেকে গুলিস্থানগামী বিআরটিসি একটি দ্বিতল গাড়িতে ওঠেন। এরপর ভাড়া দিতে গেলে বাধে বিপত্তি। যেখানে সাধারণ সময়ে শ্যামলী থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়, সেখানে ভাড়া দাবি করা হয় ১০০ টাকা। এত ভাড়ার বিষয়ে প্রতিবেদক চালকের সহকারীকে প্রশ্ন করলে কোনো কথার উত্তর দিতে এবং ভাড়া কম নিতে নারাজ তিনি। প্রশ্নের উত্তরে একটিই জবাব ‘আজকে ভাড়া এমনই!’
কন্ডাক্টর সবশেষে ৮০ টাকা ভাড়া দিতে বললেও তাকে ন্যায্য ভাড়ার তিনগুণ বেশি ৫০ টাকা দিয়ে শাহবাগে নামেন তিনি।
এদিকে যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার শেষ নেই গাড়ির মধ্যে। যাত্রীরা অভিযোগ করছেন গাড়িতে উঠলেই ১০ টাকার ভাড়াও আদায় কারা হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। তবে এই বেশি ভাড়া দিতে যাত্রীরা নারাজ থাকলেও তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির শিকার’।
একই চিত্র দেখা গেছে গাজীপুর থেকে সদরঘাট, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীগামী ভিক্টর, রাইদা, আকাশ ও তুরাগ বাসেও। এ রুটের সবচেয়ে লোকাল পরিবহন হিসেবে পরিচিত তুরাগের বাসও যাচ্ছে গেটলক হয়ে। ভাড়াও কয়েকগুন বেশি। শুলিস্তান থেকে কাঁচপুর, চিটাগাং রোডে চলাচল করা শ্রাবণ বাসও দ্বিগুন তিনগুন বেশি ভাড়া আদায় করছে। জানতে চাইলে এক চালক বলেন, স্যার, বাসের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ ড্রাইভার ছুটিতে গেছেন। ফলে মালিক কম বাস চালাচ্ছে। তাছাড়া সব চাকরিতে ঈদ বোনাস রয়েছে বাসের ড্রাইভার, হেলপারদের বোনাস নেই। ধরে নেন এটাই ঈদ বোনাম।
শুধু তাই নয়, বাসে বেশি ভাড়া নেয়ার প্রতিবাদ করায় যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এছাড়া অন্য প্রতিবাদকারী যাত্রীদের বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে গণপরিবহন সংকটের মধ্যে অ্যাপে চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি, রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনেই মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
পরিস্থিতির শিকার একাধিক যাত্রী সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, ঈদের অযুহাতে এবং গাড়ির সংকটে এতো বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে যে সহ্য করার মতো না। কিন্তু নিরুপায় হয়েই তাদের গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এ জন্য সড়ক পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের দুষছেন তারা। বলছেন, বিষয়টি ঠিকঠাক মনিটরিং করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
নগরীর প্রতিটি লেগুনা সার্ভিসের ভাড়া কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও সদরঘাট থেকে গুলিস্থান পথে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরুত্বে লেগুনার ভাড়া ১৫ টাকা হলেও এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই চিত্র নগরীর সব লেগুনা রুটে। রিকশা ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা গুলশান, বনানী, বাড়িধারা থেকে স্বাভাবিক সময়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল বা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াত করা গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে এই পথে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া গুণতে হচ্ছে বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বেশি ভাড়া নিয়ে ভাড়ার নৈরাজ্যের বিষয়ে অভিযোগ তুলছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তাদের পর্যবেক্ষণের পর শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল, নৌ-পথের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সিটি সার্ভিসের বাসের ভাড়া কোনো কোনো পথে ৫ থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে সায়েদাবাদে ৫০ টাকার বাস ভাড়া ৩০০ টাকা নিতে দেখা গেছে। শ্যামলী থেকে গুলিস্থানে ৩০ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। ধানমন্ডি থেকে সদরঘাট ২৫ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। টার্মিনাল কেন্দ্রিক নয়, এমন পথে যাত্রী প্রতি ওঠা-নামা ভাড়া কোনো কোনো বাসে ৫০ টাকা আবার কোনোটায় ১০০ টাকা আদায়ের নৈরাজ্য এখন চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।