নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথম দিনে দুই সেঞ্চুরি, দু’জন তিন অঙ্কের পথে- ঝুলিতে ৩ উইকেটে ৪২৮। বøুমফন্টেইনে গতকাল বাকি দু’জন করলেন সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকাও চড়লো রানপাহাড়ে। ৪ উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা যখন প্রথম ইনিংসের ইতি টানল ততক্ষণে রান গিয়ে ঠেকেছে ৫৭৩। পচেফস্ট্রুম টেস্টে ১৪৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ৩ উইকেট হারিয়েই দল স্পর্শ করল পাঁচশ, মাত্র ১০৮.১ ওভারেই!
টেস্টে এক ইনিংসে চার সেঞ্চুরি ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল ঘটনা নয়। বরং এক ইনিংসে পাঁচ সেঞ্চুরির ইতিহাস আছে অস্ট্রেলিয়ার। তবে সেটা দ্বিতীয় ইনিংসে। ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানেরও পাঁচ ব্যাটসম্যন দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে প্রথম ইনিংসে এখনো সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির সংখ্যা চারটি। ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস আর অ্যাশওয়েল প্রিন্স সেঞ্চুরি করেছিলেন। গতকাল সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। বৃষ্টির কারণে বøুুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। প্রথম দিনে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার। গতকাল শুরুর পরপরই তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন হাশিম আমলা। ১১৩ বলে ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে আমলা ১৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। ১০৯তম ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ২৮তম সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন তিনি। সেই সাথে সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে পেছনে ফেললেন আমলা। ১১৬ ম্যাচে ২৭টি সেঞ্চুরি নিয়ে এতোদিন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন স্মিথও। আমলার সামনে এখন কেবল সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। ১৬৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৪৫টি সেঞ্চুরি করে অবসরে যান ক্যালিস। আমলার কিছু পরই ১৪৭ বলে ১২ বাউন্ডারিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিসও। দু’জনের জুটি অতিক্রম করে ২০০ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের নাকের পানি চোখের পানি এক করে প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল, বøুমফন্টেইনের উইকেটে ব্যাট করা কতই সহজ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামতেই সেই একই উইকেট হয়ে গেল ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি! রানপাহাড়ে চাপা পড়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা দূরে থাক, নিদেনপক্ষে লড়াইটুকু পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশের টপ অর্ডার। যেটুকু পারলেন লিটন দাস তাতেও ১৪৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ, পড়লো ফলো অনে!
তামিমের চোটে দলে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকারকে ক্রমাগত শর্ট লেংথে বল করে চাপে রেখেছিলেন দুই প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা ও ডুয়ানে অলিভিয়ের। কিছুটা তটস্থ হয়ে পড়া সৌম্যকে হঠাৎই লেগ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে বল করে উইকেট ছত্রখান করে দেন রাবাদা। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে টপ অর্ডার।
মুমিনুল হক উইকেটে এসে টিকতে পেরেছেন মাত্র ৭ বল। লেগ স্টাম্পের ওপর অলিভিয়েরের বাউন্সার ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বল তাঁর গøাভস ছুঁয়ে জমা পড়ে কুইন্টন ডি ককের হাতে। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২৬/২। এরপর ১০ রানের ব্যবধানে অধিনায়ক মুশফিকও বিদায় নেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল অযথাই খেলতে গিয়ে গালি অঞ্চলে টেম্বা বাভুমাকে দারুণ এক ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন মুশফিক। দলের বিপদে হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মুশফিক আউট হওয়ার দুই ওভার পরই তাঁকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন ওয়েন পারনেল।
চা বিরতি থেকে ফিরেই আউট ইমরুলও (২৬)। যথারীতি বাইরের বল তাড়া করে! অফ স্টাম্পের বাইরে রাবাদার ব্যাক অফ লেংথ বলে চালিয়ে দিলেন ইমরুল। শরীর থেকে বেশ দূরে। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে। কিপার কুইন্টন ডি ককের তৃতীয় ক্যাচ। ইমরুলের আউটের রেশ থাকতে থাকতেই ব্যর্থতার ষোল কলা পূর্ণ করলেন সাব্বির। শিকারি সেই রাবাদা। অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বলটি ড্রাইভ করলেন সাব্বির। ব্যাটের নিচের দিকে লেগে সোজা শট এক্সট্রা কাভারে থাকা পার্নেলের হাতে। রানের খাতাও খুলতে পারলেন না সাব্বির। একে একে আসা যাওয়ার মিছিল সামাল দিতে লড়াইটা চালিয়ে নিচ্ছিলেন লিটন।
¯্রােতের বিপরীতে হাল ধরে ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন শক্ত হাতে। ৯ চারে ৫৩ বলে ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। ষষ্ঠ টেস্টে লিটনের এটি দ্বিতীয় অর্ধশতক। আগেরটিও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে তার দ্বিতীয় টেস্টে। তবে সেই লড়াইও বেশিদূর নিতে পারেনি দলকে ভালো সঙ্গীর ওভাবে। আসা যাওয়ার মিছিলে সামিল ছিলেন তাইজুল (১২), রুবেল (১০), মুস্তাফিজ (০)। এর মাঝে লিটনও থেমেছেন ৭৭ বলে ১৩ চারে ৭০ করে। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৭ রানে। রুবেলকে ফিরিয়ে রাবাদা পূর্ণ করলেন ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ ৫ উইকেট, ৩৩ রানে!
প্রথম ইনিংসে ৪২৬ রানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনেরও শেষ ভাগ। ফলো অন না করানোর কারণ নেই। ফাফ ডু প্লেসি আবার ব্যাটিংয়ে পাঠালেন বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসের ধাক্কা সামলানোর আগেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে। ভীষণ চ্যালেঞ্জিং দিনের শেষ কটি ওভার! সেই চ্যালেঞ্জ নেবার আগেই ১.২ ওভারে দিনের পরিসমাপ্তি টানে আম্পায়াররা। স্বস্তি ফেরে ৭ রানে কোন উইকেট না হারানো বাংলাদেশের ইনিংসেও।
দক্ষিন আফ্রিকার পেসবান্ধব উইকেটে ‘ভালো কিছু সম্ভব না’। এই মনের বাঘই খাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট বৃষ্টির কারণে পঞ্চম দিনে গড়ালেও ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং- কোন কিছুতেই কিছু করে দেখাতে পারেনি সফরকারীরা। এই টেস্টও যেদিকে যাচ্ছে তাতে আরো ভয়ঙ্কর কিছুই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। বিদেশের মাটিতে এমন দৃশ্য আর কতকাল!
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, বøুমফন্টেইন
(২য় টেস্ট, ২য় দিন)
টস : বাংলাদেশ
দ.আফ্রিকা ১ম ইনিংস (১ম দিন শেষে ৪২৮/৩)
রান বল ৪ ৬
আমলা ব শুভাশিষ ১৩২ ১৬৩ ১৭ ০
বাভুমা ক লিটন ব শুভাশিষ ৭ ১২ ১ ০
ডু প্লেসি অপরাজিত ১৩৫ ১৮১ ১৫ ০
ডি কক অপরাজিত ২৮ ২৭ ২ ২
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ২, নো ১, ও ৮) ১৫
মোট (৪ উইকেট ১২০ ওভারে) ৫৭৩ (ডিক্লে.)
উইকেট পতন : ১-২৪৩ (এলগার), ২-২৭৬ (মার্করাম), ৩-২৮৮ (বাভুমা), ৪-৫৩৫ (আমলা)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ২৫-৩-১১৩-০, শুভাশিষ ২৯-৩-১১৮-৩, রুবেল ২২-১-১১৩-১, সৌম্য ৫-০-২১-০, তাইজুল ২৭-০-১৪৫-০, মাহমুদউল্লাহ ৯-২-৩৫-০, মুমিনুল ১-০-৬-০, সাব্বির ২-০-১৬-০।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
ইমরুল ক ডি কক ব রাবাদা ২৬ ৪৬ ৪ ০
সৌম্য ব রাবাদা ৯ ২৪ ২ ০
মুমিনুল ক ডি কক ব অলিভার ৪ ৭ ১ ০
মুশফিকুর ক বাভুমা ব অলিভার ৭ ৮ ১ ০
মাহমুদুল্লাহ ক ডি কক ব পার্নেল ৪ ৬ ১ ০
লিটন ক ডু প্লেসি ব রাবাদা ৭০ ৭৭ ১৩ ০
সাব্বির ব পার্নেল ব রাবাদা ০ ৬ ০ ০
তাইজুল বোল্ড অলিভার ১২ ৩৮ ০ ০
রুবেল বোল্ড রাবাদা ১০ ৩৩ ২ ০
মুস্তাফিজ ক মার্করাম ব মহারাজ ০ ৩ ০ ০
শুভাশিষ অপরাজিত ২ ৯ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৩) ৩
মোট (অলআউট, ৪২.৫ ওভার) ১৪৭
উইকেট পতন : ১-১৩ (সৌম্য), ২-২৬ (মুমনিুল), ৩-৩৬ (মুশফিকুর), ৪-৪৯ (মাহমুদুল্লাহ), ৫-৬১ (ইমরুল), ৬-৬৫ (সাব্বির), ৭-১১৫ (তাইজুল), ৮-১৪৩ (লিটন), ৯-১৪৩ (মুস্তাফিজ), ১০-১৪৭ (রুবেল)।
বোলিং : রাবাদা ১৩.৫-৪-৩৩-৫, অলিভার ১২-৩-৪০-৩, পার্নেল ৭-১-৩৬-১, মহারাজ ৫-২-৭-১, ফেলুকাওয়ে ৫-১-২৮-০।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
ইমরুল ব্যাটিং ৬ ৭ ১ ০
সৌম্য ব্যাটিং ১ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (নেই) ০
মোট (০ উইকেট ১.২ ওভারে) ৭
উইকেট পতন : নেই
বোলিং : রাবাদা ১-০-৬-০, অলিভার ০.২-০-১-০। ২য় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।