পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : পৃথিবীর যে কয়টি দেশের মেয়েরা জন্মগত ভাবে সুন্দরী বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে-শহরে এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্পবয়সী হাজার হাজার মেয়ে রয়েছেন যাদের মুখের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। ওই সব মেয়ের নাক-মুখ-চোখ-কোমড় এবং শারীরিক বর্ণনা দেয়া আমাদের নয়; কেবল কবিদের পক্ষ্যেই সম্ভব। চিরল দাঁত, ডাগর ডাগর চোখের লাখ লাখ প্রতিভাবান মেয়ে দেশে রয়েছেন। কিন্তু হালে দেশের শিল্প সাংস্কৃতির সওদাগরদের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মাজা ভাঙ্গা লাবন্যহীন এবড়ো থেবড়ো দাঁতের মেয়েদের বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচন করা হলো। আবার সেই সুন্দরী নির্বাচনে যে কাÐকারখানা হয়েছে তা এখন টক অব দ্যা কাষ্ট্রি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুন্দরী এবং নারী সমাজকে এভাবে অপমান করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?
সুন্দরী প্রতিযোগিতা কি আমাদের শিল্প সংস্কৃতি? যারা ওই কুৎসিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তাদের পারিবারিক পরিচিতি মিডিয়ার খবরে বের হয়েছে। প্রশ্ন হলো দেশের হাজার হাজার সুন্দরী মেয়ে কেন ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন না? উত্তর সহজ। সুন্দরী প্রতিযোগিতা বা চেহারা বিক্রী ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে তখনই সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। ভারতে এটা দেখা গেলেও বাংলাদেশে এখনোই সুন্দরী নির্বাচনের অপ-সংস্কৃতি দেখা যায়নি। তাই যে সব মেয়ের সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা রয়েছে তাদের কেউ কেউ লোভে পড়লেও এ ধরণের অশ্লীল-বেলেল্লাপনার দিকে পা বাড়াননি। নারীদের মর্যাদা শুধু সুন্দর চেহারায় নয়; শিক্ষা ও আত্মমর্যাদায়। বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সাফল্য দেখিয়েছেন; উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের নারীদের পক্ষ্যে এখনো তা সম্ভব হয়নি। অথচ সেই দেশের মেয়েদের সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে গোটা নারী সমাজের হেয় করার দৃষ্টতা দেখানো হলো! আর নারী নেত্রী, আলেম ওলামা, সুশীল সমাজ নীরব!
টেকনাফ থেকে ঢাকা ১২ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হলো ১৮ ঘন্টায়। বাসে দীর্ঘ সময় দুনিয়ার খবর থেকে বিচ্ছিন্ন। পুত্রের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে বাসায় রাত ১২ টার আগে টিভি দেখাও নিষিদ্ধ। দীর্ঘ সময় পৃথিবীর খবরাখবরের বাইরে থাকায় অজুহাতে খবর দেখার জন্য রিমোট হাতে নিয়ে টিভি খুলতেই চোখে আটকে গেল সরাসরি এক অনুষ্ঠানে। বিএনপির সাবেক এক এমপির মালিকানাধীন টিভির ওই নি¤œমানের অনুষ্ঠানে সুন্দরী প্রতিযোগিত হচ্ছে। সুন্দরীদের যে বিশৃংখল নাচানাচি হচ্ছে তা দেখে চোখ ছানাবড়া। হায় আল্লাহ! এরা বাংলাদেশের সুন্দরী!! টিভির সরাসরি অনুষ্ঠানের এই মান?
অনুষ্ঠানে কারা অতিথি, কারা দর্শক এবং কারা বিচারক প্রথমে বোঝা যায়নি। ভারত থেকে ভাড়া করে আনা উপস্থাপিকা শিনা চৌহান (এই উপস্থাপিকা ক্রিকেটের ধারাভাষ্যে সব সময় বাংলাদেশকে হেয় করার প্রয়াস চালান) অনুষ্ঠান এগিয়ে নিচ্ছেন। হঠাৎ দেখা গেল প্রতিযোগিরা চিরকুট তুলে বিচারকদের আহবান জানাচ্ছেন প্রশ্ন করার জন্য। বিচারকরা যে প্রশ্ন করলেন তা শুনে নিজেকে ধিক্কার দিতে হলো। এই শোবিজ সওদাগরেরা বাংলাদেশের সাংস্কৃতি নের্তৃত্ব দেন? লাইভ অনুষ্ঠানে বুদ্ধি যাচাইয়ে এগুলো প্রশ্নের ধরণ? এরা কি বিদেশের এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখেন না? অন্য বিচারকদের কথা বাদ দিলাম কিন্তু যাদুকর জুয়েল আইচ ও বিবি রাশেল! তারাও ভাড়ামি করেন!! এক পর্যায়ে দেখা গেল বিশ্ব সুন্দরী নাম ঘোষণার জন্য আয়োজকদের স্টেজে ডাকা হলো। সেখানে অনুষ্ঠানের মালিক শোবিজ সওদাগর জনৈক স্বপন চৌধুরী বক্তৃতা দেয়ার পর টিভি মালিকের স্ত্রী বক্তৃতা শুরু করলেন (ঘোষণায় তার নামও ভুল বলা হয়েছিল)। তার বক্তৃতা আর শেষ হয় না। লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা নানা ভাবে বক্তৃতা সংক্ষেপ করার তাড়া দেন। স্টেজের অন্যেরা তাড়া নিচ্ছেন। কিন্তু টিভি মালিকের স্ত্রী বলে কথা! তিনি একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছেন। তিনি যখন থামলেন তখন হঠাৎ উপস্থাপিকা সুন্দরীদের নাম ঘোষণা করলেন। একজন বিচারক উঠে এসে চ্যাম্পিয়নের মাথায় মুকুট গায়ে চ্যাম্পিয়ন লেখা উত্তরি পড়াতে শুরু করলেন। অমনি অন্তর শো বিজের কর্ণধান অনুষ্ঠানের মালিক স্বপন চৌধুরী ঘোষণা দেন ‘চ্যাম্পিয়ন ঘোষণায় ভুল হয়ে গেছে। মূলত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। প্রথম রানার আপ জেসিয়া ইসলাম, দ্বিতীয় রানার আপ জান্নাতুন সুমাইয়া হিমি। আগামী ১৮ নভেম্বর চীনের সাংহাই শহরে অনুষ্ঠেয় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় এরা বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন’। দেখা গেল আগে যাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় উত্তরি খুলে নেয়ায় তিনি চরম বিব্রত ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার চ্য্যাম্পিয়ন পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয়। বিচারকরা অভিযোগ করেন তাদের আগেই চিরকুূট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছি রেজাল্ট যাই হোক কাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে দেশের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো তোলপাড় চলছে। বিবাহিত হওয়ার অপরাধে প্রথম চ্যাম্পিয়নকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয়জনকে নতুন করে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। সেখানেও দেখা যায় আরো একাধিক নির্বাচিত সুন্দরী (!) বিবাহিত। বিবাহিত হওয়ায় যে ভাবে সুন্দরীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সুন্দরীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো তাতে মনে হচ্ছে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলেই তারা যেন পরিত্যাক্ত হয়ে যান। যাদের বিয়ে হয়নি তারা সুন্দরী আর বিয়ে হয়ে গেলেই মেয়েরা হন কুৎসিত! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জয়ীদের দাঁতের গঠন নিয়ে এলোপাথাড়ি পোস্ট এবং সেই পোস্টের নিচে দেয়া হজ্ঝে নানান কমেন্ট! তথাকথিত সুন্দরীরা রীতিমত ভাইরাল! সুন্দরীদের কটাক্ষ, ব্যঙ্গ বিদ্রæপ করা হচ্ছে। যারা সুন্দরী (!) প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তাদের খাটো করা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা নয়; বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা এমন যে সামাজিক-পারিবারিক বন্ধন মান মর্যাদা না থাকলে যে কেউ এমন নারী বাণিজ্যের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। কিন্তু আয়োজকরা চ্যাম্পিয়ন পরিবর্তনসহ নানা পন্থায় তাদের যে ভাবে অপমান-অপদস্ত করছে সেটা কি বোঝার জ্ঞানবুদ্ধি নেই? নিজের মান সম্মান বোঝার বিবেক-বুদ্ধি যাদের নেই তারা কি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রাখেন?
প্রশ্ন হলো ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে হঠাৎ করে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক অন্তর শো বিজের স্বপন চৌধুরী কে? কি তার পরিচয়। এই স্বপন চৌধুরী কোনো শিল্প-সংস্কৃতিসেবী-কবি-সাহিত্যিক-অভিনেতা-নাট্টকার কিছুই নন। দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনে তার কোনো অবদান নেই। তিনি মূলত ভারত থেকে বিভিন্ন শিল্পীদের ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করেন। গত কয়েক বছরে ভারত থেকে নায়ক-নায়িকা ও কষ্ঠশিল্পীদের এনে বিচিত্রানুষ্ঠান করেছেন। বেশ কয়েকবার ভারতের নামী দামী শিল্পীদের নিয়ে আসার খবর প্রচার করে টিকিট বিক্রী করে পরবর্তীতে শিল্পী না আসায় অনুষ্ঠান করতে পারেননি; দর্শকদের সঙ্গে ঠকবাজি করেছেন। বিজাতীয় সংস্কৃতির এই সওদাগর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে যা ইচ্ছে তা খুশি করার নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেটা আবার জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলের নেতার মালিকানাধীন মিডিয়া লাইভ প্রচার করে। এখন দেশের কিছু সংস্কৃতি সেবী বাতাস দিচ্ছেন। কিছু মিডিয়া তথাকথিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ ফেলে দিচ্ছেন। যারা হৈচৈ করছেন তারা কি একবার ভেবেছেন দেশে হাজার হাজার অপরুপা সুন্দরী মেয়ে থাকার পরও কেন শুধু এবড়ো থেবড়ো দাঁত, মাথা মোটা বেঢপ মেয়েরা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলো? দেশের সুন্দরী মেয়েরা কেন ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহী হয়নি? আর বিবাহিত মেয়ে বলেই কাউকে হেনস্তা করা কি নারী সমাজের প্রতি অবমাননা নয়? প্রশ্ন হচ্ছে সংস্কৃতি চর্চার নামে এমন বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার রহস্য কি? বোঝা যাচ্ছে দেশের শিল্প সংস্কৃতি ভিনদেশী অপসংস্কৃতি চর্চার এজেন্টদের খপ্পরে পড়ে গেছে। কিন্তু সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে দেশের নারী সমাজকে অপমান অপদস্ত করার অধিকার কারো নেই। দেশের যারা নারী স্বাধীনতা নারীর অধিকারের আন্দোলন করেন সেই নেত্রীরা এখনো নীরব কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।