Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাসে সন্দিহান রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১:১১ এএম

যাচাইয়ের পর ফেরত নেবে বলে মিয়ানমারের আশ্বাসে সন্দিহান বাংলাদেশে অবস্থানরত মুসলিম রোহিঙ্গারা। তারা কখনও স্বদেশে ফেরত যেতে পারবে কি না তা নিয়ে গত মঙ্গলবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী সেদেশের সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর মিয়ানমার ত্যাগ করেছে যাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে নিন্দা করেছে জাতিসঙ্ঘ। মিয়ানমার অবশ্য জাতিগত নিধন-এর কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার জবাবে তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী বলে প্রমাণিত হলেই কেবল তারা ১৯৯৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী তাদের ফিরিয়ে নেবে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত সোমবার একটি প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছে এবং মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, তারা এ পরিকল্পনার সাথে একমত। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীই হতাশ।
নিজেকে আব্দুল্লাহ নামে পরিচয় দিয়ে একজন রোহিঙ্গা জানান, ‘সবকিছু পুড়ে গেছে, এমনকি মানুষও পুড়ে গেছে’। তিনি মিয়ানমারে ফিরে যাবার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, মানুষ মিয়ানমারে থাকার অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রমাণ দিতে পারবে কি না সন্দেহ।
সমস্যাটির মূল ভিত্তি হচ্ছে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত মিয়ানমারের বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ আখ্যায়িত করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিকে অস্বীকার করা। মিয়ানমার ১৯৯৩ সালের চুক্তির অধীন যদিও রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেয়নি, তবে এবার মিয়ানমারে বসবাসের প্রমাণ দিতে পারলে তাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতার একদিন পরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এর প্রক্রিয়াকে কঠিন বলে উল্লেখ করেন। নাম প্রকাশ না করে সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা এখনও দীর্ঘ প্রক্রিয়া’।
কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি রোহিঙ্গা জনস্রোতের আগে থেকেই বাংলাদেশে অন্তত ৪ লাখ রোহিঙ্গা ছিল, কিন্তু মিয়ানমার বলেছে, তারা প্রমাণসাপেক্ষে শুধুমাত্র সেই রোহিঙ্গাদেরই ফেরত নেবে যারা গত বছর অক্টোবরে সেনা অভিযানের পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে যাদের সংখ্যা ৮৭ হাজারের মতো’।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সংযুক্ত করতে চেয়েছিল জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বলেছি, অনেক রোহিঙ্গার কোন প্রমাণ নেই, কাজেই এ প্রক্রিয়া হওয়া উচিত সহজ। মিয়ানমার বলেছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, কাদেরকে যাচাইয়ের কাজে সংযুক্ত করা হবে’।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, ১৯৯৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমারের হাসপাতালের রেকর্ডও প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট হবে। এটাই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
মুখপাত্র জাও তে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের একটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া রয়েছে, আমরা সে পথেই যাব’।
কিন্তু শরণার্থীদের কাছে প্রমাণপত্র থাকলেও পূর্ণ নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া তাদের অনেকেই স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তায়। তাদের আশঙ্কা নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে গেলে তারা আবার সেই নির্যাতনের মুখেই পড়বেন যা তারা বহু বছর যাবৎ সয়ে আসছেন।
আমিনা খাতুন (৬০) ফিরে যাবার কথা শুনে হেঁসে ওঠেন। তিনি বলেন, আমরা সেখানে গেলে আবার এখানেই ফিরে আসতে হবে। আমাদের অধিকার দিলে আমরা যাব। কিন্তু যারা এ নিশ্চয়তা না নিয়ে গেছে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে।
গত মাসে আনোয়ারা বেগম রয়টার্সকে জানান, তিনি মিয়ানমার থেকে তিন বার পালিয়েছেন। ১৯৭৮ সালের দমন অভিযানের সময় প্রথমবার পালিয়ে আসেন, পরের বছর আবার ফিরে যান। ১৯৯১ সালে আবার পালিয়ে ফিরেন ১৯৯৪ সালে। তিনি আর ফিরে যেতে চান না -৫৫ বছরের এই বৃদ্ধা বলেন। আমি সরকারকে বিশ্বাস করি না। প্রত্যেক বারই সরকার রাজি হয়, আমরা ফিরে যাই এবং তারা তাদের প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করে।
অং সান সু চি সরকারের নিয়োজিত ও সাবেক জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল গত আগস্টে সুপারিশ করে যে, মিয়ানমার সরকারকে নাগরিকত্ব ও জাতি বিষয়ক ১৯৮২ সালের একটি আইন পুনর্বিবেচনা করতে হবে যার ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি গত সোমবার জেনেভায় এক সম্মেলনে বলেন, রাষ্ট্রহীনতা ও স্থানচ্যূতির রোহিঙ্গাদের চেয়ে বেশি প্রমাণ আর কোথাও নেই।
‘নাগরিকত্ব অস্বীকার করা বৈষম্য ও বর্জনের একটি প্রধান দিক যা তাদের দুর্দশায় নিক্ষেপ করেছে’ -বলেন তিনি।
গ্র্যান্ডি নাগরিকত্ব ও অধিকার বিষয়ে তার দু’দফা প্রস্তাব দেন এবং রাখাইন রাজ্য থেকে দারিদ্র্য দূর করতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়ার আহŸান জানান।
ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র আন্দ্রেই মাহেসিস জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, পৃথকভাবে বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা ক্যাম্পে ডায়রিয়া প্রতিরোধে কাজ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএমও’র একজন মুখপাত্র বলেন, শরণার্থীদের স্রোত কমে আসলেও এখন রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। রয়টার্সের একজন চিত্র সাংবাদিক মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন, কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন সেটি কিসের ধোঁয়া।
মানবাধিকার গ্রæপগুলো বলছে, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় ৪শ’ রোহিঙ্গা গ্রামের অর্ধেকের বেশি জ্বালিয়ে ভষ্মীভূত করা হয়েছে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা পলায়নপর লোকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেই সব রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ রুখতে পারেননি যারা তাদের দেশের নাগরিক নয়। সূত্র : রয়টার্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ