পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হঠাৎ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাস ছুটি নেয়া ইস্যুতে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা গেছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। গতকালই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফুলকোট সভা করে বিচারকার্য পরিচালনার দিক নির্দেশনা দেন। উদ্বেগ থেকেই সিনিয়র আইনজীবীরা একের পর এক বৈঠক করেন। গুজব ছড়িয়ে পরে এস কে সিনহাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। আইনজীবীদের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি এস সে সিনহার অবস্থান জানতে ৫ দফা দাবী জানান। তবে অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন ছুটি নেয়া প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করা হয়নি; এটা নিছক গুজব।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র এক মাসের ছুটি মহামান্য প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। দায়িত্ব গ্রহণে পর গতকাল তিনি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের ফুলকোর্ট সভার আয়োজন করেন। সভায় তিনি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সময় মতো কোর্টে আসবেন এবং এজলাসে বসবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ করবেন না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি ছুটির আবেদনে ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্তের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর আরও বিশ্রামের প্রয়োজন। আশা করি তিনি সময় মতো ফিরে আসবেন। এস কে সিনহার ছুটি নেয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দুই একজন বিচারকের জন্য বিচারকাজ বন্ধ থাকবে না। তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বলছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পর্যবেক্ষণে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
সবার দৃষ্টি গতকাল ছিল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের দিকে। কি হয় কি হচ্ছে সেটা জানার জন্য মুখিয়ে ছিলেন সবাই। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক মাসের ছুটি ইস্যুতে সারাদিন বিচারাঙ্গনে ছিল থমথমে অবস্থা। সর্বত্রই আলোচনা কি কারণে প্রধান বিচারপতি ছুটি নিলেন। তাকে কি ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন ছিল সবার মধ্যে। এরই মধ্যে গুজন ছড়িয়ে দেয়া হয় প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি’র পক্ষ থেকেও এই আশঙ্কা প্রকাশ করে তার অবস্থা জানতে চাওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার ‘প্রকৃত কারণ উদঘাটন’ করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে ৩৫ জন সিনিয়র আইনজীবী বৈঠক করেন। সাধারণ আইনজীবীরাও প্রধান বিচারপতির হঠাৎ ছুটি নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন এবং ৫ দফা দাবিনামা দেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ‘জরুরি সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করে বলেন, অসুস্থতার কথা প্রচার করা হলেও প্রধান বিচারপতিকে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি যাতে এক মাসের জন্য ছুটিতে চলে যান সে জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
৫ অগাস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি জাতীয় সংসদ বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগও দাবী করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেননি। রায়ের পর্যবেক্ষণ পরিবর্তনের চেষ্টায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেনদরবার এবং বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিজের অবস্থানে থাকেন অনড়। এ আবস্থায় অর্থমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী ঘোষণা দেন যতবার সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করা হবে ততবারই তা সংসদে পাস করা হবে। কোনো কোনো মন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবেও অবিহিত করেন। সংসদে তাঁর কঠোর সমালোচনা করা হয়। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংসদে দাঁড়িয়ে ‘সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’ এই রায় দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনায় ওই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি ওই রায় ‘ঐতিহাসিক’ উপাধি দেয়। আবার দেশের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও রায়কে ঐতিহাসিক এবং সময়োপযোগী হিসেবে অবিহিত করেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি প্রধান বিচারপতিকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমন করেন। অতপর আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা আন্দোলনে নামেন। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে মঙ্গলবার আদালত খুললে প্রধান বিচারপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তার আগেই গত সোমবার রাতে হঠাৎ করে বিচারপতি এস কে সিনহার এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে। পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটি চাওয়ায় প্রেসিডেন্ট তা অনুমোদন করেছেন। আর এই সময়ে সিনিয়র বিচারক মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার দিনের প্রথমার্ধে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুরে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের সব বিচারককে নিয়ে ফুলকোর্ট সভা ডাকেন তিনি। ফুলকোর্ট সভায় বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হয়। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপস্থিত বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, সময় মতো কোর্টে আসবেন এবং এজলাসে বসবেন। প্রতিটি মামলার রায় দ্রæত সময়ের মধ্যে লেখার চেষ্টা করবেন।
এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী রায়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির ছুটির কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা এটাকে সংযোগ করতে চাইছে আমি বলব তাদের একটা দুরভিসন্ধি আছে। আমার মনে হয় ওনারা একটু ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার চেষ্টা করেছিলেন। এখন সেই চেষ্টা সফল হবে না। সে জন্য ওনারা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি তাঁর ছুটি চাওয়ার আবেদন পত্রে লিখেছেন, তিনি ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং সেগুলো সম্পূর্ণ সারেনি। বিশ্রামের প্রয়োজন। এ জন্য এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি নিজের ছুটি নিজেই নেন। কিন্তু তাঁর ছুটি থাকাকালীন আরেকজন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য প্রেসিডেন্টকে সেটা অবহিত করতে হয়। এই অবহিতপত্রটাই আইন মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া করে; এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে যায়। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেছেন, দুই একজন বিচারকের জন্য বিচারকাজ বন্ধ থাকবে না। প্রধান বিচারপতিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
উল্লেখ্য গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রেসিডেন্টের কাছে এক মাসের ছুটির জন্য আবদন করেন। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি পাঠান। প্রধান বিচারপতি ছুটিতে থাকায় সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন খবর পেয়ে আইনজীবী নেতারা তার কাকরাইলস্থ বাসভবনে গেলে তিনি কারো সঙ্গে দেখা করেননি। প্রথমে জানানো হয় তিনি অসুস্থ। পরবর্তীতিবে বলা হয় তিনি সুস্থ আছেন তবে দেখা করবেন না।
এদিকে আইনজীবী সমিতির ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতি কী কারণে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন তা জানার অধিকার আইনজীবী সমিতির আছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অবশ্যই সাক্ষাৎ করতে হবে। এই বিচারাঙ্গনে কি ঘটেছে প্রকৃত ঘটনা জাতি জানতে চায়। মানুষ যদি জানতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতি কোনো বিচারক সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। দেশের মানুষের আশা-ভরসার শেষ জায়গা হল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি ‘সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন’ করতে না পারে, সেখানেও যদি ‘সরকারের হস্তক্ষেপ’ হয়, তা হবে দুঃখজনক। একটি রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী আইনজীবীরা যেন ‘গেট টুগেদারে’ আসেন; সে বিষয়ে আগেই চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। কিন্তু তিনি নিজেই ছুটিতে গেছেন বলা হচ্ছে। ইতিহাস বলে, কখনও কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত করে এভাবে ছুটি নিয়ে চলে যান নাই। আমাদের সেটা জানার দরকার আছে। কী কারণে, কী চাপে, কী জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন, এবং সকালে এই প্রাঙ্গণে এসেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সঙ্গে কোনো কথা না বলে কেন তিনি সুপ্রিম কোর্ট ত্যাগ করেছেন- সেটা আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির জানার অধিকার আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।