Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। যিনি পদত্যাগী বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার স্থলাভিষিক্ত হলেন। বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করার ৮৬ দিনের মাথায় নতুন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হলো। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দরবার হলে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়ান।
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বর্তমান বিচারক, উচ্চ আদালতের সিনিয়র আইনজীবীসহ পদস্থ বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শপথ শেষে শপথনামায় সই করেন নতুন প্রধান বিচারপতি ও প্রেসিডেন্ট। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর আগে শপথ অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রধান বিচারপতির পোশাকে দরবার হলে প্রবেশ করেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে পৌঁছান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, টোলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর উপেদেষ্টা এইচটি ইমাম ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আরও এসেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার ও আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সিনিযর আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম ও আবদুল বাসেত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে। শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লার জেলার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মুস্তফা আলী এবং মায়ের নাম বেগম কাওসার জাহান। তিনি বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আফ্রিকান স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে ছয় মাসের ‘কমনওয়েলথ ইয়াং ল ইয়ার্স কোর্স’ করেন। বিএসসি ডিগ্রি নেয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। ১৯৮৩ সালে ওকালতি শুরু করেন হাইকোর্টে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিএনপি সরকার আমলে ২০০৩ সালে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হন। ২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারক পদে উন্নীত হন। এছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্ট গঠিত দুটি সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবসরে যাবেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর।
গত সাত বছরে দুজন সিনিয়র বিচারপতির পদত্যাগ:
আওয়ামী লীগের সরকারের গত সাত বছরে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের দুজন সিনিয়র বিচারপতি পদত্যাগ করেন। একজন সরকারের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে অপর জন ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে পত্রে উরে।লক করা হয়েছে। মূল কারণ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ার বলে ধারণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছর ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগেরও দাবি তোলেন। এরই মধ্যে গত ২ অক্টোবর হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি আবেদনে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান প্রেসিডেন্টকে। গত ১৩ অক্টোবর রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এস কে সিনহা। এরপর ১০ নভেম্বর ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনই দেশের বাইরে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তারপর থেকে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ছিল। এরপর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার হাতে ওই দায়িত্বভার দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট।
গত শুক্রবার সিনিয়র বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ডেঙিয়ে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন সরকার। এরপরও পদত্যাগ করেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। অনেকই ধারণা করছিলেন হয়তো বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই হবেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপণ দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের গত সাত বছরে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের দুজন সিনিয়র বিচারপতি পদত্যাগ কর।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা লিখেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রবর্তন করা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুরোপুরি সংবিধানসম্মত এবং বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক বাস্তবতায় এর অধীনে নির্বাচন করার কোনো বিকল্প নেই। কোনোভাবেই এটা গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার পৃথক্করণ, সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্থ করেনি। সেনাসমর্থিত কেয়ার টেকার সরকারব্যবস্থার অপব্যবহারের জন্য তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ব্যর্থতা ব্যক্তির, ব্যবস্থার নয়। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা লিখেছিলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, একটি পোশাকি গণতন্ত্র প্রকৃত গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই বাংলাদেশের জন্য একান্ত দরকারি মনে করেছিলেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী একটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা তাঁর রায়ের উপসংহারে মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে একবাক্যে সহমত পোষণ করেছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বিচারপতি এম এ ওয়াহ্হাব মিঞা লিখেছিলেন, সংবিধানের সংশোধনী দুধভাতের মতো হওয়া উচিত নয়।



 

Show all comments
  • পারভীন ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহ যেন তাকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ