Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিমালয়ের কোলে পানি সঙ্কট দূর করতে কৃত্রিম হিমবাহ

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতের উত্তরাঞ্চলে সুউচ্চ হিমালয়ের কোলে লাদাখের তীব্র পানি সঙ্কট দূর করতে কাজ করছেন ১০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। তারা তৈরি করছেন ৩০ মিটার উঁচু এক কৃত্রিম হিমবাহ। বসন্ত মৌসুম শুরু হলে এই বরফের স্তূপ আস্তে আস্তে গলতে থাকবে এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করবে। বছরের শুরুতে লাদাখে প্রবল পানিসঙ্কট দেখা দেয়। সমস্যা থাকে পানীয় পানির, চাষবাসের। সেই সমস্যার সমাধানে অভিনব পরিকল্পনা নেয়া হয়। এই বরফের স্তূপের উদ্ভাবক ইঞ্জিনিয়ার সোনাম ওয়াংচুক। তার জন্ম লাদাখে। স্থানীয় মানুষদের নিত্যদিনের সমস্যার মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক বা নয়াদিল্লিতে বসে আমরা সমস্যার সমাধানের কথা ভাবি। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয় না। পাহাড়ের মানুষেরাই সবচাইতে ভালভাবে তাদের সমস্যার সমাধানের পথ বের করতে পারবেন। ওয়াংচুক জানান, একদিন একটি সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় এই কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির ভাবনাটি তার মাথায় আসে। সেতুর তলায় আমি বরফ দেখতে পাই। সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ছিল ৩০০০ মিটার (৯৮৪২ ফুট)। এই জায়গাটি ছিল উচ্চতার দিক থেকে সবচেয়ে নিচে। তবে একই সঙ্গে সব থেকে বেশি উষ্ণও। আর সেটি ছিল মে মাস। আমি ভেবেছিলাম সূর্যের রশ্মি সরাসরি বরফকে গলিয়ে দেবে। কিন্তু সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে পারলে বরফটিকে জমিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এভাবেই ২০১৩ সালে তিনি এবং সেকমল অরটারনেটিভ স্কুলের ছাত্ররা লাদাখের এক গ্রাম ফিয়াঙে গিয়ে প্রথমবারের মতো এই বরফের আকৃতি তৈরির কাজ শুরু করেন। তারা একে বলেন বরফ-স্তূপ, কারণ তিব্বতি ধর্মীয় স্তূপের সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে। এই কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির নেপথ্যে প্রযুক্তিটি বেশ সরল। সাধারণভাবে মাটির নিচে পানির পাইপ পেতে দেয়া হয়। হিমবাহ গলে পানি সেই পাইপ দিয়ে নিচে নেমে আসে। পাইপের শেষ অংশটি খাড়া করে রাখা হয়। উচ্চতা এবং অভিকর্ষ বলের তারতম্যের জন্য পাইপে চাপ তৈরি হয়। পাইপের শেষ প্রান্তটি ফোয়ারার আকার নেয়। এরপর পানি জমে বরফ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তা পিরামিডের আকার নেয়। ওয়াংচুক বলেন, আমরা পানি জমিয়ে বরফ তৈরি করি। যা শীতকালে ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ জ্যামিতিক আকারের জন্য বসন্তের শেষেও বরফই থেকে যায়, গলে যায়না। পরবর্তী সময়ে কৃত্রিম হিমবাহটি গলতে শুরু করলে সেই পানি সেচের কাজে ব্যাবহার করা হয়। ওয়াংচুকের বিশ্বাস, এই বরফ-স্তূপের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের মধ্যে একটা অধিকারবোধ তৈরি হবে। এই কৃত্রিম হিমবাহ নিয়ে ২০১৪ সালে কিছু প্রাথমিক পরীক্ষার পর স্থানীয় ফিয়াঙ মঠ এর সাথে জড়িত হয়। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ২০টি বরফস্তূপ তৈরির অর্ডার দেয়। চাঁদা তোলার মাধ্যমে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২০০ ডলার সংগৃহীত হয়। এই অর্থের মাধ্যমেই ২.৩ কিলোমিটার লম্বা পাইপ পাতা হয়। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ