পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল : নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে -পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাকান্ড, হাজার হাজার গ্রাম-বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াও দমন অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দুই দেশের সমন্বয়ে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকারকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে জাতিসংঘ্য ব্যর্থ হওয়ার পরও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ঢাকা সফররত মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বৈঠকে গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেড় ঘণ্টার দ্বিপাক্ষিক এই বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর নোবেল জয়ী অং সান সুচির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ মিয়ানমার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে মিয়ানমার। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত¡াবধানে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা উভয়ে সম্মত হয়েছি। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কম্পোজিশন কী হবে- সেটা আমরা বাংলাদেশও ঠিক করব, ওরাও ঠিক করবে। সম্মতিটা হয়েছে এই আলোচনায়। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের স্বদেশ (মিয়ানমার) প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য বৈঠকে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে ওই চুক্তির খসড়াও হস্তান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ‘নিরাপত্তা সহযোগিতার’ বিষয়েও ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন। আমরা যেটা বলে আসছি প্রথম থেকে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে চাই। দুই পক্ষই তাতে একমত হয়েছে।
শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে জানতে চাইলে পররষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা সভা দিয়েতো সব সমাধান হবে না। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপটা তৈরি করতে হবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে নাম দেব, ওরা ওদের পক্ষ থেকে নাম দেবে। এটা খুব তাড়াতাড়ি করেছি। যে বিষয়গুলো বাকি রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান করা যাবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কবে নাগাদ গঠন হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই হবে।’
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যা এবং রাখাইন থেকে মুসলিম বিতাড়ন ও দমন অভিযানের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গ তরুণ যুবককে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বসবাসরত গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় হয়। সারাবিশ্বের নেতা এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হত্যাকান্ড বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানান। রোহিঙ্গা হত্যাকান্ড নিয়ে তোপের মুখে পড়ার ভয়ে নোবেল জয়ী অং সান সুচি জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। রোহিঙ্গা হত্যাকান্ডের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য সুচির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের জন্য লাখ লাখ মানুষের সই করা আবেদন সুইস নোবেল একাডেমি কমিটির কাছে জমা দেয়া হয়। সুচির একটি মূর্তি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী থেকে তুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মিডিয়াগুলোর স্যাটেলাইট ক্যামেরায় সে দৃশ্য ধরা পড়েছে।
মিয়ানমারের তথাকথিথ গণতন্ত্রের নেত্রী সু চি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। সুচির এই বক্তব্যের পর তাকে ধিক্কার জানিয়েছে বিশ্ব নেতারা। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে (রাখাইন রাজ্যে) যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সচিত্র খবর প্রকাশ হয়েছে এখনো যে সব রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইনে রয়েছেন তারা গাছের লতাপাতা খেয়ে বেচে রয়েছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় গুতেরেস বলেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের উপর যে সহিংসতা হয়েছে তা মধ্যাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে এবং সেখানে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাঁচ দশকের বেশি সময় সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে দু’বছর আগে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে অং সান সু চির দল ক্ষমতায় এলেও এখনও দেশটির স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্ত্রণালয় দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে। ক্ষমতায় বসে এক সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচি কার্যত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নাচের পুতুল হয়ে গেছেন। স¤প্রতি মিয়ানমার ঘুরে আসা ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘অং সান সু চি সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে চান বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। সু চি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন এবং তিনি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে একটি সঠিক পথ বের করার চেষ্টা করছেন।’
এদিকে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উ উইন মিত আয়ে রাখাইনের মংডু এলাকায় ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও পুনর্বাসন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন বলে গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায় নির্বাসিত বার্মিজদের ওয়েবসাইট ইরাবতী। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও পুনর্বাসনের জন্য দুই বিলিয়ন কিয়াটের একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার ১৯৯৩ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় শরণার্থীদের নিবন্ধন করা হবে। মংডুর দার গি জার গ্রামে পুনর্বাসনের আগে তাংপিও লেতওয়ে ও না খুয়ে ইয়া গ্রামে তাদের নিবন্ধন হবে। মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি উ মিন্ট কেইং ওই দিন ইরাবতীকে বলেন, দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের (রোহিঙ্গা শরণার্থী) মনোনীত করা হবে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হবে। রোহিঙ্গা স্বীকৃতি না থাকায় এই মুসলিম জনগোষ্ঠী ওই এনভিসি নিতে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বলে ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়।
বর্হিবিশ্বের ক্রমাগত চাপের মুখে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন ‘অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট’র সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমার। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন মিয়ানমার সরকার। উল্লেখ রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে শত শত বছর ধরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নের্তৃত্বে একটি কমিটি গটন করা হয়। ওই কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার কয়েক দিনের মাথায় নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।