পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আর মাত্র দুই দিন পর খুলছে সুপ্রিম কোর্ট। ফের প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে দেশের সবোর্চ্চ আদালত প্রাঙ্গণ। গত ২৭ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২৫ দিন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ ছিল। আগামী মঙ্গলবার থেকে সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগ (আপিল ও হাইকোর্ট) এর নিয়মিত কার্যক্রম চলবে। ধারণা করা হচ্ছে অবকাশের পর দুইটি ইস্যুতে সরব থাকবে উচ্চ আদালত। বিশেষ করে ষোড়শ সংশোধনী রাযের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ, তত্ত¡াবধায়ক এবং বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ সংসদ সদস্যের পদে থাকার বৈধতা প্রশ্নে খারিজ রিটের রিভিউ।
এছাড়া নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকুরীর বিধির গেজেট, ভ্রাম্যমাণ আদালত, আইন সচিব নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা, বিজিএমইএ ভবন, রোহিঙ্গা নিয়ে রিটের শুনানি ও ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচারসহ গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো মামলার শুনানি ও রায় হবে। এসব বিষয়ে জানতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি থাকবে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। আইন্জীবীদের জানিয়েছেন, ছুটির পর স্বাভাবিকভাবে মামলার রায় ও শুনানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেন আদালত অঙ্গণ। তবে দুই একটি বিষয় নিয়ে এক ধরনের উত্তাপ হতে পারে।
অবকাশ শেষে উত্তাপ থাকবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভাকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, উত্তাপ ঠিক এটা বলা যাবে না। এসব তো আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম। তবে সর্বোচ্চ আদালতকে সাধারণ মানুষ তাদের শেষ আশ্রয়স্থল ভাবেন। সে অনুযারী তারা ন্যায় বিচার পাবেন এটাই প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর উচ্চ আদালতের প্রতি আশার সঞ্চার হয়েছে। সাধারণ মানুষ সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে আছেন। দুটি ইস্যু নিয়ে রিভিউ করতে পারে এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। তবে তিনি বলেন, যেখানে সারা দেশের আইনজীবীরা যেখানে ষোড়শ নিয়ে আপিলের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সেখানে কেন রিভিউ এটা আমার বুঝে আসে না। এ আইনজীবী নেতা আরো বলেন, নি¤œ আদালতকে সরকার ব্যবহার করছেন। সেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। আশা করছি অবকাশ শেষে উচ্চ আদালত এবিষয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত দিবেন।
সবার দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে কি না জানতে চাইলে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, নজর থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়। কারণ ষোড়শ সংশোধনী গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা নিয়ে রাজনৈতভাবে একটু চাপও লক্ষ করা যায়। যেটির প্রতি সারা দেশের মানুষ নজর রাখছে বলে আমার মনে হয়। এছাড়াও গেজেট প্রকাশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে নজর রাখছে আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
চলতি বছরের শুরু থেকেই নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকুরীর বিধি সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ, ষোড়শ সংশোধনী ও মূর্তি স্থাপন নিয়ে বেশ সরগরম ছিল উচ্চ আদালত। তবে ষোড়শ সংশোধনী বেশ আদালদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে থেকে শুরু করে পালামেন্ট পর্যন্ত। উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে আপত্তিকর পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এরপর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সাক্ষাৎ করে প্রধান মন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেস্টা গওহর রিজভী। এছাড়া রায়ের পর সেতু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন। আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে রায়ের বিভিন্ন পর্যবেক্ষন প্রত্যাহারের প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এমকি তারা প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে বিবৃতি দিয়েছেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে রিভিউ: সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা আপিল বিভাগ বাতিল করলেও তা আবারও সংসদে ফেরাতে চায় সরকার। সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা এ নিয়ে একাধিকবার নিজেরা আলোচনায় বসছেন। একই সঙ্গে কি কি বিষযে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করা হবে সেসব নিয়েও আলোচনা হয়। নাম প্রকাশ না করার সরকার সমর্থিত একজন আইনজীবী বলেন, রিভিউ বিষয়ে প্রধান মন্ত্রী ছাড়া কোন নেতাই এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে পারবে না। উনী (প্রধান মন্ত্রী) দেশের বাইরে আছেন। দেশে আসলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমার মনে হয় রিভিউ হবে। কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে তা ফিরিয়ে আনা যায় এ নিয়ে চিন্তাভাবনাও চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পদ্ধতি ঠিক করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। সূত্র জানায়, সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফেরানোর উপায় খুঁজতে দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা চলছে। সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী ও অ্যার্টনি জেনারেল এ আলোচনা করছেন বলে সূত্র জানা যায়। অব্যশই সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল বিভাগের রায় নিয়ে সরকার রিভিউ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, অবশ্য রিভিউ করার জন্য যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ৩০ দিনের যে সময় নির্দিষ্ট করা আছে, তা বাড়ানোর জন্য সরকার যথাযথ স্থানে আবেদন করতে পারে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে। সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
তত্ত¡াবধায় ফিরে পেতে রিভিউ: ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কঠোরভাবে সমালোচনা করনে। প্রধান বিচারপতির অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণাও দেন সরকারপন্থী আইনজীবীরা। এসময় এ রায়কে ঐতিহাসিক রায় বলে সভা সমাবেশ করেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। তাদের মতে প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের জন্য একাট ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এমনকি রায় ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করার বিএনপি আইনজীবীরা আদালত অবমাননা আবেদনও করেন। প্রধান বিচারপতি ও সরকারের মধ্যে যেন এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় নীতিনির্ধারকরা।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার বিধানসংবলিত সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত রায়ের রিভিউ উচ্চ আদালতে আনা হতে পারে। একই সঙ্গে দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ সংসদ সদস্যের পদে থাকার বৈধতা প্রশ্নে খারিজ করা রিটের রিভিউয়ের বিষয়েও প্রস্তুতির কথা শুনা যায়। বিএনপি আইনজীবীদের সঙ্গে আালাপকালে বিষয়টি জানা যায়। যদিও স্পষ্টভাবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি তারা।
গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি: এমবিবিএসভর্তি পরীক্ষায় পুরাতন শিক্ষার্থীদের ৫ নাম্বার কাটার বিষয়ে শুনানি ও বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য আরও এক বছর সময় চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগে হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। খালাফ আল আলী হত্যা মামলা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও ভারতীয় টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের বসবাস, নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট বিষয়ে শুনানির হবে। এমনকি ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে কার্যক্রম পরিচালনা থেকে কেন বিরত রাখার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল শুনানি হবে অবকাশের পর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।