Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবহাওয়া পরিবর্তনে বদলে গেছে বর্ষা ও শরৎ

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু ও টি এম কামাল : বিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব যে কী পরিমাণ পড়েছে তার প্রমাণ এখন পাওয়া যায় নদী, বিল, খাল চরাঞ্চল বা প্রকৃতির কাছাকাছি গেলে। প্রকৃতিকেন্দ্রিক কবিতার পঙ্ক্তিমালার মিলও খুঁজে পাওয়া যায় না এখন। রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে...কথাটির প্রমাণ বৈশাখে তো নয়ই, বর্ষা মৌসুমেও এখন কোনো কোনো নদীতে হাঁটু পানি খুঁজে পাওয়া যায় না। সাধারণভাবে বর্ষায় নেই বৃষ্টি। অন্যদিকে শরতের সাদা মেঘের ভেলা ওড়ে গিয়ে মাঝে মধ্যেই কালো মেঘ আর অঝোরধারায় বৃষ্টিপাত এখন নিয়মিত ব্যাপার। এরই মধ্যে শরতের শেষ ভাগে সন্ধ্যা রাতের পর হেমন্ত শেষের মতো বইতে শুরু করেছে হিমেল হওয়া। গোধূলী লগ্নের পর নদী তীরবর্তী এলাকায় কুয়াশারও দেখা মিলছে। তার মধ্যেই শরতের সাদা কাশবন উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে, এটা হেমন্ত নয়, শরত। শরতের শান্ত রূপ অবশ্য এখনো মøান হয়ে যায়নি। তবে শরতের মধ্যে এসে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। ঋতুর চরিত্র যে পরিবর্তন হচ্ছেÑ খালি চোখে দেখা সাধারণ লোক তা বুঝতে পারছেন না। তবে প্রকৃতি সচেতনরা বলছেন, এই হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। এই পরিবর্তন সাধারণ লোক ক’জনাই বা বোঝে? তবে তারা সময়-অসময়ে ঋতু পরিবর্তনের ফেরটা বুঝতে পায়। গেল শতকের শুরুতে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতির যে সৌন্দর্য দেখে কবিতায় যা বর্ণনা করেছিলেন সেই প্রকৃতি আজও কি তেমনই আছে? এই কালে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে সেদিনের সেই প্রকৃতির সঙ্গে আজকের প্রকৃতির মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই পরিবর্তন কতটা মানুষের সৃষ্টি ও তার প্রভাব প্রকৃতি কতটা বৈরীÑ এ নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন ভাবনা নেই। তারা শুধু পরিবর্তন দেখে ফসল উৎপাদনের সময়টা পাল্টে নিচ্ছে। আর স্মৃতির পাতা মেলে ধরে প্রজন্মকে শুনিয়ে যাচ্ছে নিকট অতীতে তারা কি দেখেছে; এখন প্রজন্মরা কি দেখছে।
বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দী, সোনাতলাসহ সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ সদর ও এলাকার যমুনা, ইছামতি, করতোয়া, বাঙালি, মানাস নদী একটা সময় ছিল যখন বর্ষায় টইটুম্বুর থাকত। কিন্তু এখন ভরা যৌবনা এই নদীগুলো দেখে মনে হয় যেন বুড়ো হয়ে গেছে। সেই উথালপাতাল ঢেউ নেই, নদী বয়ে যাওয়ার সেই কুলকুল শব্দ নেই। পালতোলা নৌকা নেই, নদী পারের খেয়াঘাটের সেই চির চেনা দৃশ্য নেই। খেয়ার সেইমাঝিকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এই নদীর সঙ্গে বড় বড় বিলেরও একটা সখ্যতা ছিল। সেই বিল ও বড় খাল আজ শুকনো বিরাণ ভ‚মি।
ধুনটের গোসাইবাড়ির চিথুলিয়া গ্রামের জিয়া শাহীন বললেন, মানাস নদীর মধুখালিতে অপরিকল্পত বাঁধ দিয়ে সিলড করে দেয়ায় এই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে। কিছুদিন চলার পর ক্রমেই নদীর উৎস হারিয়ে আপনাআপনি শুকিয়ে গেছে। অথচ একটা সময় এই মানাস নদীর পানি মধুখালি সøুইজ গেট দিয়ে লাগোয়া নদী ইছামতিতে গিয়ে পড়ত। ইছামতি ভরে ওঠে তার পানি গিয়ে পড়ত বথুয়াবাড়ির তারাকান্দীর খালে। এভাবে নদীর পানির স্বাভাবিক বণ্টনে প্রকৃতির পরিবর্তন হতো না। এমনিভাবে হিমালয় থেকে বের হয়ে আসা করতোয়া নদীর ও এখন মরণ দশা। আশির দশকের মধ্যভাগে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালিতে বাঁধ দিয়ে (প্রায় সিলড করে) গতি পরিবর্তন করে দেয়া হয়। লক্ষ্য ছিল উজানে এই অবস্থার সৃষ্টি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। পরে দেখা যায় করতোয়ার মূল স্রোতধারা পরিবর্তন করে নদীর স্বাভাবিক চলার পথকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। নদী তার বিকল্প পথ খুঁজে নিয়ে বাঙালি নদীকে ভরে দিয়ে যমুনা ও বাঙালি একত্রিত করতে যাচ্ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দীতে যমুনা ও বাঙালি নদীর মধ্যের দূরত্ব এতটাই কমেছে যে, উজানি ঢলের চাপ বেড়ে গেলে ওই এলাকার অনেক জনপদ বিলীন হয়ে যেতে পারে। যমুনা ও বাঙালি নদীর এমন ধংসাত্মক মিলন রোধে সারিয়াকান্দীতে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজিপুরের ঢেকুরিয়া থেকে সিরাজগঞ্জের শিমলা পর্যন্ত যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ করতে গিয়ে পাউবোর ঠিকাদাররা যে কি কাজ করছে তা ওই এলাকায় গিয়ে খালি চোখেই দেখা যায়। এ এলাকায় যতবার বাঁধের কাজ হয়েছে তা শুধু বালি দিয়ে। এলাকায় লোকই বলাবলি করে, বালির এই বাঁধ কি যমুনাকে ঠেকাতে পারবে!
যমুনার ভাঙন রোধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে এ পর্যন্ত পাউবো যত অবকাঠামো নির্মাণ করেছে তার প্রায় ৮০ শতাংশই ভেঙে গেছে। সরকার পাউবোকে যত টাকা দেয় তার ৯০ শতাংশই যায় ভেস্তে। এভাবে মানুষও সৃষ্টি করছে প্রকৃতির পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে আরো প্রমাণ মেলে একদার সেই বড় খালÑবিল দেখলে। কাজিপুরের জারা বিল, ধুনটের গজাবিয়ার বিল, চিকাশির বিল, সারিয়াকন্দীর ডাঙার বিল, গাবতলীর নারুলীর বিল, ধুনটের গোসাইবাড়ি থেকে মানাস চিথুলিয়া হয়ে বড়বিশা মানাসের যে প্রায় সাত কিলোমিটার খাল ভরাট হয়েছে, এই ভরাটের প্রভাব পড়েছে নদীতে মানাসের লাগোয়া নদী ইছামতি এই দুই নদী শুকিয়ে যাওয়ার বড় নদী প্রভাব রুদ্ধ হয়েছে। যমুনাও গতিপথ হারিয়ে তার প্রভাব প্রকৃতিতে ফেলেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়া

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ